শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ব্যাকরণের অন্তর্গত ব্যাঞ্জনসন্ধি ও তাঁর শ্রেণিবিভাগ আলোচনাটি প্রদান করা হলো।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
ব্যঞ্জনসন্ধিঃ
♣ ব্যঞ্জনসন্ধি কাকে বলে?
Ans: স্বরে ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে স্বরে ও ব্যঞ্জনে ব্যঞ্জনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।
ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্রসমূহঃ
সূত্র ১: স্বর + ছ্ = ছ্>চ্ছ্ স্বরধ্বনির সাথে ছ্ যুক্ত হলে ছ্ থেকে চ্ছ্ হয় অর্থাৎ, একটি চ্-এর আগম ঘটে।
যেমন:
তরু+ছায়া = তরুচ্ছায়া(উ+ছ্)
পরি+ছেদ = পরিচ্ছেদ(ই+ছ্)
উপ+ছায়া = উপচ্ছায়া(অ+ছ্)
পূর্ণ+ছেদ = পূর্ণচ্ছেদ
নদী+ছবি = নদীচ্ছবি
প্র+ছায়া = প্রচ্ছায়া
আ+ছাদন = আচ্ছাদন
মতি+ছন্ন = মতিচ্ছন্ন
মুখ+ছবি = মুখচ্ছবি
রবি+ছবি = রবিচ্ছবি
আলোক+ছটা = আলোকচ্ছটা
সূত্র ২:
ত্/দ্ + চ্/ছ্ = ত্/দ্ > চ্ ত্ বা দ্-এর সাথে চ্ বা ছ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ চ্-এ রূপান্তরিত হয়। এখানে আসলে সমীভবন হয়।
যেমন:
উৎ+চারণ = উচ্চারণ
বিপদ্+চিন্তা = বিপচ্চিন্তা
উৎ+ছেদ = উচ্ছেদ
সূত্র ৩:
ত্/দ্ + জ্/ঝ্ = ত্/দ্ > জ্ ত্ বা দ্-এর সাথে জ্ বা ঝ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ পরিবর্তিত হয়ে জ্ হয়। এটিও সমীভবন।
যেমন:
বিপদ্+জাল = বিপজ্জাল
বিপদ্+জনক = বিপজ্জনক
মহৎ+ঝঞ্ঝা = মহজ্ঝঞ্ঝা
তৎ+জন্য = তজ্জন্য
কুৎ+ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা
সূত্র ৪:
ত্/দ্ + শ্ = ত্/দ্ > চ্ এবং শ্>ছ ত্ বা দ্-এর সাথে শ্ যুক্ত হলে ত্/দ্ স্থানে চ্ এবং শ্ স্থানে ছ্ হয়। এটিও একধরনের সমীভবন।
যেমন:
উৎ+শ্বাস = উচ্ছ্বাস
উৎ+শ্বসিত = উচ্ছ্বসিত
মৃৎ+শকটিকা = মৃচ্ছকটিকা
সূত্র ৫:
ত্/দ্ + হ্ = ত্/দ্ > দ্ এবং হ্>ধ্ ত্ বা দ্-এর সাথে হ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ স্থানে দ্ হয় এবং হ্ স্থানে ধ্ হয়।
যেমন:
উৎ+হার = উদ্ধার
তদ্+হিত = তদ্ধিত
সূত্র ৬:
চ-বর্গ + ন্ = ন্>ঞ্
যেমন:
যাচ্+না = যাচ্ঞা
রাজ্+নী = রাজ্ঞী
যজ্+ন = যজ্ঞ
সূত্র ৭:
ত্/দ্ + ট্/ঠ্ = ত্/দ্ > ট্ ত্ বা দ্-এর সাথে ট্ বা ঠ্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ বদলে গিয়ে ট্ হয়।
যেমন:
তদ্+টীকা = তট্টীকা
সূত্র ৮:
ত্/দ্ + ড্/ঢ্ = ত্/দ্ > ড্
যেমন:
উৎ+ডীন = উড্ডীন
সূত্র ৯:
ষ্ + ত্/থ্ = ত্>ট্ এবং থ্>ঠ্ ষ্-এর সাথে ত্ বা থ্ যুক্ত হলে ত্ থেকে হয় ট্ এবং থ্ থেকে হয় ঠ্। যেমন:
বৃষ্+তি = বৃষ্টি
ষষ্+থ্ = ষষ্ঠ
সূত্র ১০:
ত্/দ্ + ল্ = ত্/দ্ > ল্ ত্ বা দ্-এর সাথে ল্ যুক্ত হলে ত্ বা দ্ পরিবর্তিত হয়ে ল্ হয়।
যেমন:
উৎ+লেখ = উল্লেখ
উৎ+লিখিত = উল্লিখিত
বৃহৎ+ললাট = বৃহল্ললাট
বিদ্যুৎ+লেখা = বিদ্যুল্লেখা
সূত্র ১১:
ন্ + শ্/স্/হ্ = ন্>অনুস্বার(ং) ন্-এর সাথে শ্,স্ বা হ্ যুক্ত হলে ন্ স্থানে অনুস্বার হয়।
যেমন:
দন্+শন = দংশন
জিঘান্+সা = জিঘাংসা
মীমান্+সা = মীমাংসা
বৃণ্+হতি = বৃংহতি
সূত্র ১২:
ম্+ত্ = ম্>ন্ ম্-এর সাথে ত্ যুক্ত হলে ম্-স্থানে ন্ হয়।
যেমন:
গম্+তব্য = গন্তব্য
নিয়ম্+তা = নিয়ন্তা
শাম্+ত = শান্ত
সূত্র ১৩:
ম্+স্পর্শধ্বনি = ম্> অনুস্বার অথবা বর্গের শেষ ধ্বনি ম্-এর সাথে যে কোনো স্পর্শধ্বনি যুক্ত হলে ম্-স্থানে অনুস্বার অথবা ঐ স্পর্শব্যঞ্জনের বর্গের শেষ ধ্বনি হয়।
যেমন:
কিম্+কর্তব্য = কিংকর্তব্য
কিম্+কর = কিংকর
শম্+কর = শংকর
সূত্র ১৪:
উৎ + স্থা/স্তম্ভ্ = স লোপ উৎ উপসর্গের সাথে স্থা বা স্তম্ভ্ ধাতু-জাত শব্দ যুক্ত হলে স্ লোপ পায়।
যেমন:
উৎ+স্থান = উত্থান
উৎ+স্তম্ভ = উত্তম্ভ
উৎ+স্থাপন = উত্থাপন
উৎ+স্থিত = উত্থিত
সূত্র ১৫:
ক্,চ্,ট্,প্ + স্বর/ঘোষ ব্যঞ্জন/য্,র্,ল্,ব্,হ্ = ক্,চ্,ট্,প্ > বর্গের তৃতীয় ব্যঞ্জন ক্,চ্,ট্ বা প্-এর সাথে স্বরধ্বনি অথবা ঘোষধ্বনি অথবা য্,র্,ল্,ব্,হ্ যুক্ত হলে ক্,চ্,ট্,প্ স্থানে নিজ নিজ বর্গের তৃতীয় ব্যঞ্জন হয়। অর্থাৎ ক>গ, চ>জ, ট>ড, প>ব হবে।
যেমন:
ণিচ্+অন্ত = ণিজন্ত
অচ্+ অন্ত = অজন্ত
বাক্+আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর
দিক্+গজ = দিগ্গজ
সুপ্+অন্ত = সুবন্ত
প্রাক্+জ্যোতিষ = প্রাগ্জ্যোতিষ
বাক্+দত্তা = বাগ্দত্তা
সূত্র ১৬:
ত্ + স্বর/গ্, ঘ্, দ্, ধ্, ব্, ভ্/য্, র্,ব = ত্>দ্ ত্-এর সাথে স্বরধ্বনি, গ্,ঘ্,দ্,ধ্,ব্,ভ্ অথবা য্,র্,ব্ যুক্ত হলে ত্-স্থানে দ্ হয়।
যেমন:
জগৎ+ঈশ্বর = জগদীশ্বর
উৎ+গত = উদ্গত
মহৎ+ভয় = মহদ্ভয়
বৃহৎ+রথ = বৃহদ্রথ
জগৎ+বন্ধু = জগদ্বন্ধু
জগৎ+ধাত্রী = জগদ্ধাত্রী
সূত্র ১৭:
বর্গের প্রথম ব্যঞ্জন + ন্/ম্ = প্রথম ব্যঞ্জন > পঞ্চম ব্যঞ্জন/তৃতীয় ব্যঞ্জন বর্গের প্রথম ব্যঞ্জনের সাথে ন্ বা ম্ যুক্ত হলে প্রথম ব্যঞ্জনের স্থানে পঞ্চম ব্যঞ্জন বা তৃতীয় ব্যঞ্জন হয়। (বাংলায় বর্তমানে পঞ্চম ব্যঞ্জনই প্রচলিত।)
যেমন:
দিক্+নাগ = দিঙ্নাগ / দিগ্নাগ (দ্বিতীয়টি বাংলায় অপ্রচলিত)
জগৎ+নাথ = জগন্নাথ / জগদ্নাথ (জগদ্নাথ অপ্রচলিত)
যাচ্+না = যাচ্ঞা
সূত্র ১৮:
বর্গের প্রথম ব্যঞ্জন + মাত্র/ময় = প্রথম ব্যঞ্জন> পঞ্চম ব্যঞ্জন বর্গের প্রথম ব্যঞ্জনের সাথে মাত্র বা ময় যুক্ত হলে প্রথম ব্যঞ্জনের স্থানে পঞ্চম ব্যঞ্জন হয়।
যেমন:
কিঞ্চিৎ+মাত্র = কিঞ্চিন্মাত্র (ৎ মানে ত্)
বাক্+ময় = বাঙ্ময়
চিৎ+ময় = চিন্ময়
অপ্+ময় = অম্ময়
সূত্র ১৯:
বর্গের ২য়, ৩য়, ৪র্থ ব্যঞ্জন + বর্গের ১ম,২য় ব্যঞ্জন / শ্,ষ্,স্ = ২য়,৩য়,৪র্থ ব্যঞ্জন > ১ম ব্যঞ্জন বর্গের ২য়, ৩য়, ৪র্থ ব্যঞ্জনের সাথে বর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় ব্যঞ্জন অথবা শিস ধ্বনি যুক্ত হলে ২য়,৩য়,৪র্থ ব্যঞ্জনের স্থানে প্রথম ব্যঞ্জন হয়।
যেমন:
বিপদ্+কাল = বিপৎকাল
ক্ষুধ্+পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা
ক্ষুধ্+কাতর = ক্ষুৎকাতর
সূত্র ২০:
সম্ + √কৃ ধাতুজাত শব্দ = স্-এর আগম ও ম্> অনুস্বার সম্ উপসর্গের সাথে কৃ-ধাতুজাত শব্দ যুক্ত হলে ম্ হয় অনুস্বার এবং একটি স্-এর আগম ঘটে।
যেমন:
সম্+কার = সংস্কার
সম্+কৃত = সংস্কৃত
সম্+করণ = সংস্করণ
সম্+কৃতি = সংস্কৃতি
সূত্র ২১:
পুম্ + বর্গের প্রথম/দ্বিতীয় ব্যঞ্জন = ম্ > অনুস্বার এবং শ্ বা স্ আগম পুম্ শব্দের সাথে বর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় ব্যঞ্জন যুক্ত হলে ম্ হয় অনুস্বার এবং শ্ বা স্-এর আগম ঘটে।
যেমন:
পুম্+কোকিল = পুংস্কোকিল
পুম+চাতক = পুংশ্চাতক
পুম্+চকোর = পুংশ্চকোর
পুম্+চালিত = পুংশ্চালিত
ব্যঞ্জন-সন্ধির ব্যতিক্রম:
কতকগুলি ব্যঞ্জনসন্ধি সূত্র অনুসারে হয় না। এই রূপ সন্ধিকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলা হয়। নিচের সন্ধিগুলি নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধির উদাহরণ-
হরি+চন্দ্র = হরিশ্চন্দ্র
পতৎ+অঞ্জলি = পতঞ্জলি
বন+পতি = বনস্পতি
তৎ+কর = তস্কর
দিব্+লোক = দ্যুলোক
আ+চর্য = আশ্চর্য
বৃহৎ+পতি = বৃহস্পতি
বাংলা ব্যাকরণের অন্যান্য আলোচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে