নেপোলিয়ন বিরোধী শক্তিজোট

শিক্ষালয়ের পক্ষ থেকে নবম শ্রেণির শীক্ষার্থীদের জন্য তোমাদের ইতিহাস বিষয়ে নেপোলিয়ন বিরোধী শক্তিজোট গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়ে- ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির জোটবদ্ধতা কীভাবে নেপোলিয়নের পতনকে তরান্বিত করেছিল- প্রশ্নটি তোমাদের পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

 

১) ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির জোটবদ্ধতা কীভাবে নেপোলিয়নের পতনকে তরান্বিত করেছিল?

 

ভূমিকাঃ-

        ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করার পূর্বেই সেনাপতি নেপোলিয়ন ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান শুরু করেন। নেপোলিয়ন সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি ইউরোপের পুনঃগঠনে নজর দেন। তিনি ‘সিজালপাইন’, ‘বাটাভিয়া’ প্রভৃতি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেও পরবর্তিতে সেখানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে নিজের ভাই, পুত্র ও নিকট আত্মীয়দের বসান। 

         ইটালির জেনোয়া, টাস্কানি ও পার্মা ফরাসি সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। দক্ষিণ ইটালিতে নেপলস রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে তিনি নিজের ভাই জোসেফকে সেখানকার সিংহাসনে বসান। জার্মানির ছোট ও দুর্বল রাজ্যগুলি ভেঙ্গে ‘কনফেডারেশন অব দ্য রাইন’ গঠন করেন। নেপোলিয়নের এই সকল কার্যাবলীর জন্য ইউরোপের মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে এবং বিভিন্ন দেশের ভবিষ্যৎ ঐক্যের পথ সুগম হয়।

   

শক্তিজোটের পটভূমিঃ-

         নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় দেশগুলির একত্রিত হবার এবং তার পতনের পেছনে যে কারণগুলি বিদ্যমান ছিল সেগুলি হল- তার সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব, বিশাল সাম্রাজ্যের সৃষ্টি করা, স্পেন দখল করে সেখানকার জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষকে নিজের বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া, খ্রিষ্টান ধর্মের প্রধান পোপের সঙ্গে বিরোধীতা, অবিবেচকের মতো পরিস্থিতির বিচার বিবেচনা না করেই ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণ, নৌশক্তিতে প্রবল পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডের সাথে সংঘর্ষ। তার মহাদেশিয় ব্যবস্থা জোরপূর্বক প্রণয়ন করতে গিয়ে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন।

   

শক্তিজোট গঠনঃ-

         ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও প্রাশিয়া- ইউরোপের এই চারটি বৃহৎ শক্তি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে মোট চারটি শক্তিজোট গঠন করলে তার পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।

এখন ক্রমান্বয়ে আমরা এই শক্তিজোটগুলির আলোচনা করবো- 

 

প্রথম শক্তিজোট (১৭৯৩):-

         ফ্রান্সের বিরোধী আইনসভা রাজা ষোড়শ লুইয়ের প্রাণদন্ড দিলে ইউরোপের রাজতন্ত্রগুলি এর বিরোধিতা করে। বিপ্লবী ফ্রান্সকে শায়েস্তা করবার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, স্পেন, পোর্তুগাল, সুইডেন প্রভৃতি দেশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শক্তিজোট গঠন করে।

 

দ্বিতীয় শক্তিজোট (১৭৯৯):-

         নেপোলিয়নের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও বিভিন্ন সামরিক অভিযানের সফলতা ইউরোপীয় দেশগুলিকে আতঙ্কিত করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পোর্তুগাল, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় শক্তিজোট গড়ে তোলে।

 

তৃতীয় শক্তিজোট ((১৮০৪-১৮০৫):-

         নেপোলিয়নের ধারাবাহিক সাফল্য ও দ্রুত ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। ফলে ইংল্যান্ড, সুইডেন, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ তার বিরুদ্ধে ১৮০৪-১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় শক্তিজোট গঠন করে।

 

চতুর্থ শক্তিজোট (১৮১৩):-

         আগ্রাসী নেপোলিয়নের ক্ষমতা ধ্বংস করার জন্য রুশ জার প্রথম আলেকজান্ডারের উদ্যোগে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, রাশিয়া ও সুইডেন ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে চতুর্থ তথা শেষ শক্তিজোট গড়ে তোলে।

 

মূল্যায়নঃ-

         ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে চতুর্থ শক্তিজোট ওয়াটারলুর যুদ্ধে নেপোলিয়নকে পরাজিত করলে তার পতন ঘটে। তাই আলোচনার পরিণতিতে একথা বলাই যায়, নেপোলিয়ন বিরোধী ইউরোপীয় শক্তিজোটগুলির সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই নেপোলিয়নের পতন ঘটে।

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে নিম্নের ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করোঃ 

sikkhalaya
শিক্ষালয়, অনুপম ধর

You cannot copy content of this page

Need Help?