দশম শ্রেণি বাংলাঃ অভিষেক
অভিষেক- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
কনক-আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী
ইন্দ্রজিৎ, প্রণমিয়া ধাত্রীর চরণে,
কহিলা,— “কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি
এ ভবনে? কহ দাসে লঙ্কার কুশল।”
শিরঃ চুম্বি, ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা
উত্তরিলা;— “হায়! পুত্র, কি আর কহিব
কনক-লঙ্কার দশা! ঘোরতর রণে,
হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী!
তার শোকে মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি,
সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।”
জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;—
“কি কহিলা, ভগবতি? কে বধিল কবে
প্রিয়ানুজে? নিশা-রণে সংহারিনু আমি
রঘুবরে; খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিনু
বরষি প্রচণ্ড শর বৈরিদলে; তবে
এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা, জননি,
কোথায় পাইলে তুমি, শীঘ্র কহ দাসে।”
রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী
উত্তরিলা;— “হায়! পুত্র, মায়াবী মানব
সীতাপতি; তব শরে মরিয়া বাঁচিল।
যাও তুমি ত্বরা করি; রক্ষ রক্ষঃকুল-
মান, এ কালসমরে, রক্ষঃ-চূড়ামণি!”
ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী
মেঘনাদ; ফেলাইলা কনক-বলয়
দূরে; পদ-তলে পড়ি শোভিল কুণ্ডল,
যথা অশোকের ফুল অশোকের তলে
আভাময়! “ধিক্ মোরে” কহিলা গম্ভীরে
কুমার, “হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে
স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে?
এই কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ
আমি ইন্দ্রজিৎ, আন রথ ত্বরা করি;
ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।”
সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে
হৈমবতীসুত যথা নাশিতে তারকে
মহাসুর; কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী
কিরীটি, বিরাটপুত্র সহ, উদ্ধারিতে
গোধন, সাজিলা শূর, শমীবৃক্ষমূলে।
মেঘবর্ণ রথ; চক্র বিজলীর ছটা;
ধ্বজ ইন্দ্রচাপরূপী; তুরঙ্গম বেগে
আশুগতি। রথে চড়ে বীর-চূড়ামণি
বীরদর্পে, হেন কালে প্রমীলা সুন্দরী,
ধরি পতি-কর-যুগ (হায় রে, যেমতি
হেমলতা আলিঙ্গয়ে তরু-কুলেশ্বরে)
কহিলা কাঁদিয়া ধনী; “কোথা প্রাণসখে,
রাখি এ দাসীরে, কহ, চলিলা আপনি?
কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে
এ অভাগী? হায়, নাথ, গহন কাননে,
ব্রততী বাঁধিলে সাধে করি-পদ, যদি
তার রঙ্গরসে মনঃ না দিয়া, মাতঙ্গ
যায় চলি, তবু তারে রাখে পদাশ্রমে
যূথনাথ। তবে কেন তুমি, গুণনিধি,
ত্যজ কিঙ্করীরে আজি?” হাসি উত্তরিলা
মেঘনাদ, “ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি, সতি,
বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে
সে বাঁধে? ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া
কল্যাণি, সমরে নাশি তোমার কল্যাণে
রাঘবে। বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখি।”
উঠিলা পবন-পথে, ঘোরতর রবে,
রথবর, হৈমপাখা বিস্তারিয়া যেন
উড়িলা মৈনাক-শৈল, অম্বর উজলি!
শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে, টঙ্কারিলা ধনুঃ
বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে
ভৈরবে। কাঁপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি!
সাজিছে রাবণরাজা, বীরমদে মাতি;—
বাজিছে রণ-বাজনা; গরজিছে গজ;
হেষে অশ্ব; হুঙ্কারিছে পদাতিক, রথী;
উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ; উঠিছে আকাশে
কাঞ্চন-কঞ্চুক-বিভা। হেন কালে তথা
দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী।
নাদিলা কর্বূরদল হেরি বীরবরে
মহাগর্বে। নমি পুত্র পিতার চরণে,
করজোড়ে কহিলা;— “হে রক্ষঃ-কুল-পতি,
শুনেছি, মরিয়া নাকি বাঁচিয়াছে পুনঃ
রাঘব? এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!
কিন্তু অনুমতি দেহ; সমূলে নির্মূল
করিব পামরে আজি! ঘোর শরানলে
করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে;
নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।”
আলিঙ্গি কুমারে, চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে
উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি;
“রাক্ষস-কুল-শেখর তুমি, বৎস; তুমি
রাক্ষস-কুল-ভরসা। এ কাল সমরে,
নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা
বারংবার। হায়, বিধি বাম মম প্রতি।
কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে,
কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?”
উত্তরিলা বীরদর্পে অসুরারি-রিপু;—
“কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি,
রাজেন্দ্র? থাকিতে দাস, যদি যাও রণে
তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।
হাসিবে মেঘবাহন; রুষিবেন দেব
অগ্নি। দুই বার আমি হারানু রাঘবে;
আর এক বার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;
দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে!”
কহিলা রাক্ষসপতি;— “কুম্ভকর্ণ বলী
ভাই মম,— তায় আমি জাগানু অকালে
ভয়ে; হায়, দেহ তার, দেখ, সিন্ধু-তীরে
ভূপতিত, গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা
বজ্রাঘাতে! তবে যদি একান্ত সমরে
ইচ্ছা তব, বৎস, আগে পূজ ইষ্টদেবে,—
নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর, বীরমণি!
সেনাপতি-পদে আমি বরিণু তোমারে।
দেখ, অস্তাচলগামী দিননাথ এবে;
প্রভাতে যুঝিও, বৎস, রাঘবের সাথে।”
এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে
গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে।
দশম শ্রেণি বাংলা অভিষেক কবিতা থেকে শিক্ষালয়য় ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ কিছু MCQ, SAQ ও বড়ো প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নের উত্তরগুলি সমাধান করলে আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা লাভ করবে। শিক্ষার্থীদের সহায়তায় শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে নিয়মিত বিবিধ নোট, মক টেষ্ট, প্রশ্ন প্রভৃতি প্রদান করা হয়। শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে ডাউনলোড করো শিক্ষালয় অ্যাপ বা পেজের নীচের অংশে প্রদান করা NewsLetter বিভাগে নিজের নাম নথিভুক্ত করো।
অভিষেক কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ MCQ প্রশ্নের উত্তরঃ
১) ‘কনক’ শব্দের অর্থ- সোনা
২) ‘বীরেন্দ্রকেশরী’ বলা হয়েছে- মেঘনাদকে
৩) মেঘনাদের ধাত্রীমাতা হলেন- প্রভাষা
৪) ধাত্রীর ছদ্মবেশে মেঘনাদের কাছে এসেছিলেন- লক্ষ্মী
৫) ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কথার অর্থ- সমুদ্রকন্যা
৬) ‘অম্বুরাশি-সুতা’ বলে বোঝানো হয়েছে- লক্ষ্মীকে
৭) ‘ভগবতি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে- লক্ষ্মীকে
৮) ‘অদ্ভুত বারতা’ হল- বীরবাহুর মৃত্যু
৯) ‘রত্নাকর’ শব্দের অর্থ- সমুদ্র
১০) ‘মায়াবী মানব’ হলেন- রামচন্দ্র
১১) ছিড়িলা ________ রোষে মহাবলী- কুসুমদাম
১২) মেঘনাদের পদতলে পড়ে শোভা পেয়েছিল- কুন্ডল
১৩) ‘বৈরিদল’ শব্দের অর্থ- শত্রুদল
১৪) ‘ঘুচাব ও অপবাদ, বধি _______- রিপুকুলে
১৫) ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ শব্দের অর্থ- শ্রেষ্ঠ রথী
১৬) ‘হৈমবতিসুত’ হলেন- কার্তিক
১৭) ‘হৈমবতিসুত’ বধ করেছিলেন- তারকাসুরকে
১৮) ‘কিরীটি’ বলা হয়েছে- অর্জুনকে
১৯) বিরাটপুত্রসহ কিরীটি কী উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন- গোধন
২০) মেঘনাদের রথ ছিল- মেঘবর্ণ
২১) মেঘনাদের রহচক্রে ছিল- বিজলির ছটা
২২) ইন্দ্রজিতের স্ত্রীর নাম- প্রমীলা
২৩) ‘ব্রততী’ শব্দের অর্থ- লতা
২৪) ‘মাতঙ্গ’ শব্দের অর্থ- হাতি
২৫) ‘কিঙ্করী’ শব্দের অর্থ- দাসী
২৬) ‘বিধুমুখী’ বলা হয়েছে- প্রমীলাকে
২৭) ‘শিঞ্জিনী’ শব্দের অর্থ- ধনুকের ছিলা
২৮) ‘টঙ্কার’ হল- ধনুকের ছিলার শব্দ
২৯) ‘পক্ষীন্দ্র’ হল- গরুড়
৩০) ‘কৌশিক ধ্বজ’ শব্দের অর্থ- রেশমি পতাকা
৩১) ‘কর্বুরদল’ হল- রাক্ষসদল
৩২) মেঘবাহন হলেন- ইন্দ্র
৩৩) ‘রুষিবেন দেব ______’ – অগ্নি
৩৪) ইষ্টদেবকে পূজা করার কথা বলা হয়েছে- নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে
৩৫) ‘গঙ্গোদক’ শব্দের অর্থ- গঙ্গাজল
অভিষেক কবিতা থেকে MCQ প্রশ্নের মক টেষ্ট প্রদান করতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
অভিষেক কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ SAQ প্রশ্নের উত্তরঃ
১) “প্রণমিয়া ধাত্রীর চরণে”- ইন্দ্রজিৎ কী বলেছিল?
উত্তরঃ ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার কুশল জিজ্ঞাসা করে ধাত্রীর আগমণের কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন।
২) “ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা উত্তরিলা” – “অম্বুরাশি-সুতা’-কে এবং কেন তার এমন নাম?
উত্তরঃ ‘অম্বুরাশি’ শব্দের অর্থ জলসমূহ, ‘সুতা’ শব্দের অর্থ কন্যা। সমুদ্রমন্থনের সময় লক্ষ্মীর উত্থান হয়েছিল বলে তাকে ‘অম্বুরাশি-সুতা’ বলা হয়েছে।
৩) “সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।”-কে সসৈন্যে সাজেন?
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙকিটি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক পদ্যাংশ থেকে গৃহীত প্রিয় পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে লঙ্কেশ্বর রাবণ সৈন্যদলসহ যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন।
৪) “জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;”—এই বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?
উত্তরঃ রামচন্দ্রকে খন্ড খন্ড করে কেটে ফেলার পরে কে বীরবাহুকে হত্যা করল তা ভেবেই ইন্দ্রজিৎ বিস্মিত হয়েছেন।
৫) “এ অদ্ভুত বারতা”—কোন বারতার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক পদ্যাংশ থেকে গৃহীত অংশে বীরচূড়ামণি বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদের কথা বলা হয়েছে।
৬) “রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী উত্তরিলা”—‘ইন্দিরা সুন্দরী কে?
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। লক্ষ্মীর অপর নাম ইন্দিরা। প্রশ্নোক্ত অংশে লক্ষ্মীকেই ইন্দিরা সুন্দরী বলা হয়েছে।
৭) “যাও তুমি ত্বরা করি”- এই শীঘ্র যাওয়ার প্রয়োজন কী?
উত্তরঃ ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটিতে রাক্ষসকুলের মান রক্ষা করার জন্যই মেঘনাদের শীঘ্র যাওয়ার প্রয়োজন বলে দেবী লক্ষ্মী মন্তব্য করেছেন।
৮) “পদতলে পড়ি, শোভিল কুণ্ডল।” ‘কুণ্ডল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙক্তিটি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক পদ্যাংশ থেকে গৃহীতাকুণ্ডল’ শব্দের অর্থ কর্ণভূষণ অর্থাৎ কানের অলংকার।
৯) “হা ধিক মোরে!”—ইন্দ্রজিৎ কেন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলো?
উত্তরঃ শত্রুসৈন্য যখন লঙ্কাকে ঘিরে ফেলেছে তখন তিনি প্রমোদকাননে সময় কাটাচ্ছেন, এই ভেবেই ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিল।
১০) “বৈরিদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা”- কাদের বৈরি দল বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক পদ্যাংশ থেকে গৃহীত অংশে এখানে রামচন্দ্র ও তার সৈন্যবাহিনীকে বৈরিল বলা হয়েছে।
১১) “হৈমবতীসূত যথা…”- কীসের কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে দেবসেনাপতি কার্তিকের তারকা বধের কথা এখানে বলা হয়েছে।
১২) “কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী কিরীটি”—‘বৃহন্নলারুপী কিরীটি’ কাকে বলা হয়েছে?
উত্তরঃ উদ্ভূত পঙক্তিটি ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ রচিত ‘অভিষেক পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। মহাভারতের অর্জুন চরিত্রটি হলেন বৃহন্নলারূপী কিরীটি।
১৩) ‘ছদ্মবেশি অম্বুরাশি-সুতা’- ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল?
উত্তরঃ ‘অম্বুরাশি-সুতা’ অর্থাৎ দেবী লক্ষী মেঘনাদের ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল।
১৪) ‘মায়াবী মানব/সীতাপতি’ – সীতাপতিকে ‘মায়াবী মানব’ কেন বলা হয়েছে?
উত্তরঃ সীতাপতি রামচন্দ্র মরে গিয়েও পুনরায় বেঁচে উঠেছিল বলে তাকে ‘মায়াবী মানব’ বলা হয়েছে।
১৫) ‘ধরি পতি-কর-যুগ’- পতির কর-যুগল ধরে কী বলেছিল?
উত্তরঃ পতির কর-যুগল ধরে প্রমীলা জানতে চেয়েছিলেন যে, কেনো তাকে রেখে তার প্রাণসখা কোথায় চলে যাচ্ছেন।
১৬) ‘বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী।’ – কেন এই অনুনয়?
উত্তরঃ মেঘনাদ রাঘবকে বধ করার জন্য লঙ্কায় ফিরে যাচ্ছিল। সেইজন্য তার প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমীলার কাছে অনুনয়সহ বিদায় চেয়েছিল।
১৭) ‘এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!’ – কোন্ মায়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ রামচন্দ্র মরে গিয়েও আবার বেঁচে উঠেছিলেন। আলোচ্য অংশে এই মায়ার কথাই বলা হয়েছে।
১৮) ‘হায়, বিধি বাম মম প্রতি’ – কেন এই উক্তি?
উত্তরঃ মহাপরাক্রমী রাবণকে সামান্য বনচারী রামের কাছে কার্যত হার স্বীকার করতে হয়েছে। এইজন্য বক্তা অর্থাৎ রাবণের মনে হয়েছে যে বিধাতা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
১৯) ‘এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।’ – কোন্ কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ পুত্র মেঘনাদের বর্তমানে পিতা রাবণ যুদ্ধ করতে গেলে তা মেঘনাদের কাছে কলঙ্কের মতো।
২০) ‘তায় আমি জাগানু অকালে’- এর ফল কী হয়েছিল?
উত্তরঃ অকালে জাগানোয় কুম্ভকর্ণ বলী রাঘবের হাতে পরাস্ত ও নিহত হয়েছেন এবং তার দেহ সমুদ্রতীরে ভূপতিত রয়েছে।
২১) ‘আগে পূজ ইষ্টদেবে’ – কেন ইষ্টদেবকে আগে পূজা করতে বলা হয়েছে?
উত্তরঃ যুদ্ধযাত্রার আগে ইষ্টদেবের আশীর্বাদ নিতে হয়। তাই পিতা রাবণ পুত্র মেঘনাদকে ইষ্টদেবকে আগে পূজা করতে বলা হয়েছে।
২২) ‘অভিষেক করিলা কুমারে’ – কুমারকে কী দিয়ে অভিষিক্ত করা হয়েছিল?
উত্তরঃ বিধি অনুসারে গঙ্গাজল দিয়ে কুমারকে অর্থাৎ মেঘনাদকে অভিষিক্ত করা হয়েছিল।
বাংলা ব্যাকরণের বিবিধ আলোচনা দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
অভিষেক কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড়ো প্রশ্নের উত্তরঃ
১) “ঘুচাবো এ অপবাদ, বধি রিপুকূলে”- উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে? বক্তা তাঁর কোন অপবাদের কথা বলেছেন? অপবাদ ঘোচাবার জন্য তিনি কী করেছিলেন?
উৎসঃ
বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য কবি “মাইকেল মধুসূদন দত্ত” রচিত “মেঘনাদবধকাব্য”-এর অন্তর্গত “অভিষেক” কাব্যাংশ থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে।
বক্তাঃ
উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন রাক্ষসাধিপতি রাবণপুত্র মেঘনাদ অর্থাৎ ইন্দ্রজিৎ।
অপবাদের পরিচয়ঃ
রামচন্দ্রের সঙ্গে লঙ্কার ঘোরতর যুদ্ধে লঙ্কার মহারথীদের মৃত্যু ঘটে। এই যুদ্ধে রাবণের আর এক বীর পুত্র বীরবাহুর মৃত্যু ঘটে। ঘোরতর সংগ্রামে রাবণের আর এক ভাই কুম্ভকর্ণকেও মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। এই মৃত্যু মিছিল যেনো লঙ্কাধিপতি রাবণকে মহাশোকী করে তোলে। মহাশোকে রাবণ নিজেই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে উদ্যত হন-
“সাজিছে রাবণরাজা, বীরমদে মাতি;-”
লঙ্কার এই বিপদের সময় রাবনের শ্রেষ্ঠপুত্র বীরেন্দ্র-কেশরী ইন্দ্রজিৎ প্রমোদ কাননে পত্নী প্রমীলা ও তার সখীদের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করছিলেন। এই দুর্দিনে তাঁর পিতার পাশে থাকার কর্তব্য তিনি বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকার কারণে পালনে সক্ষম হন নি। আর এই ঘটনাই মেঘনাদের কাছে অপবাদের বিষয়।
অপবাদ ঘোচানোর প্রচেষ্টাঃ
ধাত্রীমাতা প্রভাষার মুখে জন্মভূমি স্বর্ণলঙ্কার দুর্দশার কথা শুনে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ চমকিত ও বিস্মিত হন। ক্ষিপ্ত ইন্দ্রিজিৎ তাঁর শরীর থেকে সমস্ত আভরণ, কনকবলয়, কুণ্ডল, ফুলমালা সবই দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেন-
“ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী
মেঘনাদ; ফেলাইলা কনক-বলয়
দূরে;”
এরপর ইন্দ্রিজিৎ দ্রুত লঙ্কায় যাওয়ার জন্য রথ আনার নির্দেশ প্রদান করেন। কুমার কার্তিকেয় তারকাসুরকে বধ করার জন্য যেমন নিজেকে রণসাজে সজ্জিত করেছিলেন, ঠিক তেমনই ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধ যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন-
“সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে
হৈমবতীসুত যথা নাশিতে তারকে
মহাসুর;”
ইন্দ্রজিতের রণসজ্জা বৃহন্নলারূপী অর্জুন বিরাটপুত্রসহ গোধন উদ্ধার করতে যাবার সাজের সঙ্গেও তুলনীয়। রণসাজে সজ্জিত হয়ে ইন্দ্রজিৎ দ্রুত লঙ্কায় প্রবেশ করেন। পিতা লঙ্কেশ্বরের রাবণের কাছে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন এবং প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন-
“সমূলে নির্মূল
করিব পামরে আজি!”
বক্তা ইন্দ্রিজিৎ তার অপবাদ ঘোচানোর জন্য বীর দর্পে বলীয়ান হয়ে যুদ্ধ যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
“এ অদ্ভুত বারতা জননী কোথায় পাইলে তুমি”- কোন বার্তাকে অদ্ভুত বলা হয়েছে? বার্তাটি অদ্ভুত কেনো? ১+৪
উত্তরটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
“বিদায় এবে দেহ বিধুমুখী”- ‘বিধুমুখী’ শব্দের অর্থ কী? এখানে কাকে ‘বিধুমুখী’ বলা হয়েছে? বক্তার বিদায় চাওয়ার পূর্বের কথোপকথন সংক্ষেপে লেখো। ১+১+৩
“নমি পুত্র পিতার চরণে”- পিতা-পুত্রের পরিচয় দাও। পাঠ্যাংশে পিতা ও পুত্রের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখো। ১+৪
অভিষেক কাব্যাংশ অবলম্বনে ইন্দ্রজিৎ চরিত্র আলোচনা করো। ৫
অভিষেক কাব্যাংশ অবলম্বনে রাবণ চরিত্র আলোচনা করো। ৫
উত্তরটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে