অসুখী একজন কবিতার অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা

অসুখী একজন 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম অর্থাৎ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত বাংলা বিষয়ের আলোচনা প্রদান করা হয়ে থাকে। আজকে ‘অসুখী একজন’ কবিতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘অসুখী একজন কবিতার অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা’ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি শুধুমাত্র একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা। এই আলোচনাটি বুঝে নিয়ে শিক্ষার্থীরা কবিতা থেকে প্রশ্নের উত্তরগুলি ভালোভাবে সমাধান করতে পারবে। 

 

১) ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কোন অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনাকে প্রকাশ করে? 

উৎসঃ

       চিলির কবি “পাবলো নেরুদা”-র স্প্যানিশ ভাষায় রচিত “Extravagaria” কাব্যগ্রন্থের ‘La Desdichada’ কবিতাটি ইংরেজিতে অনুদিত হয় ‘The Deseribed’ নামে। সাহিত্যিক “নবারুন ভট্টাচার্য” তাঁর “বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে” কাব্যগ্রন্থে কবিতাটি “অসুখী একজন” নামে অনুবাদ করেছেন।

 

কবিতার অন্তর্নিহিত ব্যাঞ্জনার পরিচয়ঃ-

   শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অহিংস সাধারণ মানুষ কখনোই যুদ্ধ চায় না। কিন্তু ক্ষমতালোভী স্বার্থপর মানুষেরা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থকে চরিতার্থ করতে দেশে দেশে যুদ্ধের ভয়াবহতার সৃষ্টি করে। যুদ্ধের মাধ্যমেই তারা তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থকে সফল করতে চায়। আর তাদের ঘৃণ্য লালসার শিকার হয় অসংখ্য সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ কখনোই যুদ্ধ চায় না। তারা শান্তিতে তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সংস্থান করতেই সদা সচেষ্ট থাকে। কিন্তু ক্ষমতালোভী কতিপয় কিছু স্বার্থপর মানুষের জন্য তাদের শান্তি বিঘ্নিত হয় ও তারা হিংসার শিকার হয়। আমাদের আলোচ্য কবিতাতেও আমরা এই ধারারই পরিচয় পেয়ে থাকি। সমগ্র কবিতাটি পাঠ করে আমরা কবি মানসিকতার যে পরিচয় লাভ করি তার মধ্য দিয়েই আমরা কবিতার অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা ব্যাঞ্জনার গূঢ়তম সত্যকে উপলব্ধি করতে সমর্থ হই। নিম্নে এই বিষয়ে আলোকপাত করা হলো-

   চিলি দেশের গৃহযুদ্ধের পটভূমিতে কবি তাঁর এই কবিতাটি রচনা করেছেন। কবিতায় কথক তার প্রিয়তমাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন-

                          “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম

            অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়

   আমি চলে গেলাম দূর… দূরে।”

আর তার প্রিয়তমা তার প্রত্যাবর্তনের আশায় দিন গুনতে থাকেন। কথকের না ফেরা সম্পর্কে অজ্ঞাত মেয়েটি কিছুই জানত না-

“সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসবো না।”

কালের চাকা এগিয়ে চলে; কথকের অবর্তমানেও তার গতি কখনোই রুদ্ধ হয় না-

“একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।”

ধীরে ধীরে কথকের সমস্ত স্মৃতি যেন লুপ্ত হতে লাগলো-

“বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ”

কথকের অবর্তমানে তার প্রিয়তমার জীবনে বছরগুলি নেমে আসে পাথরের কঠিনতা নিয়ে-

           “আর একটার পর একটা, পাথরের মতো

                     পর পর পাথরের মতো, বছরগুলো

                                  নেমে এল তার মাথার ওপর।”

কিন্তু এর পরেই ঘটলো মানবতার চূড়ান্ত অবমাননা। যুদ্ধের কালো ছায়া শান্তির লোলিত বাণীকে উপেক্ষা করে সমগ্র সমতলের শান্তির উজ্বল্যকে গ্রাস করে নিলো। যুদ্ধের এই ভয়াবহতাকে কবি আগ্নেয়পাহাড়ের সার্থক উপমায় উপমিত করে লিখেছেন- 

                              “তারপর যুদ্ধ এল

                      রক্তের আগ্নেয়পাহাড়ের মতো।”

       যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাঝে-

                  “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো”

সমগ্র সমতলে যুদ্ধের তান্ডবে আগুণ ধরে গেলো। যে দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিলেন, মানুষের বিপদের দিনে তারাও কোনো পরিত্রাণ প্রদানে অসমর্থ হলেন। পরিবর্তে তাদের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে গেলো-

                    “শান্ত হলুদ দেবতারা

                    যারা হাজার বছর ধরে

                    ডুবে ছিলো ধ্যানে

            উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে”

 ভয়াবহ যুদ্ধের নৃসংসতায় ধ্বংস হয়ে গেলো কথকের স্মৃতিবিজরিত গোলাপি গাছ ও ঝুলন্ত বিছানা-

“যেখানে আমি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম,

গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা

              চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ

              সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”

 অর্থাৎ যুদ্ধ মানুষের আশ্রয়, দেববিশ্বাস এবং আগামী প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়। যুদ্ধের ফলে শুধুমাত্র রক্তপাত ও ধ্বংসলীলাই সাধিত হয়।   

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আগুনে সমগ্র শহর ধ্বংস হয়ে যায়-

                                                                     “যেখানে ছিল শহর

                                                 সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা

                   দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা

                                                             রক্তের একটা কালো দাগ।”

                       

       কিন্তু সেই ধ্বংসের মাঝেও মানবতা ও ভালোবাসার প্রতীক মেয়েটির মৃত্যু হয় না-

    “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়”

       আপাতদৃষ্টিতে বিচার করলে আমরা ‘সেই মেয়েটি’-কেই অসুখী বলে মেনে নিতে পারি; কথকের বিরহে সে অসুখী। আবার মেয়েটিকে যদি মানবতা ও ভালোবাসার প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হয়, তবে বলা যায় যুদ্ধের পটভূমিতে মানবতার অপমৃত্যুতে সে অসুখী। অপরদিকে কথকও তার প্রিয়তমাকে তথা তার মাতৃভূমিকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে অসুখী। সর্বোপরী আমরা অসুখী বলতে পারি মাতৃভূমিকেও, যে তার সন্তানদের বিচ্ছেদ ও বিরহ বেদনায় অসুখী হয়ে উঠেছে। 

“যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই”– এই বার্তাই যেন কবি প্রচ্ছন্নভাবে তাঁর এই কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। তাই যুদ্ধের বিরুদ্ধে, সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে স্বদেশ তথা মানবতার প্রতীক কথকের প্রিয়তমা সেই নারী। অহিংসা ও ভালোবাসাময় এক পৃথিবীর জন্য তার অপেক্ষার মধ্য দিয়েই কবি ঘোষণা করেছেন মানবতার জয়গান।

       অর্থাৎ আলোচনার পরিশেষে আমরা দৃপ্ত কন্ঠে বলতে পারি, যুদ্ধের নেতিবাচক ভাবের বিরুদ্ধে মানবিক আবেদনকেই কবি অধিক গুরত্ব প্রদান করেছেন। তাই তাঁর কবিতাটি হয়ে উঠেছে একটি যুদ্ধবিরোধী কবিতা। 

 

“অসুখী একজন” কবিতা থেকে গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নের উত্তরগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে 

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু লিঙ্কঃ 

১) দশম শ্রেণি বাংলা নোট 

২) দশম শ্রেণি বাংলা মক টেষ্ট

৩) বাংলা ব্যাকরণ 

৪) দশম শ্রেণি বাংলা ভিডিও

৫) দশম শ্রেণি বাংলা সাজেশন 

৬) দশম শ্রেণি ভূগোল মক টেষ্ট 

৭) দশম শ্রেণি ইতিহাস মক টেষ্ট

৮) অনলাইন কুইজ 

৯) বিবিধ বিভাগ

১০) শিক্ষালয় অ্যাপ 

 

You cannot copy content of this page

Need Help?