ধ্বনি পরিবর্তন: 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ব্যাকরণের অন্তর্গত ধ্বনি পরিবর্তন থেকে বিস্তারিত আলোচনা প্রদান করা হলো।

 

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণঃ 
উঃ নানা কারণে কোনো একটি ভাষার ধ্বনি পরিবর্তিত হতে পারে। এই কারণগুলি নিম্নে আলোচিত হলো-

শারীরিক কারণঃ

বাগযন্ত্রের ত্রুটি, শ্রবণযন্ত্রের ত্রুটি, অনুকরণের ত্রুটি, উচ্চারণের দ্রুততা, উচ্চারনের ত্রুটি, উচ্চারণের অল্পায়াস প্রবণতা প্রভৃতি শারীরিক কারণে ধ্বনি পরিবর্তিত হতে পারে।

মানসিক কারণঃ

উচ্চারণে অসাবধানতা, উচ্চারণে অক্ষমতা, সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব, অন্ধ বিশ্বাস, সাদৃশ্যগত প্রভাব প্রভৃতি মানসিক কারণে ধ্বনি পরিবর্তিত হতে পারে।

বাহ্যিক কারণঃ

ভৌগোলিক প্রভাব, ঐতিহাসিক কারণ, লিপিবিভ্রাট, অন্য জাতি বা ব্যক্তি গোষ্ঠির ভাষার প্রভাব প্রভৃতি বাহ্যিক কারণে ধ্বনি পরিবর্তিত হতে পারে।

 

ধ্বনি পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতিঃ

নিম্নে ধ্বনি পরিবর্তনের বিবিধ রীতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

 

স্বরাগমঃ
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে বা মধ্যে বা অন্ত্যে স্বরধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে স্বরাগম বলে। স্বরাগমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

আদি স্বরাগমঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন-

স্কুল>ইস্কুল

স্টেশন>ইস্টিশন

স্ত্রী>ইস্ত্রী

স্পর্ধা>আস্পর্ধা

মধ্য স্বরাগমঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের মধ্যে স্বরধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে মধ্য স্বরাগম বলে। যেমন-

ভক্তি>ভকতি

যত্ন>যতন

জন্ম>জনম

বর্ষা>বরষা

অন্ত্য স্বরাগমঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের অন্ত্যে স্বরধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে অন্ত্য স্বরাগম বলে। যেমন-

বেঞ্চ>বেঞ্চি

সত্য>সত্যি

ধন্য>ধন্যি

পিণ্ড>পিণ্ডি

 

স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষঃ
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের মধ্যে স্বরধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে মধ্য স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বলে। মধ্য স্বরাগমের আর এক নাম হল স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ। যুক্ত ব্যাঞ্জনকে ভেঙে মাঝে স্বরধ্বনির আগমন হয় বলে একে স্বরভক্তি বলা হয়। আবার যুক্ত ব্যাঞ্জনকে ভেঙে মাঝে স্বরধ্বনির আগমনের ফলে শব্দের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায় বলে একে বিপ্রকর্ষ বলে। যেমন- 

ভক্তি>ভকতি

যত্ন>যতন

জন্ম>জনম

বর্ষা>বরষা

 

স্বরলোপঃ
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে বা মধ্যে বা অন্ত্যে স্বরধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে স্বরলোপ বলে। স্বরলোপকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

আদি স্বরলোপঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে আদি স্বরলোপ বলে। যেমন-

অতসী>তিসি

অলাবু>লাঊ

মধ্য স্বরলোপঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের মধ্যে স্বরধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে মধ্য স্বরলোপ বলে। যেমন-

জানালা>জানলা

গামোছা>গামছা

অন্ত্য স্বরলোপঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের অন্ত্যে স্বরধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে অন্ত্য স্বরলোপ বলে। যেমন-

বন্যা>বান

লজ্জা>লাজ

 

ব্যাঞ্জনাগমঃ
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে বা মধ্যে বা অন্ত্যে ব্যাঞ্জনধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে ব্যাঞ্জনাগম বলে। ব্যঞ্জনাগমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

আদি ব্যাঞ্জনাগমঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে ব্যাঞ্জনধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে আদি ব্যাঞ্জনাগম বলে। যেমন-

ওমলেট>মামলেট

ওঝা>রোজা

মধ্য ব্যাঞ্জনাগমঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের মধ্যে ব্যাঞ্জনধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে মধ্য ব্যাঞ্জনাগম বলে। যেমন-

সুনর>সুন্দর

বানর>বান্দর

অন্ত্য ব্যাঞ্জনাগমঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের অন্ত্যে ব্যাঞ্জনধ্বনির আগমনের ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে অন্ত্য ব্যাঞ্জনাগম বলে। যেমন-

জমি>জমিন

খোকা>খোকন

 

ব্যাঞ্জনলোপঃ
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে বা মধ্যে বা অন্ত্যে ব্যাঞ্জনধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটে তাকে ব্যাঞ্জনলোপ বলে। ব্যঞ্জনলোপকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

আদি ব্যাঞ্জনলোপঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের আদিতে ব্যাঞ্জনধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি রূপান্তর ঘটে তাকে আদি ব্যাঞ্জনলোপ বলে। যেমন-

স্থান>থান

স্ফটিক>ফটিক

মধ্য ব্যাঞ্জনলোপঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের মধ্যে ব্যাঞ্জনধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি রূপান্তর ঘটে তাকে মধ্য ব্যাঞ্জনলোপ বলে। যেমন-

তাহারা>তারা

বরাহনগর>বরানগর

অন্ত্য ব্যাঞ্জনলোপঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দের অন্ত্যে ব্যাঞ্জনধ্বনির লোপ পাওয়ার ফলে যে ধ্বনি রূপান্তর ঘটে তাকে অন্ত্য ব্যাঞ্জনলোপ বলে। যেমন-

সিপাহি>সিপাই

চাকদহ>চাকদা

 

অপিনিহিতিঃ
শব্দের মধ্যে ই-কার বা উ-কার থাকলে উচ্চারণেরে সুবিধার্থে সেই ই-কার বা উ-কার তাদের উচ্চারণের সময় আসার আগেই উচ্চারিত হয়ে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটায় তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন-

আজি>আইজ

রাতি>রাইত

কালি>কাইল

করিয়া>কইর‍্যা

সাধু>সাউধ

বন্যা>বইন্যা

 

অভিশ্রুতিঃ
শব্দের মধ্যে অপিনিহিতিজাত ই-কার বা উ-কার পূর্বের স্বরধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে শব্দের মধ্যে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটাই তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন-

করিয়া>কইর‍্যা>করে

বলিয়া>বইল্যা>বলে

আজি>আইজ>আজ

রাতি>রাইত>রাত

 

স্বরসংগতিঃ
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী স্বরধ্বনি বা পরবর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনি বা একে অপরকে প্রভাবিত করে সংগতি সাধনের মাধ্যমে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটাই তাকে স্বরসংগতি বলে। স্বরসংগতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

প্রগত স্বরসংগতিঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী স্বরধ্বনির সংগতি সাধনের মাধ্যমে যে ধ্বনির রূপান্তর ঘটায় তাকে প্রগত স্বরসংগতি বলে। যেমন-

উপাস>উপোস

উনান>উনুন

পরাগত স্বরসংগতিঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পরবর্তী স্বরধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সংগতি সাধনের মাধ্যমে যে ধ্বনির রূপান্তর ঘটাই তাকে পরাগত স্বরসংগতি বলে। যেমন-

দেশি>দিশি

পুড়া>পোড়া

অন্যোন্য স্বরসংগতিঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পূর্ববর্তী স্বরধ্বনি ও পরবর্তী স্বরধ্বনি পরষ্পর পরষ্পরকে প্রভাবিত করে সংগতি সাধনের মাধ্যমে যে ধ্বনির রূপান্তর ঘটাই তাকে অন্যোন্য স্বরসংগতি বলে। যেমন-

বিলাতি>বিলেতি>বিলিতি

ভিখারি>ভিখেরি>ভিখিরি

 

ব্যাঞ্জনসংগতি বা সমীভবন বা সমীকরণঃ
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পূর্ববর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনি অথবা পরবর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনি অথবা পরষ্পর পরষ্পরকে প্রভাবিত করে সমব্যাঞ্জনধ্বনিতে পরিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটায় তাকে ব্যাঞ্জনসংগতি বা সমীভবন বা সমীকরণ বলে। একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

প্রগত সমীভবনঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পূর্ববর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনি সমব্যাঞ্জনধ্বনিতে পরিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে যে ধ্বনি রূপান্তর ঘটায় তাকে প্রগত সমীভবন বলে। যেমন-

চন্দন>চন্নন

পদ্ম>পদ্দ

পরাগত সমীভবনঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পরবর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনি সমব্যাঞ্জনধ্বনিতে পরিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে যে ধ্বনি রূপান্তর ঘটায় তাকে পরাগত সমীভবন বলে। যেমন-

দুর্গা>দুগগা

নাতজামাই>নাজ্জামাই

অন্যোন্য সমীভবনঃ

উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ পূর্ববর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনির ও পরবর্তী ব্যাঞ্জনধ্বনি পরষ্পর পরষ্পরকে প্রভাবিত করে সমব্যাঞ্জনধ্বনিতে পরিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে যে ধ্বনি রূপান্তর ঘটায় তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন-

বৎসর>বচ্ছর

উৎসব>উচ্ছব

 

বিষমীভবনঃ
শব্দের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থিত বা দুটি সংযুক্ত সমধ্বনির মধ্যে একটি পরিবর্তিত হয়ে বিষম অর্থাৎ পৃথক ধ্বনিতে পরিণত হওয়াকে বিষমীভবন বলে। যেমন-

লাল>নাল

পিপীলিকা>কিপিল্লিকা

 

ধ্বনিবিপর্যয় বা ধ্বনিবিপর্যাসঃ
উচ্চারণের সময় শব্দের মধ্যবর্তী দুটি ধ্বনির স্থান পরিবর্তন এর ফলে যে ধ্বনি পরিবর্তন হয় তাকে বলে ধ্বনিবিপর্যয় বা ধ্বনিবিপর্যাস। যেমন-

বাক্স>বাস্ক

রিক্সা>রিস্কা

হ্রদ>দহ

পিশাচ>পিচাশ

 

সমাক্ষর লোপঃ

শব্দে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি সমধ্বনি বা সমবর্ণের একটি যখন লোপ পায় তখন সেই ধ্বনি পরিবর্তনকে সমাক্ষর লোপ বলে। যেমন-

ছোটোকাকা>ছোটকা

বড়োদাদা>বড়দা

বড়োদিদি>বড়দি

 

ঘোষীভবনঃ

কোনো সঘোষ ধ্বনির প্রভাবে অঘোষ ধ্বনি সঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হলে তাকে ঘোষিভবন বলে। যেমন-

শাক>শাগ

কাক>কাগ

 

অঘোষীভবনঃ

কোনো অঘোষ ধ্বনির প্রভাবে সঘোষ ধ্বনি অঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হলে তাকে অঘোষিভবন বলে। যেমন-

বাড়োঠাকুর>বটঠাকুর

ভোঁদা কাক>ভোৎকা

 

নাসিক্যিভবনঃ

কোনো নাসিক্য ব্যাঞ্জন্ধ্বনি লুপ্ত হয়ে যদি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনিকে অনুনাসিক করে দেয় তাহলে তাকে নাসিক্যিভবন বলে। যেমন-

চন্দ্র>চাঁদ

অঙ্ক>আঁক  

 

কারক থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার লিঙ্কসমূহঃ

১) বিভক্তি ও তার শ্রেণিবিভাগ 

২) বিভক্তি ও অনুসর্গের পার্থক্য 

৩) কারক ও অকারক পদ 

৪) কর্তৃকারক ও তার শ্রেণিবিভাগ 

৫) কর্মকারক ও তার শ্রেণিবিভাগ 

৬) করণকারক ও তার শ্রেণিবিভাগ

৭) নিমিত্ত কারক

৮) অপাদান কারক 

৯) অধিকরণ কারক 

 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাংলা ব্যাকরণের নোটগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে 

 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার নোট, সাজেশন, প্রশ্নপত্র ও মক টেষ্টের সুবিধা গ্রহণ করতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করে বিষদ তথ্য জেনে নাওঃ 

paid courses

 

 

You cannot copy content of this page

Need Help?