কম্পিউটার কি ?
কম্পিউটারের বাংলা অর্থ হল গণকযন্ত্র বা গণনার যন্ত্র বা মেশিন। কম্পিউটার আসলে হল একধরণের সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটা যন্ত্র। এই বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস এক ধরণের সাধারণ ডিজিটাল সার্কিট্রি নিয়ে তৈরী। একটি পরিবর্তনশীল প্রোগ্রামে দেওয়া নির্দেশাবলী অনুসারে গণকযন্ত্র বাইনারি আকারে তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণ করে থাকে। এই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে আমরা গণনা করতে পারি, ভিডিও অডিও ফাইল চালাতে পারি, গান শুনতে পারি বা কোনো জটিল হিসাবের কাজ করতে পারি। কম্পিউটার হল তথ্য সংরক্ষণ করার একটা নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আর, এই কম্পিউটার বৈদ্যুতিক সংকেত হিসাবে তথ্য গ্রহণ করে থাকে। কম্পিউটারের একটি সুপরিচিত প্রোগ্রাম ভাষা বা ল্যাঙ্গুয়েজে হল বাইনারি (০,১ সংখ্যা দিয়ে গঠিত ভাষা)।
কম্পিউটার শব্দের ব্যাখ্যাঃ
C– কমনলি (সাধারণভাবে)
O– অপারেটেড (পরিচালিত)
M– মেশিন (যন্ত্র)
P– পার্টিকুলারলি (যা বিশেষ করে)
U– ইউস্ড ফর (ব্যবহৃত হয়)
T– টেকনিক্যাল (প্রযুক্তি)
E– এডুকেশন (শিক্ষা)
R– রিসার্চ (অনুসন্ধানে জন্যে)
অর্থাৎ, এই কম্পিউটার শব্দের বাংলা অর্থ করতে যা দাঁড়ায়, তা হল সাধারণ ভাবে পরিচালিত একটি যন্ত্র যা বিশেষ করে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটার সম্পর্কে কিছু কথাঃ
- গণযন্ত্রের জনক বা আবিষ্কারক হলেন চার্লস ব্যাবেজ।
- আধুনিক কম্পিউটার যন্ত্রের আবিষ্কর্তা হলেন অ্যালান টার্নিং।
- কম্পিউটারের সাধারণ কাঠামোর নির্মাতা হলেন জন ভন নিউম্যান।
- কম্পিউটরের প্রথম প্রোগ্রামার হলেন লেডি অ্যাডা লাভলেস।
- সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্যে প্রথম কম্পিউটার তৈরী করে আইবিএম (১৯৮১)।
গণকযন্ত্রের সাধারণ পরিচিতিঃ
- এই যন্ত্রটি তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করে।
- প্রতিটি কম্পিউটারের কম্যান্ড দেওয়ার বেসিক ডিভাইস থাকে, যেমন- মাউস, কীবোর্ড ইত্যাদি।
- গণকযন্ত্রের মেমোরিতে কম্যান্ড ও তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে।
- একটি সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণের ইউনিট মূলত কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণের কাজ করে।
- একটি মনিটর, আউটপুট প্রদান করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:
- এই যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসেব বা কাজ করতে সক্ষম।
- গণকযন্ত্র একেবারেই নির্ভুলভাবে কাজ করে।
- একটি কম্পিউটারের মেমোরি বা স্টোরেজ ক্ষমতা অনেক বেশি এবং একে অবশই বাড়ানো বা কমানো যাবে।
- একটি গণকযন্ত্র একসাথে অনেক কাজ করতে সক্ষম।
- এই যন্ত্রটি মুহূর্তের মধ্যে জটিল গণনার ফল প্রকাশ করতে সক্ষম।
কম্পিউটারের সাধারণ যন্ত্রাংশ:
একটি কম্পিউটার যন্ত্র বেশ কতগুলো ডিভাইস বা যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরী। এই ডিভাইস গুলি হল সিপিইউ, মনিটর, কীবোর্ড, ও মাউস। এই যন্ত্রগুলো ছাড়া গণকযন্ত্র একেবারেই বিকল।
কম্পিউটারের কাজ করার পদ্ধতি:
একটি গণকযন্ত্র ইনপুট-প্রসেস-আউটপুট এই পদ্ধতিতে কাজ করে। আসলে, আমরা কম্পিউটারকে কাজ করানোর উদ্দেশ্যে প্রথমে তথ্য পাঠাই অর্থাৎ ইনপুট দিই, কম্পিউটার সেই তথ্যকে প্রসেস বা প্রক্রিয়াকরণ করে আর প্রক্রিয়াকরণের শেষে সেই তথ্যের থেকে পাওয়া ফল দেখায় বা শোনায়, যাকে কম্পিউটারের ভাষায় আউটপুট বলা হয়ে থাকে।
শিক্ষালয়ের ফেসবুক পেজ ভিজিট করতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইস:
আমরা কম্পিউটারকে তথ্য পাঠানোর জন্যে বা কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ইনপুট ডিভাইস গুলি ব্যবহার করি। এই যন্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হল –
১) কীবোর্ড:
কিবোর্ডের সাহায্যে আমরা টেক্সট টাইপিং এর মাধ্যমে কম্পিউটারকে বিভিন্ন নির্দেশ গুলো দিতে পারি। মূলত একজন উসার কম্পিউটারের মধ্যে ডাটা প্রেরণের ক্ষেত্রে কীবোর্ড এর ব্যবহার করে থাকে। এটি মূলত আমরা ব্যবহার করি টেক্সট বা কমান্ড টাইপ করার জন্য, যেটা কম্পিউটারকে নির্দিষ্ট ক্রিয়াগুলি সম্পাদনের নির্দেশ দিতে সাহায্য করে।
২) মাউস:
১৯৬৩ সালে ডগলাস এঙ্গেলবার্ট এই মাউস যন্ত্রটির আবিষ্কার করেন। মাউস হল ঠিক ইঁদুরের মতো দেখতে একটি ডিভাইস। এই যন্ত্রের সাহায্যে আমরা মনিটরের ডিসপ্লে বা স্ক্রিনে কার্সার বা পয়েন্টার (স্ক্রিনে তীরের মতো বা ইংরেজি “I” অক্ষরের মতো দেখতে অংশটি) এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
৩) স্ক্যানার:
স্ক্যানার হল এমন একটি ডিভাইস যা একটি মুদ্রিত পৃষ্ঠা বা গ্রাফিক্সকে ডিজিটাল ছবিতে পরিণত করে। আমরা আমাদের কাগজ বা বই থেকে যখন কোনো ছবি কম্পিউটারের স্ক্রিনে সফ্ট কপিতে দেখতে পাই, সেই সফ্ট কপিতে পরিণত করার কাজটা আমরা স্ক্যানারের সাহায্যেই করে থাকি।
৪) জয়স্টিক:
জয়স্টিক হল এক ধরণের ইনপুট ডিভাইস যা আমাদের ভিডিও গেমগুলোর মুভমেন্ট বা গতিবিধি গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস:
এখন আমরা কম্পিউটারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস গুলোর বিষয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
১) মনিটর:
সাধারণত, মনিটর হল ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে ইউনিট যা একটি কম্পিউটারের মূল আউটপুট ডিভাইস। এর আয়তক্ষেত্রাকার স্ক্রিনটি ছোট ছোট বিন্দু (পিক্সেল) থেকে চিত্র তৈরি করে এবং এর মাধ্যমেই কম্পিউটার আউটপুট তথ্য প্রদর্শন করে। আর, ছবির স্পষ্টতা পিক্সেল সংখ্যার উপর সমানুপাতিকভাবে নির্ভর করে। অর্থাৎ, পিক্সেলের সংখ্যা বেশি হলে ছবি বেশি স্পষ্ট ও উজ্জ্বল হয় আর পিক্সেল কম হলে ছবির স্পষ্টতা ও উজ্জ্বলতা দুটোই কমে।
২) প্রিন্টার:
প্রিন্টার হল আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডিভাইস, যার সাহায্যে কম্পিউটারের প্রসেস করা তথ্য কাগজে মুদ্রিত হয়। প্রিন্টার মূলত দুই ধরনের হয়, যথা-
- ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার ও
- নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার।
এর বাইরেও প্রিন্টার এর আরো বিভিন্ন প্রকার গুলো রয়েছে।
৩) প্রজেক্টর:
ইমেজ প্রজেক্টর হল একধরণের অপটিক্যাল আউটপুট ডিভাইস। এর দ্বারা একটি চিত্র বা চলমান চিত্রগুলোকে একটি পর্দার উপর প্রদর্শন করা হয়।
৪)স্পিকার:
স্পিকার হল কম্পিউটার সিস্টেমের সবচেয়ে সাধারণ একটি আউটপুট ডিভাইস। একটি কম্পিউটারের সাউন্ড সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করে আমরা গান বা সিনেমার ডায়লগ এবং অন্যান্য অডিও শুনে থাকি।
কম্পিউটারের মেমরি:
কম্পিউটারের মেমরি ঠিক আমাদের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে। আমরা যেমন কথাবার্তা মনে রাখি ও নানা ধরণের কাজ আমাদের মস্তিষ্কের সাহায্যেই করে থাকি, ঠিক তেমনই এই মেমরিও কম্পিউটারের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। আর তার সাথে লোড করা কমান্ডের সাহায্যে নানা ধরণের ডেটা প্রসেসিং-এর কাজ করে থাকে।এই মেমরি আবার ছোট ছোট অংশ নিয়ে গঠিত, যা সেল বা লোকেশন নামে পরিচিত। প্রতিটি সেল বা লোকেশনের একটি করে অনন্য ঠিকানা (ইউনিক এড্ড্রেস) রয়েছে। এই মেমোরি আবার তিন প্রকারের হয়ে থাকে –
১) ক্যাশ মেমরিঃ
ক্যাশে মেমরি হল একধরণের খুব উচ্চ-গতির সেমিকন্ডাক্টর মেমরি, যা CPU-এর কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। এই মেমরি প্রাইমারি মেমরির ও সিপিইউ-এর মধ্যে একটি বাফার হিসাবে কাজ করে।
২) প্রাথমিক মেমরিঃ
প্রাথমিক মেমরিতে কম্পিউটার নির্মাতারা কিছু আদেশ ও অনুদেশ কমান্ডের আকারে কম্পিউটারের মধ্যে তার বোধগম্য ভাষায় যোগ করে দেন। তাই এই ধরণের মেমোরিতে শুধুমাত্র সেইসব নির্দেশাবলীগুলোই থাকে যেগুলির সাহায্যে কম্পিউটার চলে। আর কম্পিউটারের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে এর তথ্যগুলোও হারিয়ে যায়। কম্পিউটার এই প্রাথমিক মেমোরিতেই সমস্ত তথ্য এবং নির্দেশাবলী প্রক্রিয়াকরণ করে থাকে। এই প্রাইমারি মেমোরির দুটি প্রধান ভাগ রয়েছে, যা হল –
- রম (ROM)
- র্যাম (RAM)
RAM (রান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি):
RAM (রান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি) হল একটি কম্পিউটারের মেমোরি যেখানে অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম এবং বর্তমান ব্যবহারের তথ্য রাখা হয়। আর, কম্পিউটার বন্ধ করে দিলে এই তথ্যগুলো আর থাকে না। এই ধরণের মেমোরি অন্য মেমোরিগুলোর তুলনায় দ্রুত গতিসম্পন্ন হয় এবং এইখানে সহজে তথ্য পড়ানো ও লেখানো যায়। RAM এর দুটি ভাগ রয়েছে –
- SRAM: স্ট্যাটিক রান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি
- DRAM: ডায়নামিক রান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি
ROM বা রম (রিড অনলি মেমরি):
রম মেমোরিটি এমন সব তথ্য সঞ্চয় করে, যা শুধুমাত্র পড়া যায়। এই তথ্য গুলো পরিবর্তন করা একদমই অসম্ভব কিংবা খুব কঠিন। এটি হল এক ধরনের নন-ভোলাটাইল বা অনুদ্বায়ী স্টোরেজ। অর্থাৎ, কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলেও এই মেমোরিতে তথ্য পাওয়া যায়। রম মূলত তিন ধরণের হয়-
- PROM – প্রোগ্রামেবল রিড অনলি মেমরি।
- EPROM – ইরেজেবল প্রোগ্রামেবল রিড অনলি মেমরি।
- EEPROM – ইলেক্ট্রনিক্যালি ইরেজেবল প্রোগ্রামেবল রিড অনলি মেমরি।
৩) সেকেন্ডারি মেমরিঃ
সেকেন্ডারি মেমরিকে এক্সটার্নাল বা বাহ্যিক মেমরিও বলা হয়ে থাকে। এটি আসলে হল নানা ধরণের স্টোরেজ মিডিয়া। এর সাহায্যে আপনি তথ্য ও প্রোগ্রাম গুলো কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই ধরণের মেমোরি ফিক্সড বা রিমুভেবল বা অপসারণযোগ্য হয়। ফিক্সড মিডিয়া স্টোরেজ হল হার্ডডিস্কের মতো একটি অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ, যা কম্পিউটারের ভিতরে আটকানো থাকে। কয়েকটি রিমুভবল সেকেন্ডারি মেমোরি হল হার্ড ড্রাইভ, এসএসডি, সিডি, অপটিক্যাল ড্রাইভ, ইউএসবি ড্রাইভ ও ইত্যাদি।
কম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা CPU:
সিপিউ হল কম্পিউটারের প্রধান প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণের অংশ, যা নির্দেশাবলীগুলি পুনরুদ্ধার করে এবং কার্যকর করে। মূলত CPU হল একটি কম্পিউটার সিস্টেমের মস্তিষ্ক। যেকোনো সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) একটি গাণিতিক এবং লজিক ইউনিট (ALU), একটি কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ ইউনিট এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে গঠিত হয়। CPU-কে আমরা অনেক সময়ই প্রসেসর বলে উল্লেখ করে থাকি।
কম্পিউটারের সফটওয়্যারঃ
সফ্টওয়্যার হল একধরণের প্রোগ্রাম বা নির্দেশাবলীর একটা ক্রম বা সিরিজ, যার সাহায্যে একটি কম্পিউটার নির্দিষ্ট কাজ বা অপারেশন করার নির্দেশ পেয়ে থাকে।যেকোনো কম্পিউটার সফ্টওয়্যার মূলত লাইব্রেরি, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, এবং অ-নির্বাহযোগ্য তথ্য (যেমন- অনলাইন ডকুমেন্টেশন বা ডিজিটাল মিডিয়া) নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। সফ্টওয়্যারের প্রধান দুটি ভাগ রয়েছে, যথা-
- সিস্টেম সফ্টওয়্যার এবং
- অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার।
কম্পিউটার সম্পর্কিত নানা প্রকার আলোচনাগুলি নিয়মিত পেতে লক্ষ্য রাখুন শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে।