পাস-ফেল তুলে দেওয়া এক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত । একাদশ শ্রেণি দ্বিতীয় সেমিস্টার প্রবন্ধ রচনা

পাস-ফেল তুলে দেওয়া এক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত । একাদশ শ্রেণি দ্বিতীয় সেমিস্টার প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের (www.sikkhalaya.in) পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার প্রদান করতে চলা শিক্ষার্থীদের জন্য পাস-ফেল তুলে দেওয়া এক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত । একাদশ শ্রেণি দ্বিতীয় সেমিস্টার প্রবন্ধ রচনা প্রদান করা হলো। একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এই বিতর্কমূলক প্রবন্ধ রচনাটি শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠবে। 

পাস-ফেল তুলে দেওয়া এক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত । একাদশ শ্রেণি দ্বিতীয় সেমিস্টার প্রবন্ধ রচনা :  

পক্ষেঃ 
“শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে মুক্তি।” একদা দেওয়ালের গায়ে বহু উচ্চারিত একটি স্লোগান ছিল এটি। স্বাধীনতার পরে এতগুলি দশক পার করেও কী এই স্লোগানের প্রয়োজনীয়তা? আজও যখন রাজস্থানে ‘সতী’ হয়, এখানে-ওখানে ডাইনি সন্দেহে নিরীহ মহিলাদের পিটিয়ে মারা হয়, নাবালিকা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়-তখনই বোঝা যায় শিক্ষার প্রয়োজন কতটা। কিন্তু ভারতের মতো বিরাট জনসংখ্যার দেশে বিষয়টা সহজসাধ্য নয়। একটি সমীক্ষা বলছে, ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে এই দেশে প্রথম শ্রেণিতে ভরতি হয়েছিল ২ কোটি ৭০ লক্ষ ছেলেমেয়ে। কিন্তু ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে তারা যখন দশম শ্রেণিতে পৌঁছোয় তাদের সংখ্যা হয় ১ কোটি। অর্থাৎ প্রায় ৬৩ শতাংশ ছেলেমেয়েই স্কুল ছেড়ে দিয়েছে ন্যূনতম শিক্ষা অর্জনের আগেই। এদের বেশিরভাগই স্কুল ছাড়ছে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে, আর-একটি বড়ো অংশ অষ্টম থেকে দশম শ্রেণিতে। কেন এই স্কুলত্যাগ ? অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা নিঃসন্দেহে পাঠক্রমের গুরুভার আর পরীক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভীতি। প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় তীব্র চাপের মুখোমুখি হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এর থেকে মুক্তির একমাত্র পথ পাস-ফেল ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়া। তা ছাড়া আলাদা-আলাদা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে আসা ছেলেমেয়েদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতা অসম হতে বাধ্য। যে উপযুক্ত পরিবেশ এবং সাহায্য একটি শিক্ষিত বা অর্থবান পরিবারের ছেলেরা বা মেয়েরা পায় তা কোনো গরিব বাড়ির ছেলেমেয়ের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। অথচ পাস-ফেলের প্রতিযোগিতায় তাদের একই সারিতে বসিয়ে দেওয়া হয়। এটা অন্যায় এবং অমানবিক। পাস-ফেল প্রথা তুলে দিয়ে গ্রেড সিস্টেম চালু করা তাই শিক্ষাকে মানবিক করে। ২০০২-এ ৮৬তম সংবিধান সংশোধন করে ২১-এ অনুচ্ছেদে ৬-১৪ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর তাকে কার্যকরী করতেই ২০১০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে চালু হয়েছে “The Right of Children Free and Compulsory Education (RTE) Act 2009″। পাস- ফেল ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার মাধ্যমেই শিক্ষার সর্বজনীন বিস্তার সম্ভব।
বিপক্ষেঃ 
পরীক্ষায় পাস-ফেল ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার একটাই অর্থ শিক্ষাকে সবার জন্য সহজ-সরল করে দেওয়া। এই বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তথ্য ও বক্তব্যের যে মিশেল এখানে পরিবেশিত হল সেখানে বেশ কিছু প্রশ্ন কিন্তু অমীমাংসিত থেকে গেল।
প্রথমতঃ পরীক্ষার পাস-ফেলহীন শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যায়ন পদ্ধতি তার তাৎপর্য হারাতে বাধ্য। যেখানে শিক্ষার্থীর সেরাটা বের করার সুযোগ নেই, সেখানে মূল্যায়নও তাৎপর্যহীন হয়ে যায়।
দ্বিতীয়তঃ পরীক্ষায় পাস-ফেল থাকলে ছাত্রছাত্রীদের মনে শৈশব থেকেই এক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। যার ফলে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে।
তৃতীয়তঃ পরীক্ষায় পাস-ফেল না থাকলে ছাত্রছাত্রীদেরা মধ্যে শিক্ষার প্রতি অবহেলা করবে। কারন তারা আগের থেকে জেনে যাবে-ফেল করলেও পরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতে কেও ঠেকাবে না। যার ফলে সচেতন পরিবার ছাড়া অন্যান্য পরবারের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারবে না।
চতুর্থতঃ পরীক্ষায় পাস-ফেল ব্যবস্থা তুলে দিলে ছাত্রছাত্রীদের মনে পরীক্ষার ভয় দূর হয়ে হবে। যার ফলে স্কুলগুলোতে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে থাকবে। এ তো আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র। সকালে যে কিশোরকে বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করতে মাঠে যেতে হয় বা প্রাণপণে রিকশা চালাতে চালাতে হাঁফিয়ে-ওঠা যে ছেলেটা মুক্তির ঘুড়ি খোঁজে-পরীক্ষার পাস-ফেলে তার কী আসে যায়? সে জীবনের পাস-ফেল নিয়েই শুধু ভাবতে শিখেছে।
পঞ্চমতঃ স্কুলগুলিতে পরীক্ষার পাস-ফেল ব্যবস্থা তুলে দিলে শিক্ষার মান পতন ঘটবে। ফলে তৈরি হবে সামগ্রিক শিক্ষার সংকট। যা দেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করবে।
ষষ্ঠতঃ শিক্ষার অধিকার আইনের কথা শোনালেন বিপক্ষ দলের বন্ধুরা। অথচ সেই আইনেই তো বলা হয়েছে শিক্ষার ‘Satisfactory and equitable quality’র কথা, পাস-ফেল তুলে দিলে শিক্ষার সেই গুণগত মান বজায় রাখা অসম্ভব। সম্প্রতি পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটিও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
সপ্তমতঃ গ্রাম-শহর, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের ব্যবধান আজও আমাদের দেশে ঘোচেনি। সেক্ষেত্রে মূল্যায়নের গুরুত্ব বুঝে সারা বছর শিক্ষার্থীর পরিচর্যা করা, এ দেশে সামগ্রিকভাবে কতটা সম্ভব সে প্রশ্নও স্বাভাবিক। 

একাদশ শ্রেণির বাংলা সকল প্রকার নোট দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে

পাস-ফেল তুলে দেওয়া এক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত 

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি বিজ্ঞাপন ব্লক করতে এক্সটেনশন ব্যবহার করছেন। এই বিজ্ঞাপন ব্লকার নিষ্ক্রিয় করে আমাদের সমর্থন করুন।

Powered By
100% Free SEO Tools - Tool Kits PRO

You cannot copy content of this page

Need Help?