শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গাছ, একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনা প্রবন্ধ রচনাটি প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই প্রবন্ধ রচনাটি পাঠ করে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
একটি গাছ, একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনা :
ভূমিকা:
“অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান/ প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদি প্রাণ,/ ঊর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা/ ছন্দহীন পাষাণের বক্ষ পরেচ আনিলে বেদনা/ নিঃসার নিষ্ঠুর মরুতলে।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সৃষ্টির উষালগ্নে এই পৃথিবীতে ছিল একমাত্র গাছ-শুধুই অরণ্য। তারপর একসময় এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়। তখনকার প্রতিকূল পরিবেশে মানুষ প্রাণ ধারণ করেছিল একমাত্র গাছকে আশ্রয় করেই। তারা গাছের ছাল দিয়ে বস্ত্র তৈরি করে, গাছের ফলমূল খেয়ে গাছের কোটরে বসবাস করতে শুরু করে। এভাবেই তারা তখন জীবন কাটাত। বৃক্ষই একদিন মরু পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করে ‘মরুর দারুণ দুর্গ হতে’ মৃত্তিকাকে মুক্তি দিয়েছিল। তাই বৃক্ষই আমাদের আদিপ্রাণ।
বৃক্ষচ্ছেদন ও কারণ:
প্রাচীন কালে মানুষ যে-কোনো পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ করত। পুত্র জন্ম নিলে তার মঙ্গলের কথা ভেবে বৃক্ষরোপণ করা হত। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার অরণ্যবাসী জীবন ছেড়ে হয়েছে সামাজিক। ক্রমে জনসংখ্যা বেড়েছে। মানুষ অরণ্য কেটে তৈরি করেছে শহর, নগর। আধুনিক সভ্যতার প্রয়োজন মেটাতে আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, যানবাহন প্রভৃতি তৈরির উদ্দেশ্যে ক্রমেই অরণ্যের ধ্বংস সাধন করা হয়েছে। এখনকার যান্ত্রিক সভ্যতায় আমরা অতিমাত্রায় যান্ত্রিক হয়ে উঠেছি। মানবজীবনে বৃক্ষের গুরুত্ব বা উপযোগিতা ভুলে গেছি।
মনুষ্যজীবনে বৃক্ষের অবদান:
মনুষ্যজীবনে বৃক্ষের অবদান প্রচুর। বৃক্ষের আশীর্বাদস্বরূপ আমরা বসবাসের গৃহ, আসবাবপত্র, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, ওষুধ প্রভৃতি পাই। সর্বোপরি বৃক্ষ আমাদের পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের জোগান দেয়। দ্বিতীয়ত, গাছ ভূমিক্ষয়ে বাধা দেয়। তৃতীয়ত, গাছই আমাদের এই বিশাল জীবজগতের খাদ্য ও শক্তির প্রধান উৎস। গাছের মধ্যে যে শক্তি নিহিত থাকে, কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতির মাধ্যমে আমরা তা পেয়ে থাকি। চতুর্থত, এই বনজসম্পদ থেকেই বিভিন্নপ্রকার জীবনদায়ী ওষুধ প্রস্তুত হয়, যেমন-কুইনাইন, রেসারপিন, অ্যাট্রোপিন ইত্যাদি। ম্যাপল গাছের পাতার সংস্পর্শে এসে আমাশয়ের রোগজীবাণু বিনষ্ট হয়। অরণ্য সম্পদের ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন (O₃) স্তরের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ওই স্তর ভেদ করে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মি আমাদের গায়ে সরাসরি এসে পড়ছে। এর ফলে নানাবিধ চর্মরোগ, এমনকি ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য রোগও হচ্ছে। এককথায় বায়ুদূষণ প্রতিরোধ, মৃত্তিকাক্ষয় প্রতিরোধ, জলের পূর্ণ ব্যবহার ও পরিবেশের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম।
অরণ্য সংরক্ষণ:
অরণ্য সংরক্ষণের সহজতম অথচ শক্তিশালী উপায় হল বনমহোৎসব। রবীন্দ্রনাথ বনমহোৎসবের আহ্বান করেছিলেন এই বলে-
“মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে
হে প্রবল প্রাণ
ধূলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে
হে কোমল প্রাণ।”
আজ এই পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশে প্রধান জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয় কাঠ। কাজেই সভ্যসমাজের ব্যবহারিক চাহিদা মেটাতে আমাদের গাছ কাটতেই হবে। সেক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে বনভূমি সৃজনের প্রয়োজন। এই কাজের একমাত্র পথ বনমহোৎসব বা বৃক্ষরোপণ উৎসব পালন। ভারতে অরণ্যসৃজনের চেয়ে অরণ্যধ্বংসের হার বেশি। যেখানে বিগত ২০-২১ বছরে ভারতে প্রায় ৩৮- ৪০ লক্ষ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে, সেখানে বনসৃজন হয়েছে মাত্র ২৩-২৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে।
বনমহোৎসব:
ভারতের বনাঞ্চলের আয়তন বেশ কম। যেখানে বনের পরিধি হওয়া উচিত মোট ভূভাগের ১/৩ অংশ, সেখানে ভারতের বনাঞ্চলের পরিধি মোট ভূভাগের মাত্র ১/৬ অংশ। এই ১/৩ অংশের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ মনুষ্যসৃষ্ট। ভারতের মোট রাজস্বের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আসে বনজসম্পদ থেকে। যে জ্বালানি সম্পদে ভারত ঐশ্বর্যশালী তার প্রায় ৬০ শতাংশ হল বনজসম্পদের দান।
উপসংহার:
বৃক্ষ আমাদের আদিপ্রাণ, আমাদের রক্ষাকর্তা। তাই তাকে রক্ষার জন্য সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। ধ্বংসপ্রায় অরণ্য যেন মমতাময়ী জননীর ন্যায় আজও আমাদের হাতছানি দেয়-
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের এই পেজে নিয়মিত প্রবন্ধ রচনা প্রদান করা হয়। শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ