ভাষাবিজ্ঞান ও তার শাখাপ্রশাখা
ছোটপ্রশ্ন
১) ভাষাবিজ্ঞানের কাজ কী?
উঃ ভাষাবিজ্ঞানের কাজ হল ভাষা নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করা।
২) ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় কোন ভাষার গুরুত্ব বেশি এবং কেন?
উঃ লিখতে পারে এমন মানুষের সংখ্যা সমগ্র পৃথিবীতে মৌখিক ভাষা ব্যবহারকারীদের তুলনায় নিতান্তই সামান্য। তাই ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় মৌখিক ভাষার গুরুত্ব বেশি।
৩) কে কবে তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত করেছিলেন?
উঃ ১৭৮৬ খ্রিঃ স্যার উইলিয়াম জোন্স রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটির সভায় বক্তব্য রাখার সময় গ্রিক, লাতিন, ফরাসি প্রভৃতি ভাষার তুলনামূলক আলোচনা করার মধ্য দিয়ে তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত করেন।
৪) বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের জনক কাকে বলা হয়?
উঃ বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের জনক বলা হয় ভাষাবিজ্ঞানী ফার্দিনান্দ দ্য সোস্যুরকে।
৫) বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত কে করেন?
উঃ প্রাচীন ভারতের বিশিষ্ট ব্যাকরণবিদ পাণীনি রচিত “অষ্ট্যাধ্যায়ী” নামক ব্যাকরণ গ্রন্থটিতে সর্বপ্রথম বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় বলে অনেকে মনে করেন।
৬) “A Brief Sketch of Bengali Phonetics” গ্রন্থটি কার লেখা?
উঃ গ্রন্থটি ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
৭) পাশ্চাত্যে বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উঃ পাশ্চাত্যে বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সুইস ভাষাবিজ্ঞানী ফার্দিনান্দ দ্য স্যসুর।
৮) প্রধান ভাষাবিজ্ঞানের মূলত কয়টি শাখা ও কী কী?
উঃ প্রধান ভাষাবিজ্ঞানের শাখা পাঁচটি। যথা- ধ্বনিবিজ্ঞান, ধ্বনিতত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ও শব্দার্থতত্ত্ব।
৯) ফলিত ভাষাবিজ্ঞানের ভাগগুলি কী কী?
উঃ ফলিত ভাষাবিজ্ঞানের বিভাগগুলি হল- সমাজভাষাবিজ্ঞান, মনোভাষাবিজ্ঞান, স্নায়ুভাষাবিজ্ঞান, নৃভাষাবিজ্ঞান ও অভিধানবিজ্ঞান।
১০) রেজিষ্টার কী?
উঃ উপলক্ষ্য অনুযায়ী ভাষা বা উপভাষার যে বদল হয় তাকেই সমাজবিজ্ঞানীরা রেজিষ্টার বলেন।
১১) কোড-বদল কাকে বলে?
উঃ কোন ব্যক্তি বিশেষ উপভাষার যে বিশেষ রীতিটি ব্যবহার করে তাকে বলা হয় কোড। আর সেই ব্যক্তির ভাষা যদি পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় তখন সেই প্রকৃয়াকে কোড-বদল বলে।
১২) LAD কী?
উঃ LAD কথাটির অর্থ হল “Language Acquisition Device”. নোয়াম চমস্কি মানুষের ভাষাশিক্ষার সামর্থ বিষয়ে আলোচনায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মানব মস্তিষ্কের মধ্যেই তার ভাষাশিক্ষার সামর্থ কেন্দ্রীভূত হয়েছে।তাই মস্তিষ্ককে তিনি ভাষাশিক্ষার যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে তার নাম দিয়েছেন LAD.
১৩) LAS কী?
উঃ LAS কথাটির অর্থ হল “Language Acquisition System”. নোয়াম চমস্কি তার “Language and Mind” গ্রন্থে মানুষের ভাষাশিক্ষার প্রণালীকে LAS বলেছেন। তিনি Device শব্দটির পরিবর্তে মস্তিষ্ককে ভাষাশিক্ষার আধার হিসেবে গ্রহণ করে System শব্দটির ব্যবহার করেছেন।
১৪) নৃভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় কী?
উঃ সামাজিক ঐতিহ্য বা প্রচলিত প্রথা ও সংস্কার এবং গোষ্ঠীবদ্ধ পারিবারিক জীবনচর্চা কীভাবে একটি ভাষার গড়ে ওঠা ও বিবর্তনে কাজ করে তা নৃভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।
১৫) শৈলী কী?
উঃ একজন লেখকের মনন, চিন্তন, অনুভব ও উপলব্ধির নিজস্ব যে রীতি তারই প্রকাশ হল শৈলী।
১৬) “Style is the man himself”- উক্তিটি কার?
উঃ ফরাসি প্রকৃতিবিদ, গণিতজ্ঞ তথা লেখক জর্জ লুই ল্যক্লের কোঁত দ্য বুফোঁ এই উক্তিটি করেছেন।
১৭) লা কী?
উঃ ভাষার বিভিন্ন উপাদান, যেমন- ধ্বনি, রূপ বা শব্দাংশ, বাক্য ইত্যাদি এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে যে সম্পর্কের জালবিন্যাস রয়েছে তাকে লা বা লাঙ(Langue) বলে।
১৮) পারোল কী?
উঃ লাঙকে মান্য করেও ভাষা ব্যবহারের উপাদান নির্বাচন ও প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে নিজস্ব একটি বিন্যাসে যে বাচনক্রিয়া স্পষ্ট ও প্রকট হয়ে ওঠে তাকে পারোল (Parole) বলে।
১৯) বহুস্বরতা কী?
উঃ উপন্যাস, মহাকাব্য প্রভৃতিতে বিবিধ চরিত্রের মধ্যে স্বভাবগত, পরিবেশগত পার্থক্যের জন্য তাদের স্বরবিন্যাসে বৈচিত্রময় জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। মিখাইল বাখাতিন এই বিষয়টিকে বহুস্বরতা বলেছেন।
২০) অভিধানবিজ্ঞান কাকে বলে?
উঃ ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় কোন শব্দের উৎস, বিকাশ ও বর্তমান প্রয়োগ ধরে তার বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করা হয় তাকে অভিধানবিজ্ঞান বলে।
২১) Dictionary শব্দটি কবে ও কোথায় পাওয়া যায়?
উঃ ১৫৩৮ খ্রিঃ স্যার থমাস এলিয়টের “ল্যাটিন-ইংরেজি অভিধান” এ ইংরেজি Dictionary শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়।
২২) শব্দকল্পদ্রুম কী?
উঃ শব্দকল্পদ্রুম একটি সংস্কৃত অভিধান। রাধাকান্ত দেব এই অভিধানটি সংকলন করেন। করুণাসিন্ধু বিদ্যানিধির সম্পাদনায় ১৮০৩ খ্রিঃ থেকে ১৮৫৮ খ্রিঃ পর্যন্ত মোট আটটি খন্ডে অভিধানটি প্রকাশিত হয়।
২৩) স্যার উইলিয়াম জোন্স সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে কোন কোন ভাষার মিল খুঁজে পেয়েছিলেন?
উঃ তিনি সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে গ্রিক ও ফারসি ভাষার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন।