ধ্বনিতত্ত্ব (ছোটপ্রশ্নের উত্তর)
ধ্বনিতত্ত্ব থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ MCQ ও SAQ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো।
১) ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য কী?
উঃ ধ্বনিবিজ্ঞান ধ্বনির উচ্চারণগত , ধ্বনিতরঙ্গগত ও শ্রুতিগত বিশ্লেষণকার্য সমাধা করে।
ধ্বনিতত্ত্বের কাজ হল নির্দিষ্ট ভাষায় ধ্বনির ব্যবহারিক চরিত্র বিশ্লেষণ।
২) খন্ডধ্বনির অপর নাম কী?
উঃ খন্ডধ্বনির অপর নাম বিভাজ্য ধ্বনি।
৩) বাগ্ধ্বনি কী?
উঃ কথা বলার সময় আমরা ভাষার অর্থহীন ও ক্ষুদ্রতম যে একক মুখে উচ্চারণ করি তাদের বাগ্ধ্বনি বলে।
যেমনঃ– ‘চোখ’= চ্+ও+খ্ (এই তিনটিই হলো এক–একটি বাগ্ধ্বনি)
৪) বাগ্ধ্বনিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উঃ বাগ্ধ্বনিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা– বিভাজ্য ধ্বনি ও অবিভাজ্য ধ্বনি।
৫) বিভাজ্য ধ্বনিমূল কাকে বলে?
উঃ যে ধ্বনির উচ্চারণে মুখ প্রযত্নের পরম্পরা বজায় থাকে অর্থাৎ যা বিশ্লেষণ করা যায়, তাকে বিভাজ্য স্বনিম বা ধ্বনিমূল বলে।
৬) অবিভাজ্য ধ্বনিমূল কাকে বলে?
উঃ যে ধ্বনির উচ্চারণে মুখ প্রযত্নের বহুতা আছে কিন্তু তা পরম্পরায় বিশ্লেষণ করা যায় না, তাকে বলে অবিভাজ্য ধ্বনিমূল।
৭) মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা কত?
উঃ মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনি হলো ৭টি ও ব্যঞ্জনধ্বনি হলো ৩০টি।
৮) মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ স্বতন্ত্র উচ্চারণযুক্ত ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য স্বরধ্বনিকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। বাংলায় স্বরবর্ণের সংখ্যা ১১ টি হলেও স্বরধ্বনির সংখ্যা ৭ টি। যথা– অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা
৯) দুটি সংবৃত স্বরধ্বনির উদাহরণ দাও।
উঃ দুটি সংবৃত স্বরধ্বনি হলো ‘ই’ এবং ‘উ’।
১০) একটি বিবৃত স্বরধ্বনির উদাহরণ দাও।
উঃ একটি বিবৃত স্বরধ্বনি হলো ‘আ’।
১১) সন্ধ্যক্ষর কী?
উঃ দুটি ভিন্ন স্বরধ্বনির সমন্বয়ে যে স্বরধ্বনি গড়ে ওঠে তাকে সন্ধ্যক্ষর বা যৌগিক স্বর বলে।
যেমনঃ– ঔ= ও+উ , ঐ= ও+ই
১২) মহাপ্রাণ ধ্বনি কাকে বলে?
উঃ যে সকল ধ্বনি উচ্চারণে বেশি শ্বাসবায়ুর প্রয়োজন হয় তাদের মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।
যেমনঃ খ, ঘ, ছ, ঝ (প্রতিটি বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ)
১৩) তাড়িত ধ্বনির উদাহরণ দাও।
উঃ তাড়িত ধ্বনির উদাহরণ হলো ‘ড়্’ ও ‘ঢ়্’।
১৪) পার্শ্বিক ধ্বনির উদাহরণ দাও।
উঃ পার্শ্বিক ধ্বনির উদাহরণ হলো ‘ল্’।
১৫) উষ্মধ্বনি কাকে বলে?
উঃ ‘উষ্ম’ শব্দের অর্থ শ্বাস। শ্বাসপ্রবাহের উপর ভিত্তি করে যে ধ্বনিগুলির উচ্চারণ প্রলম্বিত করা হয় তাদের উষ্মধ্বনি বলে।
যেমনঃ– ‘শ্’, ‘ষ্’, ‘স্’।
১৬) দ্বিব্যঞ্জন কী?
উঃ মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলিকে উচ্চারণকালে একটি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হলে তাকে দ্বিব্যঞ্জন বলে।
যেমনঃ– ঘ্= গ্+হ্ , ঢ়্= ড়্+হ্
১৭) নাসিক্য ধ্বনি কাকে বলে?
উঃ যেসকল ধ্বনির উচ্চারণে শ্বাসবায়ু নাক দ্বারা উচ্চারিত হয় তাদের নাসিক্য ধ্বনি বলে।
যেমনঃ– ম্, ন্, ঙ্
১৮) ওষ্ঠ্যধ্বনি কাকে বলে?
উঃ নীচের ওষ্ঠ্যের দ্বারা উপরের ওষ্ঠ্যে বা দন্তে শ্বাসবায়ু বাধাপ্রাপ্ত হলে যে ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাকে ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে।
যেমনঃ– প্, ফ্, ব্, ভ্, ম্
১৯) ধ্বনিমূলের অবস্থান বলতে কী বোঝ?
উঃ কোন ধ্বনিমূল শব্দে কোন্ কোন্ অংশে ও কোন্ কোন্ ধ্বনি প্রতিবেশে উচ্চারিত হতে পারে তার নির্দেশই হলো ধ্বনিমূলের অবস্থান।
২০) সহধ্বনি কাকে বলে?
উঃ ধ্বনি অবস্থান অনুযায়ী একটি মূলধনির যেসব উচ্চারণ বৈচিত্র লিক্ষ করা যায়, সেই উচ্চারণ বৈচিত্রকে সহধ্বনি বলে।
২১) মুক্ত বৈচিত্র কী?
উঃ যখন দুটি ধ্বনির মধ্যে উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য থাকলেও উরথগত কোন পার্থক্য পলক্ষিত হয় না, তখন তাদের ধ্বনিগত পার্থক্যকে মুক্ত বোইচিত্র বলা হয়।
যেমনঃ– ‘রূঢ়’ শব্দটি কারো কারো উচ্চারণে ‘রূড়’ হয়ে যায়।
২২) নূন্যতম শব্দজোড় কাকে বলে?
উঃ যখন দুটি শব্দ যথাসম্ভব ছোট হয় এবং তাদের মধ্যে সব দিক দিয়ে মিল থাকে, শুধুমাত্র প্রত্যেক শব্দের একটি করে ধ্বনির ক্ষেত্রে পার্থক্য থেকে যায় এবং এর জন্য শব্দ দুটির অর্থ পার্থক্য দেখা দেয়, তখন শব্দ দুটিকে নূন্যতম শব্দজোড় বলা হয়।
যেমনঃ– তাল= ত্+আ+ল্
থাল= থ্+আ+ল্
এখানে ‘আ’ ও ‘ল’ দুটি শব্দের মধ্যেই আছে কিন্তু ‘থ্’ ও ‘ত্’ শব্দের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করছে। তাই এরা নূন্যতম শব্দজোড়।
২৩) পূরকধ্বনি কাকে বলে?
উঃ যদি দুই বা ততোধিক ধ্বনির অবস্থান এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় যে একটির পরিবর্তে অন্যটি ব্যবহৃত হতে পারে না, কিন্তু তাদের উচ্চারণে কোনা না কোন দিকের সাদৃশ্য বজায় থাকে তবে সেই ধ্বনিগুলিকে পূরকধ্বনি বলে।
২৪) লোকনিরুক্তি বলতে কী বোঝ?
উঃ অশিক্ষিত কিম্বা অল্পশিক্ষিত জনসাধারণের ধ্যানধারণা ও বিশ্বাস অনুযায়ী নির্ণিত ব্যুৎপত্তির ওপর নির্ভর করে শব্দের যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে লোকনিরুক্তি বলে।
যেমনঃ– আর্ম চেয়ার> আরাম চেয়ার/আরামকেদারা
২৫) বিমিশ্রণ বা মিশ্রণ কাকে বলে?
উঃ একটি শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে তার ভাবানুষঙ্গে অনেক সময় অন্য কোন সব্দ মনে এসে যাওয়ায় মূল শব্দের কিছু অংশ বাদ দিয়ে মনে আসা শব্দটি যোগ করে যে নতুন শব্দের সৃষ্টি করা হয় তাকে বিমিশ্রণ বা মিশ্রন বলে।
যেমনঃ– পোর্তুগিজ ‘আনানস’ শব্দটি বাংলায় ‘রস’ সব্দ যোগে ‘আনারস’ এ পরিণত হয়েছে।
২৬) শব্দের আদিতে বসে না এমন দুটি বাংলা ধ্বনি কী কী?
উঃ শব্দের আদিতে বসে না এমন দুটি বাংলা ধ্বনি হলো ‘ঙ্’ ও ‘ড়্’।
২৭) শব্দের অন্তে অঘোষ ধ্বনির সঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হওয়ার উদাহরণ দাও।
উঃ কাক> কাগ
২৮) বাংলায় কোন বর্ণ শব্দের অন্তে অবস্থান করে না?
উঃ অ
২৯)একতি দ্বিস্বরধ্বনির উদাহরণ দাও।
উঃ ওই
৩০) গুচ্ছধ্বনি কাকে বলে?
উঃ পাশাপাশি অবস্থিত দুটি বা তিনটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে গুচ্ছধ্বনি বলে।
যেমনঃ ‘উষ্ণ’
৩১) চারটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনি বাংলায় কয়টি? উদাহরণ দাও।
উঃ চারটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনি বাংলায় মাত্র একটি। যথাঃ– সংস্কৃত
৩২) যুক্তধ্বনি বলতে কী বোঝ?
উঃ শব্দ বা দলের আদিতে একাধিক ব্যঞ্জন্ধনির সমাবেশকে বলা হয় যুক্তধ্বনি।
যেমনঃ– প্র, স্ন ইত্যাদি।
৩৩) বাংলায় যুক্তধ্বনির সংখ্যা কয়টি?
উঃ বাংলা ভাষায় নিজস্ব যুক্তধ্বনির সংখ্যা ২৮ টি। যেমনঃ– ধ্র, স্প ইত্যাদি।
এছাড়াও ইংরেজি ভাষা থেকে আরো১৮ টি যুক্তধ্বনি বাংলায় সংযুক্ত হয়েছে। যেমনঃ– ফ্ল, ট্র ইত্যাদি।
৩৪) সন্দেহভাজন জোড় কাকে বলে?
উঃ শব্দমধ্যস্থ প্রায় সমোচ্চারিত ধ্বনিকে যখন একই স্বনিমের পূরকধ্বনি সন্দেহ করে শব্দের মধ্যে তাদের অবস্থান বিষয়ে বিচারবিশ্লেষণ করা হয় তখন তাকে সন্দেহভাজন জোড় বলা হয়।
যেমনঃ– চুড়ি ও চুরি
৩৫) শ্বাসাঘাত কী?
উঃ একাধিক দলযুক্ত শব্দের কোন একটি দলকে অপেক্ষাকৃত বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করার প্রবণতাকে শ্বাসাঘাত বলে।
যেমনঃ– মা–খন
৩৬) দৈর্ঘ্য বলতে কী বোঝ?
উঃ ভাষায় দ্যৈর্ঘ্য বলতে দলের উচ্চারণে স্বরধ্বনির উচ্চারণ সময়কালকে বোঝায়। বহুদল শব্দের স্বরধ্বনির তুলনায় একদল শব্দের স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য বেশি হয়।
৩৭) যতি কাকে বলে?
উঃ দল কিম্বা শব্দের সীমান্তদেশে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকায় যে ছেদ পড়ে তাকে যতি বলে।
৩৮) সুরতরঙ্গ বলতে কী বোঝ?
উঃ বাক্যের অর্থ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাক্যে সুরের যে ওঠাপড়া হয় তাকে সুরতরঙ্গ বলে।
যেমনঃ রাম ভাত খাবে (বিবৃতি)
রাম ভাত খাবে? (প্রশ্ন)
৩৯) ধ্বনি ও বর্ণের পার্থক্য কী?
উঃ কথ্য ভাষার শ্রুতিগ্রাহ্য একককে ধ্বনি বলে। আর লেখ্য ভাষার দৃষ্টিগ্রাহ্য একককে বর্ণ বলে।
৪০) অর্ধস্বরধ্বনি কাকে বলে?
উঃ কোনো স্বরধ্বনির উচ্চারণকালে যদি ভেতরে কোনো অবরোধের সৃষ্টি হয় এবং ধ্বনিটি ঈষৎ উষ্ম উচ্চারিত হয় তখন তাকে অর্ধস্বর বলে।
যেমনঃ ‘ই’, ‘এ’, ‘ও’, ‘উ’।
Nicc
ধন্যবাদ।