আফ্রিকা কবিতার বড়ো প্রশ্নের উত্তর
আফ্রিকা কবিতার বড়ো প্রশ্নের উত্তর :
“বিদ্রুপ করছিলে ভীষণকে
বিরূপের ছদ্মবেশে।”
বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায় আফ্রিকা নিজেকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে নিয়েছে। দুর্গম এবং দুর্বোধ্য আফ্রিকাকে উপেক্ষা করেছে উন্নত বিশ্ব। তার পরিচয় থেকে গিয়েছে অন্ধকার মহাদেশ হিসেবেই-
“অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ
উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।”
পরবর্তীকালে আফ্রিকার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। আফ্রিকার বুকে আগমন ঘটেছে ‘মানুষ-ধরার দল”-এর। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের সাম্রাজ্যের বেড়াজাল বিস্তার করে তৈরি করেছে দাসব্যবস্থা।
সভ্যের বর্বর লোভ আফ্রিকায় তৈরি করেছে নির্লজ্জ অমানবিকতার এক কলঙ্কিত ইতিহাস। অসহায় সাধারণ মানুষের রক্ত আর চোখের জলে সিক্ত হয়েছে আফ্রিকার মাটি-
“পঙ্কিল হলো ধূলি তোমার রক্তে আর অশ্রুতে মিশে,”
অপরদিকে উন্নত দেশগুলিতে মানুষ শান্তিতে ঈশ্বরের আরাধনায় মেতে ছিল; তাদের মন্দিরে মন্দিরে বাজছিল পুজোর ঘন্টা। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুরক্ষিত ছিল তাদের মায়ের কোলে। কবির সংগীতে বেজে উঠছিল সুন্দরের আরাধনা।
দিনের অন্তিমকাল ঘোষণার সময় যখন সমাগত, তখন কবি যুগান্তরে কবি অর্থাৎ ঈশ্বরকে ‘মানহারা মানবী’ আফ্রিকার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে আহ্বান জানিয়েছেন-
“বলো ক্ষমা করো-
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে
সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।”
এভাবেই বিশ্বমানব-মৈত্রীর মধ্য দিয়ে আফ্রিকার এক নব উত্থানকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলোচ্য কবিতার মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন।
২) ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার যে দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো। ৫
উৎসঃ
বিশ্বকবি “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” রচিত “আফ্রিকা” কবিতাটি তাঁর “পত্রপুট” কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা।
কবিতা অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভাঃ
আলোচ্য কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকার প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর সাম্রাজ্যবাদের ভয়াবহ আঘাত সম্পর্কে তাঁর দরদী মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। কবিতাটিতে আফ্রিকার ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আক্রমণ, ধ্বংসলীলা এবং মনুষ্যত্বের অবক্ষয় প্রকাশিত হয়েছে-
“পঙ্কিল হলো ধূলি তোমার রক্তে আর অশ্রুতে মিশে,”
আফ্রিকার সংস্কৃতির ওপর শ্রদ্ধাশীল কবি শুধুমাত্র সেখানকার শোষণ-পীড়নের কথা তুলে ধরেননি; পরিবর্তে আফ্রিকা তাঁর কাছে বিশ্বমানবতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আর তাই ‘আফ্রিকা’ কবিতার প্রতিটি ছত্রে প্রকাশিত হয়েছে কবির মানবিকতার নিদর্শন এবং আধুনিক সমাজ সম্পর্কে তাঁর দর্শনভাবনা।
আফ্রিকার উদ্ভব, বিবর্তন ও বর্তমানের ছবি কবি গভীর মানবিকতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। ‘লোহার হাতকড়ি’, ‘মানুষ ধরার দল’, ‘সভ্যের বর্বর লোভ’, কিংবা ‘নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা’ ইত্যাদি শব্দবন্ধ ব্যবহার করে কবি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতি তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিজেদের দেশে ঈশ্বর ও সুন্দরের আরাধনা প্রসঙ্গে কবি তাদের দ্বিচারিতার কথাও তুলে ধরেছেন-
“সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়
মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা
সকালে সন্ধ্যায়, দয়াময় দেবতার নামে;
শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;
কবির সংগীতে বেজে উঠছিল
সুন্দরের আরাধনা।।”
পশ্চিমি দুনিয়া যখন ক্ষমতার গর্বে ও আগ্রাসনের নেশায় মত্ত; কবি তখন মানবতার ওপর আস্থা রেখে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার প্রতিই আস্থা প্রদর্শন করেছেন।
৩) ‘সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ – কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ২+৩
উৎসঃ
বিশ্বকবি “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” রচিত “আফ্রিকা” কবিতাটি তাঁর “পত্রপুট” কাব্যগ্রন্থের ১৬ সংখ্যক কবিতা।
প্রসঙ্গঃ
ইউরোপের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতার চাহিদাকে উপলব্ধি করে কবি আফ্রিকায় এক পালাবদলের সম্ভাবনা অনুমান করতে পেরেছিলেন। তাই কবি এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে যুগান্তের নবীন কবিকে আহ্বান করেছেন অপমানিত আফ্রিকার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য –
“এসো যুগান্তরের কবি,
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;”
আফ্রিকার এই অপমানের ইতিহাসকে মনে রেখে ‘যুগান্তের কবি’কে তিনি ক্ষমা চাইতে বলেছেন। হিংস্র প্রলাপের মধ্যে এই ক্ষমাপ্রার্থনার তাৎপর্য বোঝাতেই কবি মন্তব্যটি করেছেন।
উক্তিটির তাৎপর্যঃ
সভ্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির দ্বারা আফ্রিকা দীর্ঘকাল অত্যাচারিত হয়েছে। আফ্রিকার মানুষদের ক্রীতদাস হিসেবে বন্দি কয়ে নিরে যাওয়া হয়েছে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠিত হয়েছে। তাদের রক্তে আর অশ্রুতে মিশে তৈরি হয়েছে অপমানের ইতিহাস।
কিন্তু আফ্রিকায় এই লাঞ্ছনা সভ্যতারও অপমান। তাই অত্যাচার যখন নির্মম হয়ে উঠেছে-
“যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল-
অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল,”
সভ্যতার সেই বিপন্নতার সময়ে কবি ‘যুগান্তের কবি’-কে আহবান জানিয়েছেন। মনুষ্যত্বের প্রতীক হিসেবে তাঁকে দাঁড়াতে বলেছেন ‘মানহারা মানবী’ আফ্রিকার সামনে এবং তাকে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বলেছেন। কবির মতে সেটাই হবে হিংস্র প্রলাপের মধ্যে ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’। এই ক্ষমাপ্রার্থনার মধ্য দিয়ে অত্যাচারী শক্তির কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার সাথে সাথে বিবেকের জাগরণ ঘটিয়ে এক পরিশুদ্ধ মানবিক পৃথিবী প্রতিষ্ঠারও অঙ্গীকার করবে।
আফ্রিকা কবিতা থেকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ PDF প্রশ্নের উত্তর সাবস্ক্রাইবারদের জন্য নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
আফ্রিকা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দেখতে নিম্নের লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
আফ্রিকা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
“উদ্ভ্রান্ত সেই আদিমযুগে”- ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে কবি আফ্রিকার জন্মরহস্য কীভাবে প্রকাশ করেছেন?
“হায় ছায়াবৃতা”- ‘ছায়াবৃতা’ বলার কারণ কী? তার সম্পর্কে কবির মনোভাব আলোচনা করো।
“এল মানুষ ধরার দল”- ‘মানুষ ধরার দল’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন? কবিতা অনুসরণে তাদের পরিচয় দাও।
“চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে”- ‘তোমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার ‘অপমানিত ইতিহাস’-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
“দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে / বলো ক্ষমা করো”- ‘মানহারা মানবী’ কথাটি ব্যাখ্যা করো। কাকে, কেন তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে?
দশম শ্রেণির অধ্যায়ভিত্তিক বাংলা প্রশ্নের উত্তর দেখতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবে
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
- বাংলা ব্যাকরণের আলোচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে প্রদান করা প্রবন্ধ রচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক নোট দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ TEST প্রদান করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- শিক্ষালয় ইউটিউব চ্যানেলটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সাজেশন দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার নোট, সাজেশন, প্রশ্নপত্র ও মক টেষ্টের সুবিধা গ্রহণ করতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করে বিষদ তথ্য জেনে নাওঃ