অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্নের উত্তর

অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্নের উত্তর

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্নের উত্তর’ প্রদান করা হলো। অষ্টম শ্রেণি বাংলা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্নের উত্তর’ দ্বারা শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।

অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্নের উত্তরঃ 

১) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ?

উঃ  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। 

২) তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।

উঃ তাঁর রচিত দুটি (অনুবাদ) গ্রন্থ হল— ‘শকুন্তলা’‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’।  

৩) অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কোন্ কোন সেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে ? 

উঃ  ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে। 

৪) ‘তিনি, এক আরবসেনাপতির পটমণ্ডপদ্বারে উপস্থিত হইয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন।উদ্ধৃতাংশে তিনি বলতে কার কথা বােঝানাে হয়েছে ? 

উঃ  উদ্ধৃতাংশে তিনি বলতে মুরসেনাপতির কথা বােঝানাে হয়েছে। 

৫) ‘উভয় সেনাপতির কথােপকথন হইতে লাগিল’—’উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? 

উঃ  ‘উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে মুরসেনাপতি ও আরবসেনাপতির কথা বলা হয়েছে। 

৬) ‘তাহা হইলে আমাদের উভয়ের প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা’- প্রাণরক্ষার কোন উপায় বা এক্ষেত্রে বলেছেন? 

উঃ প্রাণরক্ষার উপায় হিসেবে আরবসেনাপতি জানান, মুরসেনাপতি দ্রুতবেগে তার আয়ত্তের বাইরে যেতে পারলেই তাদের উভয়ের প্রাণরক্ষা সম্ভব। | 

৭) ‘আপনি সত্বর প্রস্থান করুন’- বক্তা কেন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ‘সত্বর প্রস্থান’ করার নির্দেশ দিলেন ? 

উঃ আশ্রিত অতিথি মুরসেনাপতি, আরবসেনাপতির পিতার হত্যাকারী – একথা জানার পর তিনি তীব্র মানসিক দ্বন্দ্বে পীড়িত হয়ে পড়েন। ইতিকর্তব্যে বিভ্রান্ত হয়ে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে প্রাণ নিয়ে ফেরার সুযােগ করে দিতে সত্বর প্রস্থান করার নির্দেশ দেনা।

৮) ‘তাঁহার দিভ্রম জন্মিয়াছিল’- এখানে কার কথাবলা হয়েছে ? দিকভ্রম হওয়ার পরিণতি কী হল? 

উঃ এখানে মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।

দিকভ্রষ্ট মুরসেনাপতি ক্ষুধা-তৃয়ায় ক্লান্ত হয়ে, পথ পরিশ্রান্ত হয়ে পৌছান বিপক্ষীয় আরব শিবিরে। মুর সেনাপতির শারীরিক অবস্থা দেখে আরব সেনাপতি তাকে আশ্রয় দেন, ব্যবস্থা করেন আহারাদির। দিকভ্রম হওয়ায় মুরসেনাপতি সে রাতে বিপক্ষীয় আরব সেনাদের শিবিরেই থেকে যান। 

৯) ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে’- এই বক্তব্যের সমর্থন গল্পে কীভাবে খুঁজে পেলে ? 

উঃ আতিথেয়তা এমন একটি বিষয়, যা সব জাতির মধ্যে থাকে না। আলােচ্য পাঠ্যাংশে বর্ণিত ঘটনা থেকে আরব জাতির এক অতুলনীয় আন্তরিক আতিথেয়তার দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়। বিপক্ষীয় দলের এক মুরসেনাপতি পথ হারিয়ে আশ্রয় নেয় আরব শিবিরে এসে আর আরবসেনাপতি নির্দ্বিধায় তাঁকে আশ্রয় দেন এবং সাধ্যমতাে তাঁর ক্ষুধা-তৃয়া-ক্লান্তি দূর করতে সেবা-পরিচর্যাও করেন। বিশ্রামকালে গল্প করতে করতে আরবসেনাপতি জানতে পারেন, এই ব্যক্তিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। তখন তিনি ইচ্ছা করলেই পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না-করে তাঁকে সমস্ত বিষয় জানিয়ে তাঁর পালানাের সুযােগ করে দেন; এমনকি, তিনি যাতে দ্রুত পালাতে পারেন, তার জন্য সুস্থ-সবল দ্রুতগামী ঘােড়া দিয়েও সাহায্য করেন। এর থেকেই বােঝা যায়, আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনাে জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে। 

১০) ‘সহসা আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল’- আরবসেনাপতির মুখ হঠাৎ বিবর্ণ হয়ে ওঠার কারণ কী ? 

উঃ আরবসেনাপতির আতিথ্যে মুরসেনাপতি খাদ্য-পানীয় পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারা দুজনে বসে বন্ধুভাবে কথাবার্তা শুরু করেন। তারা পরস্পরের আলােচনায় নিজের ও নিজের পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম ও যুদ্ধ-কৌশলের পরিচয় দিতে লাগলেন। মুরসেনাপতির কথা থেকে আরবসেনাপতি বুঝতে পারেন এই ব্যক্তিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। তখনই তার মন খারাপ হয়ে যায়। পিতার হত্যাকারীকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, অথচ আতিথ্যবােধের কারণে তিনি এই মুহূর্তে প্রতিশােধ নিতে অপারগ। পিতার হত্যাকারী, তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু তাঁর সামনে, অথচ তাঁর কিছুই করার নেই। এই তীব্র মানসিক যন্ত্রণাবােধেই হঠাৎ করে আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল 

১১) ‘সন্দিহানচিত্তে শয়ন করিলেন’- এখানে কার মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে ? তাঁর মনের এই সন্দেহের কারণ কী ? 

উঃ আলােচ্য উদ্ধৃতিটিতে আরবসেনাপতির শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মুরসেনাপতির মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে। 

যখন আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতি কথােপকথনে নিমগ্ন ঠিক তখনই বিবর্ণ মুখে আকস্মিকভাবে আরব সেনাপতি চলে যাওয়ার পর তাকে আর দেখা যায়নি। এমনকি নিজের অনুপস্থিতির জন্য দুঃখবােধও প্রকাশ করেন। আবার সংবাদ পাঠান, খুব সকালে তার জন্য দ্রুতগামী ঘােড়া সজ্জিত থাকবে যাতে তিনি দ্রুত চলে যেতে পারেন এবং সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। একদিকে নিজের অসুস্থতার কথা বলা, অন্যদিকে ভােরবেলা উপস্থিত থেকে তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাবে বলা— এই দুই বৈপরীত্য আচরণ বিপক্ষ শিবিরে অবস্থান করে মুর সেনাপতিকে সন্দেহপ্রবণ করে তুলেছিল। আরবসেনাপতির কথা ও কাজের মর্মগ্রহণ করতে না পেরেই উদ্দিষ্টের মনে সন্দেহ হয়েছিল।

১২) ‘তাঁহার অনুসরণ করিতেছিল’- কে, কাকে অনুসরণ করছিলেন ? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী? 

উঃ প্রশ্নোধৃত উক্তি অনুযায়ী আরবসেনাপতি মুরসেনা পতিকে অনুসরণ করছিলেন। 

আরবসেনাপতি মুরসেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন, কারণ তিনি তাঁর পিতার হত্যাকারীকে হত্যা করতে চান। অথচ, সেই হত্যাকারী তার সামনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও আতিথেয়তার গুণে সেই প্রতিশােধ তিনি নিতে পারেননি। সূর্যোদয়ের পর তিনি কাজটি করবেন প্রতিজ্ঞা করে মুরসেনাপতিকে সূর্য ওঠার বেশ কিছুক্ষণ আগেই তাঁর শিবির থেকে বিদায় দেন। মুরসেনাপতি, আরবসেনাপতির কথা শুনে নিজের প্রাণ বাঁচানাের তাগিদে দ্রুত গতিতে ঘােড়া ছােটাতে লাগলেন আর আরবসেনাপতি তাঁকে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলেন।

১৩) ‘যাহাতে আপনি সত্বর প্রস্থান করিতে পারেন, তদবিষয়ে যথােপযুক্ত আনুকূল্য করিব’- তাৎপর্য লেখো।  

উৎসঃ 

আলােচ্য উদ্ধৃতিটি ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’-এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গঃ 

আতিথেয়তা রক্ষা ও পিতৃহন্তার প্রতিশােধ গ্রহণ- এই দুটি বিপরীতমুখী টানাপােড়েনে দ্বিধান্বিত আরব সেনাপতি অতিথির প্রাণ রক্ষার প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন। 

তাৎপর্যঃ

আরব জাতির আতিথেয়তাবােধ পৃথিবীর অন্য সব জাতির থেকে শ্রেষ্ঠ। পরম বন্ধু ভেবে নিজেদের ও পূর্বপুরুষদের কীর্তিগাথা বর্ণনার সময় আরবসেনাপতি অতিথি মুরসেনাপতির কথা থেকে বুঝতে পারেন যে, এই ব্যক্তিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু সৌজন্যের কারণে সেই মুহূর্তে তিনি প্রতিশােধ নিতে পারেন না। তাঁকে অতিথির প্রাণ বাঁচাতে হবে আবার পিতার মৃত্যুর প্রতিশােধও নিতে হবে। এই দু-এর টানাপােড়েনে তিনি দুটি দিকই বজায় রাখতে গিয়ে কথাটি বলেছেন। 

১৪) ‘এই বিপক্ষশিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘােরতর বিপক্ষ আর নাই’- তাৎপর্য লেখো।

উৎসঃ 

আলােচ্য উক্তিটি ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।  

প্রসঙ্গঃ

বক্তা আরবসেনাপতির পিতৃহন্তা মুরসেনাপতি যাতে তাঁর সংহারী রূপ থেকে রক্ষা পেতে পারে, তাকে তা জানানাের প্রসঙ্গেই আরবসেনাপতি কথাটি বলেছেন। 

তাৎপর্যঃ

আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কথাসূত্রে জানতে পারেন যে, ইনি তাঁর পিতার হত্যাকারী । অথচ তিনি অতিথি। এই মুহূর্তে তাঁকে হত্যা করা অসম্ভব। আবার পিতার হত্যাকারীকে সমুচিত শাস্তি না-দিলে তিনি নিজের কাছে ভীরু প্রতিপন্ন হবেন। এই দুই টানাপােড়েনে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কাছে ঈপ্সিত সত্যি প্রকাশ করে নিজের স্বরূপ উদঘাটন করে আলােচ্য কথাটি বলেছেন। এর দ্বারা তাঁর দুটি দিকই রক্ষা পেল বলে মনে হয়। 

১৫) ‘আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও, অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না’- তাৎপর্য লেখো। 

উৎসঃ 

আলােচ্য উক্তিটি ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে। 

তাৎপর্যঃ

মুরসেনাপতির সঙ্গে কথােপকথনকালে আরবসেনাপতি যখন জানতে পারেন, ইনিই তাঁর পিতার হত্যাকারী, তখন তিনি শুধুমাত্র আতিথেয়তার কারণে তাঁকে হত্যা না করে তাঁকে অতিথি রূপে সেবা করেন। 

প্রসঙ্গঃ

আরব জাতির অতিথিপরায়ণ মনােভাবের সম্যক পরিচয় দেওয়ার প্রসঙ্গেই কথাটি বলা হয়েছে। আরব জাতির অতিথিসেবার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে লেখক প্রথমেই জানিয়েছেন, আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনাে জাতিই আরব জাতির মতাে নয়। কাহিনিতেও তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আরবসেনাপতি, মুরসেনাপতির স্বরূপ জেনেও, তিনি তাঁর অতিথি হওয়ার কারণে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করতে পারেননি। উপরন্তু তাঁকে পালানাের পূর্ণ সুযােগ দিয়ে তবে তার পিছু নিয়েছেন। অর্থাৎ, এই ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে আরবসেনাপতির আতিথ্যবােধ ও জাতীয় মর্যাদার কথাই প্রকাশিত হয়েছে। 

১৬) গল্পে কার আতিথেয়তার কথা রয়েছে ? তিনি কীভাবে অতিথির আতিথেয়তা করেন ? তার সেই আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন ? 

উৎসঃ 

লেখক ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আমরা এক অদ্ভুত আতিথেয়তার পরিচয় লাভ করি। 

যার আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছেঃ

আলোচ্য গল্পে আরবসেনাপতির আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছে।

আরবসেনাপতির আতিথেয়তার পরিচয়ঃ

আতিথেয়তা বিষয়ে আরবসেনাপতি এক অদ্ভুত দৃষ্টান্ত রেখেছেন। স্বভাবগুণে তিনি প্রথমে শরণাগতকে আশ্রয় দেন, তাঁর সার্বিক পরিচর্যা করেন, তার জন্য যথােপযুক্ত খাদ্য-পানীয়ের ব্যবস্থা করেন। তারপর কথােপকথনকালে যখন জানতে পারেন, এই ব্যক্তিই তাঁর পিতাকে হত্যা করেছেন, তখন সেই মুহূর্তে তাঁর প্রতি কোনাে বিরূপতা দেখাননি। এমনকি তাঁর ঘােড়ার অক্ষমতা দেখে তাঁর জন্য একটি সবল, সতেজ ঘােড়ার ব্যবস্থাও করেন। তাঁর সঙ্গে পরম বন্ধুত্বের আচরণ করেন। শেষ পর্যন্ত সম্যক বিষয় জানিয়ে তাঁকে চলে যাওয়ার সুযােগ করে দেন। এইভাবে পিতার হত্যাকারীর প্রতি পূর্ণ সৌজন্য দেখিয়ে আরবসেনাপতি আতিথেয়তা প্রদর্শন করেন। 

আতিথেয়তাকে অদ্ভুত বলার কারণঃ

এই আতিথেয়তা সত্যিই ‘অদ্ভুত’। কারণ, আরবসেনাপতি তাঁর পিতার হত্যাকারীকে হত্যা করতে চান। আবার সেই মানুষটিই তাঁর শরণাগত, অতিথি। একদিকে প্রতিশােধস্পৃহা, অন্যদিকে অতিথিসেবা- এই দুই-এর টানাপােড়েনে সুযােগ পেয়েও আরবসেনাপতি অতিথির প্রতি সামান্যতম বিরূপতা দেখাননি। আবার বিদায়কালে তাঁর শপথ ও প্রতিজ্ঞার কথা বলে তাঁকে যথেষ্ট সতর্ক করেছেন। এভাবে মনের ইচ্ছাকে প্রকাশ করেও তিনি আতিথ্য দেখিয়েছেন বলে এই আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ বলা হয়েছে। 

১৭) আরব-মুর সংঘর্ষের ইতিহাসাশ্রিত কাহিনি অবলম্বনে রচিত এই আখ্যানে লেখকের রচনাশৈলীর অনন্যতার পরিচয় দাও। 

উৎসঃ 

‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আমরা আরব-মুর সংঘর্ষের পরিচয় লাভ করি। 

লেখকের রচনাশৈলীর পরিচয়ঃ 

সাহিত্য সমাজ-জীবনের দর্পণ। সমাজে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, পাওয়া-না-পাওয়া, ন্যায়-নীতি সাহিত্যে ফুটে ওঠে। মানুষও অন্যের কাহিনির মাধ্যমে নিজের আদর্শবােধ জাগিয়ে তােলে। আলােচ্য আরব-মুর সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে লেখক অদ্ভুত গল্পশৈলীর মাধ্যমে এই আখ্যান বুনেছেন। প্রাথমিকভাবে আরবসেনাপতির আতিথেয়তা সবাইকে মুগ্ধ করে। তারপর তাঁর আচরণ আমাদেরকে আরও বেশি বিমােহিত করে তােলে। একজন যােদ্ধা পিতৃহন্তার যন্ত্রণা সহ্য করেও হত্যাকারীকে নিজের শিবিরে আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ, তাঁকে হত্যা করাই তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু কর্তব্যবােধ, নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে তিনি কেবলমাত্র প্রতিশােধ নিতে হত্যা করা পছন্দ করেন না। তাতে তাঁর জাতির ও মানুষের মানবিকতার অপমান হবে। নীতি ও মূল্যবােধ আহত হবে। আর প্রকৃত মানুষ হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না। তাই শত্রুকে প্রাণ বাঁচানোের পূর্ণ সুযােগ দিয়ে, সতর্ক করেই তিনি তাঁকে চলে যেতে বলেন। এ ছাড়া বিদ্যাসাগরীয় ভাষা বৈশিষ্ট্যে কাহিনি যথেষ্ট উজ্জ্বল। তাই রচনাশৈলীর বিষয়ে অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পটি উজ্জ্বল ও অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। 

১৮) ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনাে জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে’- গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে মন্তব্যটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করাে।  

উৎসঃ 

‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে এই তাৎপর্যপূর্ণ অংশটি চয়ন করা হয়েছে। 

আতিথেয়তার বিষয়ে আরবজাতীর অতুলনীয়তাঃ 

শরণাগতরা কোনাে অবস্থাতেই আরব জাতির সহানুভূতি, সেবা-সাহচর্য, সৌজন্য থেকে বঞ্চিত হয় না। আরবরা অতিথির সেবাকে পরম ধর্ম বলে মনে করে। কোনােভাবেই আশ্রিতের অনিষ্ট চিন্তা করে না। ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আমরা আরবসেনাপতির সেই মানসিকতাকেই প্রত্যক্ষ করি। আমরা দেখি, আরবসেনাপতি যখন মুরসেনাপতিকে তাঁর পিতার হত্যাকারী বলে বুঝতে পারলেন, তখনও তিনি সেবাকার্য থেকে সরে আসেননি। সাময়িক উত্তেজনা এলেও তা তিনি প্রশমন করেছেন। তিনি মুরসেনাপতিকে পুরো বিষয় জানিয়ে বলেন—“আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও, অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না।” পাঠ্যাংশে আরবসেনাপতি তা যথার্থভাবে পালন করেছেন। শত্রুকে সম্পূর্ণ আয়ত্তে পেয়েও তাঁকে আঘাত করেননি বরং নিরাপদে পালানাের সুযােগ ও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ থেকেই বােঝা যায়, আতিথেয়তা বিষয়ে আরব জাতির তুল্য পৃথিবীতে সত্যিই কেউ নেই। 

১৯) ‘বন্ধুভাবে উভয় সেনাপতির কথােপকথন হইতে লাগিল’- কোন দুই সেনাপতির কথা এখানে বলা হয়েছে ? তাঁদের কীভাবে সাক্ষাৎ ঘটেছিল ? উভয়ের কথােপকথনের সারমর্ম নিজের ভাষায় আলােচনা করাে। 

উৎসঃ 

‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে এই তাৎপর্যপূর্ণ অংশটি চয়ন করা হয়েছে। 

সেনাপতিদ্বয়ের পরিচয়ঃ 

 আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটিতে বন্ধুভাবে কথােপকথনরত আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে। 

তাদের সাক্ষাতের পরিচয়ঃ 

আরব ও মুরদের বিরােধের সময় একদিন এক আরব সেনা এক মুরসেনাপতির পিছু ধাওয়া করে। দিকভ্রম মুরসেনাপতি দিকভ্রম হয়ে বিপক্ষ শিবিরে চলে যান তিনি এতই ক্লান্ত ও অবসন্ন ছিলেন যে ঘােড়ায় চড়ার ক্ষমতাও তার ছিল না। অতঃপর বাধ্য হয়ে তিনি আরবসেনাপতির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। আতিথেয়তাবােধে সর্বোজ্জ্বল আরবসেনাপতি তাকে বিনা দ্বিধায় আশ্রয় দেন। সাধ্যানুসারে পরিচর্যার দ্বারা তাঁকে সুস্থ করে তােলেন। এভাবেই বিপক্ষ দুই সেনাপতির সাক্ষাৎ হয়েছিল। 

উভয়ের কথােপকথনের সারমর্মঃ

আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির পারস্পরিক কথােপকথনের মধ্যে দিয়ে উভয় সেনাপতির পূর্বপুরুষদের সাহস, পরাক্রম, যুদ্ধকৌশলের নানা পরিচয় উঠে আসে কথােপকথনেই আরব সেনাপতি জানতে পারেন, মুরসেনাপতিই আর পিতৃহন্তা, কিন্তু তুবও তিনি বুকের যন্ত্রণা বুকে চেপেই স্বজাতির ধর্ম অনুযায়ী তাঁর আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেন। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় আরব সেনাপতি আতিথেয়তাবােধে পৃথিবীর অন্যসব জাতির অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। তাঁরা মনের ক্রুদ্ধভাব কখনও অতিথির কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁদের শত্রুতার মধ্যেও একটি পরম মিত্রতার ভাব ফুটে ওঠে। আর লেখকও আমাদেরকে সেই ভাবনায় উদ্দীপ্ত হতে সচেষ্ট করেছেন। 

২০) ‘তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন’- কার কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে তিনি স্বপক্ষের শিবিরে নির্বিঘ্নে পৌছােলেন ? তাঁর জীবনের এই ঘটনার পূর্বাত্রের অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে। 

উৎসঃ 

‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে এই তাৎপর্যপূর্ণ অংশটি চয়ন করা হয়েছে।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিঃ 

উদ্ধৃত বাক্যে প্রাণভয়ে ভীত, আরবসেনাপতির হাত থেকে মুক্তি পেতে আগ্রহী মুরসেনাপতির কথা বলা হয়েছে। 

তাঁর নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর বিবরণঃ

সূর্যোদয়ের আগে আরবসেনাপতি মুরসেনাপতির কাছে এলেন। তাঁকে তেজস্বী, বলবান একটি সজ্জিত অশ্ব দিয়ে বললেন, তিনি যেন তাড়াতাড়ি চলে যান। সূর্য উঠলেই তিনি পিতৃহন্তার প্রাণ বধ করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বেন, তার আগে নয়। তাই তিনি যদি এখনই বেরিয়ে পড়েন, তবেই মঙ্গল। নতুবা তাঁর হাতে পিতৃহন্তার মৃত্যু অনিবার্য। আরবসেনাপতির মুখ থেকে এ কথা শুনে মুরসেনাপতি সবল, দ্রুতগামী ও তেজস্বী ঘােড়ার পিঠে চড়ে নিজের শিবিরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন এবং দ্রুতবেগে নিজের দলের শিবিরে নির্বিঘ্নে উপস্থিত হলেন। 

পূর্বরাত্রের অভিজ্ঞতাঃ 

এই ঘটনার পূর্বরাত্রে আরবসেনাপতির শিবিরে আশ্রয় নিয়ে তাঁরই সার্বিক পরিচর্যায় মুরসেনাপতি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাঁরা বন্ধুর মতাে নিজেদের মধ্যে নানান গল্প করেন এবং নিজেদের জাতির গৌরবগাথা একে অন্যকে বলতে থাকেন। সহসা আরবসেনাপতি মুখ বিবর্ণ করে উঠে গেলে মুরসেনাপতি কিছুটা অবাক হন। তারপর দেখেন, আরবসেনাপতি তাঁর সামনে না-এসে আড়ালে সব কাজ করে যাচ্ছেন। আর এতেই মুরসেনাপতি খানিকটা সন্দিগ্ধ হয়ে এক সময় ঘুমিয়ে পড়েন।

২১) ‘তাঁহার অনুসরণ করিতেছিলেন’ – কার কথা বলা হয়েছে ? তিনি কাকে অনুসরণ করছিলেন ? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী ? শত্রুকে কাছে পেয়েও তিনি ‘বৈরসাধন সংকল্প’ সাধন করেননি কেন ?  

উৎসঃ 

‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ এর লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে এই তাৎপর্যপূর্ণ অংশটি চয়ন করা হয়েছে।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিঃ 

এখানে আরবসেনাপতির কথা বলা হয়েছে। 

অনুসরণকারী ব্যক্তিঃ

তিনি তাঁর পিতার হত্যাকারী মুরসেনাপতির, অর্থাৎ যিনি রাত্রে তাঁর শিবিরে অতিথি হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সূর্যোদয়ের আগেই শিবির ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন, তাঁকে অনুসরণ করছিলেন।

অনুসরণের কারণঃ 

মুরসেনাপতি ছিলেন আরবসেনাপতির পিতার হত্যাকারী। আরবসেনাপতি তাঁর পিতার হত্যার প্রতিশােধ নিতে চান। পিতার হত্যাকারীকে হত্যা করার বাসনাই তাঁর অনুসরণের কারণ।

বৈরতা সাধনের প্রচেষ্টা না করার কারণঃ 

আরব জাতির আতিথেয়তাবােধ পৃথিবীর অন্য সব জাতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। নিজের প্রাণ দিয়ে তারা অতিথির সেবা করেন। তাঁর কথায়- প্রাণান্ত তাঁরা অতিথির অনিষ্টচিন্তা করেন না। এমনকি অতি বড়াে শত্রুও যদি তাঁদের আশ্রয়ে থাকে, তবুও তারা ‘অণুমাত্র অনাদর, বিদ্বেষ প্রদর্শন বা বিপক্ষতাচরণ করেন না। এই কারণে জাতীয় আতিথ্য পালনের জন্য তিনি শত্রুকে কাছে পেয়েও ‘বৈরসাধন সংকল্প’ সাধন করেননি। 

অষ্টম শ্রেণি বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ প্রশ্নের MOCK TEST প্রদান করতে নিম্নের লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে

click here

প্রথম ইউনিট টেষ্টের সাজেশন দেখতে নিম্নের লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে

sikkhalaya click here 

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কঃ

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার নোট, সাজেশন, প্রশ্নপত্র ও মক টেষ্টের সুবিধা গ্রহণ করতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করে বিষদ তথ্য জেনে নাওঃ 

paid courses

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি বিজ্ঞাপন ব্লক করতে এক্সটেনশন ব্যবহার করছেন। এই বিজ্ঞাপন ব্লকার নিষ্ক্রিয় করে আমাদের সমর্থন করুন।

Powered By
Best Wordpress Adblock Detecting Plugin | CHP Adblock

You cannot copy content of this page

Need Help?