কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রবন্ধ রচনা

কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত প্রবন্ধ রচনা প্রদান করা হবে। আজকে আমরা আলোচনা করবো কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রবন্ধ রচনাটি সম্পর্কে। 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। 

কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রবন্ধ রচনাঃ  

ভূমিকাঃ

রবীন্দ্রনাথ প্রায় একশো বছর আগে লিখেছিলেন-

“নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার

কেন নাহি দিবে অধিকার

হে বিধাতা?”

—কবির এই প্রশ্নের উত্তর একবিংশ শতকের স্বাধীন ভারত তথা বাংলা আজও খুঁজে পেয়েছে কি? এখনও দেশের অধিকাংশ মেয়ে শিক্ষার মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অতি অল্প বয়সেই নিতান্ত সাংসারিক সামগ্রী হিসেবেই বিবেচিত হয়। এখনও কন্যাভ্রুণ হত্যা কিংবা বাল্যবিবাহের মতো নির্দয়তা সমাজে স্বীকৃত। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও এর ব্যতিক্রম ঘটে না। এখনও মেয়েদের এগিয়ে চলার পথ প্রতিবন্ধকতায় পূর্ণ। মাত্র কয়েক বছর আগেও পশ্চিমবঙ্গ বাল্যবিবাহে দেশের পঞ্চম স্থানে ছিল। বালিকাদের মধ্যে মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার হারও ছিল যথেষ্ট বেশি। এই প্রবণতা আটকাতে এবং মেয়েদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে রাজ্য সরকার চালু করে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প।

 

প্রকল্পের নিয়ম, উৎস ও বাস্তবতাঃ

কন্যাশ্রী প্রকল্প অনুসারে, যেসব পরিবারের বাৎসরিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম, সেই পরিবারের ১৩ থেকে ১৮ বছরের ছাত্রীরা বছরে ৫০০ টাকা করে (এখন বেড়ে হয়েছে ৭৫০ টাকা) বৃত্তি পাবে। যদিও অনাথ বা প্রতিবন্ধী ছাত্রীদের ক্ষেত্রে আয়ের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। শিক্ষার মূলস্রোতে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে গেলে এই ছাত্রীরা ১৮ বছর বয়সে পাবে এককালীন ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ কোনো মেয়ের উচ্চশিক্ষা লাভের লক্ষ্যপূরণের জন্য সরকার তার পাশে দাঁড়াবে। এই প্রকল্পের জন্য এখন রাজ্য সরকারের বছরে খরচ হচ্ছে ৮৫০ কোটি টাকা। আগামী বছরগুলিতে এই ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধির সম্ভাবনাই আরও বেশি। রাজ্যের প্রায় ২০ লক্ষ ছাত্রী এই সুবিধা পাচ্ছে। এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে সংখ্যাটা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা জরুরি, বছরে ৫০০ টাকা হয়তো খুব বিরাট অঙ্কের টাকা নয়, কিন্তু সেই টাকাটাও যে ছাত্রীর প্রাপ্য, তার জন্যই খরচ করা হচ্ছে কি না সেই ব্যাপারেও একটি সরকারি নজরদারি থাকা জরুরি। ১৮ বছরের কন্যাকেও যখন সরকার ২৫ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দেবে, সেখানেও এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে মেয়েদের শুধু অধিকার দিলেই হবে না, তা রক্ষা করা হচ্ছে কি না, সেটা দেখাও সরকারের দায়িত্ব। উল্লেখ্য নারীশিক্ষা ও নারীপ্রগতির স্বার্থে সরকার যখন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, তখন জনমানসে তার একটি সদর্থক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

 

উপসংহারঃ

‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প পৃথিবীর বহু জায়গায় একটি উন্নতমানের কল্যাণকামী প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারের খেয়াল রাখা উচিত তা যেন নজরদারির অভাবে ব্যর্থ না-হয় এবং অবশ্যই বার্ষিক ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণও আরও কিছুটা বাড়ালে ভালো হয়। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের ফলে সুফল কতটা ফলল, মাঝপথে স্কুলছুটের সংখ্যা কতটা কমল, বাল্যবিবাহ কতটা রোধ হল, তা বিচারের সময় এখনও আসেনি। তবে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে অনেকেই মনে করছেন, পরিবর্তন চোখে পড়ছে, কমছে স্কুলছুটের প্রবণতা। তাই এই প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে রূপায়িত হলে সুফল পাওয়া যাবে, সমাজের বিরাটসংখ্যক পিছিয়ে পড়া অংশের মেয়েরা অদূর ভবিষ্যতে নিজের ভাগ্য নিজেই নির্ধারণ করবার অধিকার অর্জন করবে; এমনটা আশা করাই যায়।

 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

শিক্ষালয়ের সাথে ফেসবুকে যুক্ত হতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবেঃ sikkhalaya

You cannot copy content of this page

Need Help?