শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ নোট প্রদান করা হয়। এই পর্বে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকে বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে বলরাম দাসের অবদান আলোচনা করা হলো। একাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়ের অন্যান্য নোটগুলি শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটের নোট বিভাগ থেকে দেখতে পারবে।
১) বৈষ্ণব সাহিত্যে বলরাম দাসের অবদান আলোচনা করো। ৫
ভূমিকাঃ
বাংলা সাহিত্যে চন্ডীদাসের মতোই বলরাম দাসের কবি পরিচিতি নিয়েও মতভেদ রয়েছে। আমরা বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে একাধিক বলরাম দাসের অস্তিত্বের পরিচয় পেয়ে থাকি। তবে ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে বলরাম দাস নামে যে একজন বিশিষ্ট পদকর্তা ছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
কবি পরিচিতিঃ
বলরাম দাসের জন্ম হয়েছিল কৃষ্ণনগরের অন্তর্ভুক্ত দোগাছিয়া গ্রামে। ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান বলরাম দাস চৈতন্য প্রভাবে নিত্যানন্দের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বৃন্দাবন দাসের রচনাতেও আমরা বলরাম দাসের পরিচয় লাভ করি-
“প্রেমরসে মহামও বলরাম দাস।
যাহার বাতাসে সব পাপ হয় নাশ ॥”
কবি প্রতিভাঃ
‘পদকল্পতরু’ সংকলনে আমরা বলরাম দাসের ১৩৬টি পদের পরিচয় পাই। কবি কৃষ্ণের বাল্যলীলা, রাধাকৃষ্ণের পূর্বরাগ, অনুরাগ, মিলন, অভিসার, নৌকাবিলাস, বিরহের পদ রচনা করেছেন। গৌরাঙ্গের বর্ণনা প্রদান করতে কবি যে পদ রচনা করেছেন তাতে আমরা তাঁর অপরিসীম কবি প্রতিভার পরিচয় লাভ করি-
“নাচিতে নাচিতে গোরা
যেনা দিগে চায়।
লাখে লাখে দীপ জ্বলে।
কেহ হরি পায় ৷৷
কুলবধু সকল ছাড়িয়া হরি বলে।
প্রেম নদী বহে সবার নয়নের জলে ॥”
আবার বিরোহিনী রাধার আক্ষেপ বর্ণনায় কবি অনায়াস দক্ষতায় লিখতে পারেন-
“দুখিনীর বেথিত বন্ধু শুন দুখের কথা।
কাহারে মরম কব কে জানিবে বেথা ॥
কান্দিতে না পাই পাপ ননদীর তাপে।
আঁখির লোর দেখি কহে কান্দে বন্ধুর ভাবে ৷৷”
তার আর “হিয়ার ভিতর হৈতে কে কৈল বাহির” পদটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও মোহিত করেছিল।
কবি প্রধানত বাৎসল্য রসের পদ রচনায় সর্বাধিক কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কবির বর্ণনায়, একদা এক সুন্দর প্রভাতে শিশু কৃষ্ণের অনভিজ্ঞ হৃদয়ে বাইরের ডাক আসলে সে মায়ের কাছে গিয়ে বলে-
“গোঠে আমি যাব মা গো, গোঠে আমি যাব।
শ্রীদাম সুদাম সঙ্গে বাছুরি চরাব ৷৷
চূড়া বান্ধি দে গো মা, মুরলী দে মোর হাতে।
আমার লাগিয়া শ্রীদাম দাঁড়াইয়া রাজপথে ॥”
মা যশোদার পুত্র কৃষ্ণকে সাজিয়ে দেবার মধ্যে কবির বাৎসল্য রসের ও কৃষ্ণের সাজসজ্জা বর্ণনায় তাঁর সুগভীর পান্ডিত্যের পরিচয় আমরা পেয়ে থাকি-
“অঙ্গ বিভূষণ কৈল রতন ভূষণ।
কটিতে কিঙ্কিণী ধটী পীত বসন ।।
চরণে নূপুর দিলা তিলক কপালে।
চন্দনে চর্চিত অঙ্গ রত্নহার গলে ।।
বলরাম দাসে কয় সাজাইয়া রাণী।
নেহারে গোপালের মুখ কাতর পরাণি ।।”
বাৎসল্যভাব, চিত্রময়তা, আত্মসচেতনতা, বর্ণনাময়তা, বাংলা ও ব্রজবুলি ভাষার সুষম মিলন এবং ছন্দঝঙ্কার তাঁর পদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে দেখা দিয়েছে।
মূল্যায়নঃ
বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্য ধারায় বলরাম দাসের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
একাদশ শ্রেণির বাংলা বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নোটগুলি দেখতে এই লেখাতে ক্লিক/টাচ করতে হবে