শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণিঃ সিন্ধুতীরে কবিতা এবং সিন্ধুতীরে কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
দশম শ্রেণিঃ সিন্ধুতীরেঃ
সিন্ধুতীরে- সৈয়দ আলাওল
কন্যারে ফেলিল যথা জলের মাঝারে তথা
দিব্য পুরী সমুদ্র মাঝার ।
অতি মনোহর দেশ নাহি তথা দুঃখ ক্লেশ
সত্য ধর্ম সদা সদাচার ।।
সমুদ্রনৃপতি সুতা পদ্মা নামে গুণযুতা
সিন্ধুতীরে দেখি দিব্যস্থান ।
উপরে পর্বত এক ফল ফুলে অতিরেক
তার পাশে রচিল উদ্যান ।।
নানা পুষ্প মনোহর সুগন্ধি সৌরভতর
নানা ফল বৃক্ষ সুলক্ষণ ।
তাহাতে বিচিত্র টঙ্গি হেমরত্নে নানা রঙ্গি
তথা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ ।।
পিতৃপুরে ছিল নিশি নানাসুখে খেলি হাসি
যদি হৈল সময় প্রত্যুষ ।
সখীগণ করি সঙ্গে আসিতে উদ্যানে রঙ্গে
সিন্ধুতীরে রহিছে মাঞ্জস ।।
মনেতে কৌতুক বাসি তুরিত গমনে আসি
দেখে চারি সখী চারভিত ।
মধ্যেতে যে কন্যাখানি রূপে অতি রম্ভা জিনি
নিপতিতা চেতন রহিত ।।
দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা
অনুমান করে নিজ চিতে ।
ইন্দ্র শাপে বিদ্যাধরি কিবা স্বর্গভ্রষ্ট করি
অচৈতন্য পড়িছে ভূমিতে । ।
বেকত দেখিয়া আঁখি তেন স-বসন সাক্ষী
বেথানিত হৈছে কেশ বেশ ।
বুঝি সমুদ্রের নাও ভাঙ্গিল প্রবল বাও
মোহিত পাইয়া সিন্ধু-ক্লেশ । ।
চিত্রের পোতলি সমা নিপতিত মনোরমা
কিঞ্চিৎ আছয় মাত্র শ্বাস ।
অতি স্নেহ ভাবি মনে বলে পদ্মা ততক্ষণে
বিধি মোরে না কর নৈরাশ । ।
পিতার পুণ্যের ফলে মোহর ভাগ্যের বলে
বাহুরক কন্যার জীবন ।
চিকিৎসিমু প্রাণপণ কৃপা কর নিরঞ্জন
দুখিনীরে করিয়া স্মরণ । ।
সখী সবে আজ্ঞা দিল উদ্যানের মাঝে নিল
পঞ্চজনে বসনে ঢাকিয়া ।
অগ্নি জ্বালি ছেকে গাও কেহ শিরে কেহ পাও
তন্ত্রে মন্ত্রে মহৌষধি দিয়া । ।
দণ্ড চারি এই মতে বহু যত্নে চিকিৎসিতে
পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন ।
শ্রীযুত মাগন গুণী মোহন্ত আরতি শুনি
হীন আলাওল সুরচন । ।
“দশম শ্রেণিঃ সিন্ধুতীরে” কবিতা থেকে এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নোট প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট নোটে টাচ/ক্লিক করে সেই বিষয়ের নোটগুলি দেখতে পারবে।
১) “পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন”- পঞ্চকন্যা কে? তারা কীভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছিল? ১+৪=৫
উৎসঃ
“মালিক মুহম্মদ জায়সী”র “পদুমাবৎ” কাব্যের বাংলা অনুবাদ “পদ্মাবতী” রচনা করেন আরাকান রাজসভার কবি “সৈয়দ আলাওল”। এই কাব্যের “পদ্মা-সমুদ্রখন্ড” অংশটি আমাদের পাঠ্য “সিন্ধুতীরে” নামে সংকলিত হয়েছে, যেখানে প্রশ্নোক্ত অংশটি ব্যবহৃত হয়েছে।
পঞ্চকন্যার পরিচয়ঃ
প্রশ্নোক্ত অংশে ‘পঞ্চকন্যা’ বলতে সিংহল রাজকন্যা, চিতোরের রাজবধূ পদ্মাবতী ও তার সখী চন্দ্রকলা, বিজয়া, রোহিণী ও বিধুন্নলাকে বোঝানো হয়েছে।
চেতনা ফিরে পাওয়ার বর্ণনাঃ
চিতোরের রাজা রত্নসেন সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতীকে বিবাহ করে নিজ রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের সময় সামুদ্রিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে অচেতন অবস্থায় পদ্মাবতী তার চার সখীদের সাথে ভাসতে ভাসতে এক দ্বীপভূমিতে উপস্থিত হন।
সমুদ্রকন্যা পদ্মা তার সখীদের সাথে প্রমোদ উদ্যানে যাত্রাকালে পদ্মাবতী ও তার সখীদের সমুদ্রপকূলে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরদুঃখকাতর সমুদ্রকন্যা পদ্মা পদ্মাবতীর রূপে মুগ্ধ হন এবং তার সখীদের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করেন ও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
পদ্মা বিধাতার কাছে পদ্মাবতীর জন্য প্রার্থনা করে বলেন-
“পিতার পুণ্যের ফলে মোহর ভাগ্যের বলে
বাহুরক কন্যার জীবন।”
পঞ্চকন্যাকে বসন দ্বারা ঢেকে তারা তাদের প্রমোদ উদ্যানের মাঝে নিয়ে যায়। তাদের সিক্ত শরীরের স্বাভাবিক স্পন্দন ফেরানোর জন্য তারা-
“অগ্নি জ্বালি ছেকে গাও কেহ শিরে কেহ পাও
তন্ত্রে মন্ত্রে মহৌষধি দিয়া।।”
‘চারদন্ড’ সময়কাল ধরে তন্ত্রমন্ত্র, মহৌষধির প্রয়োগে এবং সমুদ্রকন্যা পদ্মা ও তার সখীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পদ্মাবতী ও তার সখীরা চেতনা ফিরে পান।
পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা দাও।
পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে সমুদ্রকন্যা পদ্মার চরিত্র আলোচনা করো।