শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত প্রবন্ধ রচনা প্রদান করা হবে। আজকে আমরা আলোচনা করবো বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনাটি সম্পর্কে।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
বাংলার উৎসবঃ
সুজলা-সুফলা যে বাংলাদেশের ছবি বঙ্কিমচন্দ্র এঁকেছেন তার বিপরীত প্রান্তের অন্য এক ছবি এঁকেছেন মুকুন্দ চক্রবর্তীও –‘শিশু কাঁদে ওদনের তরে’। আসলে বাঙালি সুখ-সম্পদশালী বোধ হয় কোনোদিনই ছিল না। তাই বাঙালি পরিবার মানেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে হরিহর-সর্বজয়ার (পথের পাঁচালী) পরিবার। এ জীবনে অভাব আছে, দারিদ্র্য আছে। মহামারি, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা তাকে বারবার বিপন্ন করেছে। তবু বাঙালি বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে প্রাণের স্পন্দনে, উৎসবে। বাঙালি এই উৎসবের রঙিন দিনগুলি থেকেই সঞ্চয় করে নিয়েছে তার বাঁচার উপাদান।
একঘেয়েমি বাংলা দেশ হল উৎসবের দেশ। বাংলার উৎসবগুলির মধ্য দিয়ে বাঙালির ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনের দূর করে এক ঝলক মুক্ত হাওয়া বয়ে আনে উৎসব। মানবজীবনে উৎসব নানা রং নিয়ে আসে। রোজকার রুটিনে-বাঁধা জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে সকলেই তাই খুশিতে মেতে ওঠে। সাময়িক বিরাম মানুষকে নতুন উদ্যমে কর্মজগতে ফিরিয়ে আনে। “আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হোক, আমার শুভ সকালের শুভ হোক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচজনের সহিত মিলিত হইয়া উপভোগ করি”— এই কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ। মানবজীবনে উৎসবের প্রভাব প্রতি মুহূর্তে বোঝা যায়।
বাংলা MCQ প্রশ্নের মক টেষ্ট প্রদান করতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করো
২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস, ১৫ আগস্টের স্বাধীনতা দিবস, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫ বৈশাখ, ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন, ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন ইত্যাদি দিনগুলি হল জাতীয় উৎসবের অন্তর্ভুক্ত। প্রজাতন্ত্র দিবসে ও স্বাধীনতা দিবসে সমগ্র জাতির চেতনায় এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।
বাঙালি শুধু ধর্মীয় আবেগপ্রবণ জাতি নয়, সেই ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছে তার নানা পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠান। যেমন অন্নপ্রাশন, বিবাহ, জামাইষষ্ঠী, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়োজনের সঙ্গে জড়িত এই উৎসবগুলিতে সমগ্রভাবে গোটা বাঙালি সমাজ যুক্ত না-হলেও বহু মানুষই এগুলিকে নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। নানা ঋতুকে ঘিরেও উৎসবে মেতে ওঠে বাঙালি। বর্ষামঙ্গল, পৌষমেলা, নবান্ন, শারদোৎসব, বসন্তোৎসব, নববর্ষের মতো নানা ঋতুকেন্দ্রিক উৎসবের মধ্য দিয়ে দুঃখ-দারিদ্র্য অভাবপীড়িত বাঙালি নতুন করে নব আনন্দে জেগে ওঠে।
ধর্মাবলম্বী মানুষের বাংলা দেশ বিভিন্ন ধর্মের লীলাভূমি বাসস্থান। এখানকার ধর্মীয় উৎসব তাই বিচিত্র। হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল দুর্গোৎসব। দুর্গাপুজো শুধুমাত্র পুজো নয়, এটি এখন একটি জাঁকজমকপূর্ণ জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। দুর্গোৎসব ছাড়া রথযাত্রা, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, সরস্বতীপুজো প্রভৃতি উৎসবগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনেকগুলি পুজোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে মেলা, প্রদর্শনী প্রভৃতিরও আয়োজন হয়। মুসলমানদের উৎসবগুলির মধ্যে মহরম, ইদ, বকরি ইদ, সবেবরাত, সবেমিরাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড়ো উৎসব হল বড়োদিন। এ ছাড়া, বৌদ্ধগণ বুদ্ধপূর্ণিমা, জৈনগণ পরেশনাথের জন্মদিন এবং বৈয়বগণ চৈতন্যদেবের আবির্ভাব তিথি সাড়ম্বরে পালন করেন।
অতীতে বাঙালির উৎসবের মধ্যে হয়তো বর্তমানের মতো জাঁকজমক বা আড়ম্বরের প্রাধান্য ছিল না, কিন্তু ছিল প্রাণের স্পন্দন, সেখানে ছিল না অর্থকৌলিন্যের প্রকাশের রেষারেষি। সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় উৎসব প্রাঙ্গণ হয়ে উঠত মধুময়। তাই সেদিন একের উৎসব সহৃদয়তার গুণে আপামর সকলের উৎসবে পরিণত হত। এখন যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে সামাজিক অবস্থারও; মানুষের মনুষ্যত্ব ও মানসিকতায় এসেছে পরিবর্তন। তাই উৎসবের রূপ, মেজাজ ও উপস্থাপনায় ঘটেছে আমূল পরিবর্তন। উৎসব হয়েছে হুজুগপ্রিয়, জাঁকজমক ও আড়ম্বরে পরিপূর্ণ। অভাব ঘটেছে উৎসবের আন্তরিকতা ও ঐকান্তিকতায়। মানুষের অন্তরের শুভ আকুতি গেছে হারিয়ে। পারস্পরিক জাঁকজমক প্রকাশের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়ে সার্বজনীন পূজা-উৎসবে বেড়েছে চাঁদার দৌরাত্ম। এখন বহুক্ষেত্রে উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যবিত্তের অন্তরে আতঙ্কস্বরূপ নিতান্ত স্থানীয় পরিবেশে, লৌকিক প্রয়োজনে বাংলার নিজস্ব উৎসবগুলির সৃষ্টি। চড়ক পুজো, গাজন উৎসব, শীতলা, সত্যনারায়ণ প্রভৃতি পুজো বাংলার লৌকিক সংস্কৃতির অঙ্গ।
পরিশেষে বলতে হয়, উৎসব হল আনন্দের উৎসধারা। উৎসবে ধনী-নির্ধন, উচ্চ-নীচ সকলে একসঙ্গে মিলিত হয়। মানুষের মিলনের কেন্দ্ররূপে উৎসবের গুরুত্ব বজায় রাখা আমাদের কর্তব্য। মানুষে মানুষে যে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-উচ্চ-নীচ ভেদ দেখা যায়, উৎসব সেইসব ভেদরেখা দূর করে মানুষকে মহামিলনের ঐক্যকেন্দ্রে এক হতে জানায় আহ্বান। এখানেই সামাজিক উৎসবগুলির প্রধান তাৎপর্য।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে প্রদান করা অন্যান্য প্রবন্ধ রচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক নোট দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
শিক্ষালয় ইউটিউব চ্যানেলটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
শিক্ষালয়ের সাথে ফেসবুকে যুক্ত হতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবেঃ