ভাত গল্প অবলম্বনে বড়ো পিসির চরিত্র

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে ভাত গল্প অবলম্বনে বড়ো পিসির চরিত্র নোটটি প্রদান করা হলো। 

১) ‘ভাত’ গল্প অবলম্বনে বড়ো পিসির চরিত্র বিশ্লেষণ করো।   ৫ 

উৎসঃ

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য লেখিকা “মহাশ্বেতা দেবী” রচিত “ভাত” ছোটগল্পটি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে “ম্যানিফেস্টো” পত্রিকায় সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে গল্পটি তাঁর “শ্রেষ্ঠ গল্প” নামক গল্প সংকলন গ্রন্থে স্থান লাভ করেছিল।

চরিত্র আলোচনাঃ

ছোটগল্পের মধ্য দিয়ে একজন ছোটগল্পকার বিন্দুতে যেন সিন্ধু দর্শন করান। আর তার এই কর্মযজ্ঞে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তার চরিত্রেরা। আমাদের পাঠ্য “ভাত” গল্পটিও এই ধারার ব্যতিক্রম নয়।

গল্প ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমরা যেসকল চরিত্রের পরিচয় লাভ করি তাদের মধ্যে অন্যতম সহায়ক চরিত্রের মর্যাদা অর্জন করেছে বড়ো বাড়ীর প্রয়াত বুড়ো কর্তার প্রৌঢ়া অবিবাহিতা কন্যা বড়ো পিসিমা। তার চরিত্রের যেসকল বৈশিষ্ট্যাবলী পাঠক সমাজকে তার প্রতি আকর্ষিত করেছে সেগুলি ক্রমান্বয়ে আলোচিত হলো-

সংসারের প্রতি দায়বদ্ধঃ 

সাংসারিক দায়িত্ববোধ ছিল বড়ো পিসিমার প্রবল। তাই তিনি বিবাহ পর্যন্ত করেন নি। তার পরিবর্তে তিনি বাড়ির হেঁসেল দেখেছেন, ভারাটে বাড়িতে মিস্তিরি লাগিয়েছেন এনং তার পিতার সেবা যত্ন করেছেন।

ঈশ্বর বিশ্বাসীঃ

ঈশ্বরের প্রতি তার ছিল অগাধ ভক্তি। দেবাদিদেব মহাদেবকে তিনি পতিত্বে বরণ করে নিয়েছিলেন বলেই কখনো বিবাহ করেন নি বলে অনেকের বিশ্বাস। তিনি তার প্রাগাঢ় শিবভক্তি থেকে বলতে পেরেছিলেন, “উনি আমার পতি দেবতা। মানুষের সঙ্গে বিয়ে দিও না।”

কর্তৃত্ব পরায়ণাঃ  

দাপটের সাথে বড়ো পিসিমা তার সংসারকে সামলে রেখেছেন। তার পিতার মৃত্যুর পর তার দাদার সংসারকেও তিনি পরম মমতা ও কর্তৃত্বের সাথে আগলে রেখেছেন। তাই বাড়িতে তিন বউ থাকলেও তার কথাতেই উচ্ছব বড়ো বাড়িতে কাজ পেয়েছে। দাদার শ্মশানযাত্রা থেকে অশৌচ বাড়ির করণীয় কর্তব্য সবেতেই তার কড়া হাতের পরিচালনা আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি।

সতর্ক দৃষ্টির অধিকারিণীঃ  

দাদার হোমযজ্ঞের দেখাশোনা, কিম্বা বাসিনীর মাধ্যমে বাদার চাল গোপনে বিক্রি করে দেওয়া প্রভৃতি বিষয়ে তার সতর্ক ও বুদ্ধিদীপ্ত আচরণের পরিচয় আমরা লাভ করি। এমনকি বড়ো বউয়ের সাথে বার্তালাপেও আমরা তার পরিচয় পাই- “তোমার শ্বশুরই মরতে বসেছে বাছা। সে জন্যেই হোম-যজ্ঞি হচ্ছে।”

কুসংস্কারাচ্ছন্নঃ

প্রাচীন ধ্যান ধারণার বশবর্তী বড়ো পিসিমা তার দাদার দীর্ঘায়ু কামনা করে ছোট বউয়ের বাবার আনা তান্ত্রিকের উপর ভরসা করে বাড়িতে হোম-যজ্ঞের আয়োজন করেছেন। আবার তার দাদার মৃত্যুর পরে ছোট বেয়াইকে দোষারোপ করতেও কুন্ঠিত হন নি- “তোমার ছোট বেয়াই কি ডাকাতে সন্নেসী আনল গো দাদা।”

অতএব আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, বড়ো পিসিমা চরিত্রটি তার উপরিউক্ত চরিত্র বৈশিষ্ট্যগুলি দ্বারা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

You cannot copy content of this page

Need Help?