দার্জিলিং ডায়েরি এক ভ্রমণ কথা- নিত্যানন্দ সরকার
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষালয়ের সকল পাঠকদের জন্য ‘দার্জিলিং ডায়েরি এক ভ্রমণ কথা- নিত্যানন্দ সরকার’ প্রদান করা হলো। পাঠকেরা এই ‘দার্জিলিং ডায়েরি এক ভ্রমণ কথা- নিত্যানন্দ সরকার’ পাঠ করে নিত্যানন্দ সরকারের চোখে দার্জিলিং সম্পর্কে সুন্দর ধারণা লাভ করতে পারবে।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
দার্জিলিং ডায়েরিঃ এক ভ্রমণ কথা
বছরের মার্চ মাস থেকেই ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গে হানা দেয়, মারণ ভাইরাস করোনা (COVID-19)। মার্চের ২৩ তারিখ থেকে শুরু হয়- লকডাউন, যা ইতিহাসের পাতায় ! ইতিপূর্বে যা আমি কখনো দেখিনি। লকডাউন, আমার পাখির মতো উড়ন্ত মনে প্রভাব ফেলেছিল ব্যাপক। নিজেকে এক পাগল বন্দি মনে হচ্ছিল। খোলা আকাশে আমার মনটা একটু উড়তে চাইছিল।
নিজের বন্দি মনকে শান্তি দিতে,আর খোলা আকাশে একটু ডানা মেলতে, ২২ তারিখ সকাল 8.০৮ এ বেরিয়ে পড়লাম, দার্জিলিং-এর উদ্দেশ্যে। সঙ্গী বলতে একমাত্র শুভজিৎ। সকাল ৫ টার বহরমপুরের বাসে উঠে চলে গেলাম শিলিগুড়ি জংশনে। সেখান থেকে ৮ টার বাসে করে পৌঁছে গেলাম শৈলশহর দার্জিলিং- এ।
দার্জিলিং-এর মাটিতে পা দিতেই অনুভব করলাম কেন দার্জিলিং-কে “QUEEN OF HILLS” বলে! বাস ছাড়ার প্রাকমুহূর্তে, বাসচালকের সাথে অনেক আড্ডা হলো, কথা হলো। তিনি আমাকে ফাটাপুকুরের রক্তাত্ব ও দুঃখজনক বাস অ্যাকসিডেন্টের কথা জানালেন; আর বললেন পাহাড়ের ইতিবৃত্তান্ত।
দার্জিলিং পৌঁছে সোজা চলে গেলাম পদ্ধজা নাইডু হিমালয়ান ZOO, আর হিমালয়ান Mountaineering Institute- এ।সেখানে কি কি না দেখলাম !- বাঘ, ভাল্লুক, সাপ, শেয়াল। সেখানে, সংগ্রহশালাতে মন ছুঁয়ে যাওয়া অনেক ঐতিহাসিক জিনিস দেখলাম। আর দেখলাম, হিমালয়ান Mountaineering Institute – এ ট্রেনিং প্রাপ্ত এভারেস্ট জয়ের ২০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র। সারাটা দিন কেটে গেলো সেখানেই। তারপর খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলাম চক বাজার, মল রোড- সহ আরও অনেক জায়গায় ! তারপর আমি এবং আমার বন্ধু পরিবারের সকলের জন্যে উপহার নিলাম। সেখান থেকে শেয়ার ট্যাক্সি করে চলে গেলাম ঘুম শহরে।
হ্যাঁ, এই ঘুমেই আছে উচ্চতম রেলওয়ে স্টেশন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই “ঘুম” শহরের উচ্চতা প্রায় ৭৪৭০ ফিট। ঘুম-এ ছিলাম “নম্রতা হোম স্টে”-তে। সেখানকার কর্ণধার ভদ্রলোক ছিলেন খুবই ভালো মনের একজন মানুষ। রুমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রলোক গরম জল নিয়ে এলেন। ভদ্রলোক আমাদের খবরা-খবর নিলেন। আমাদের কাছে তিনি জানতে পারলেন যে, পরের দিন সকালে আমরা হেঁটে হেঁটে “টাইগার হিল” যাবো। ভদ্রলোক আমাদের তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে বললেন। শুয়ে পড়লাম আমরা।
সকালে কম্বল ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু ভদ্রলোক এসে আমদের ডাক দিয়ে তুলে দিলেন, আর আমাদের উৎসাহিত করলেন, টাইগার হিল-এর উদ্দশ্যে পাড়ি দেওয়ার জন্যে। একটু পরেই তিনি আমাদের দুজনের হাতে এনে দিলেন দার্জিলিং চা। চা-এর পেয়ালাতে চুমুক দেওয়া মাত্রই এক অপূর্ব স্বাদ ও সুগন্ধ অনুভূত হলো। সত্যি এটা সত্যি, “দার্জিলিং চা- এর স্বাদ ও সুগন্ধ পৃথিবী বিখ্যাত”।
আমরা তৎক্ষণাৎ (ভোর ৫ টা) বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের যাত্রা পথের উদ্দশ্যে। খুব ঠাণ্ডা ছিল তখন। ঘুম শহরের উষ্ণতা তখন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস! ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছিল, আর শরীরের রক্ত গুলোও যেনো আর্তনাদ করে উঠছিল। হেঁটে হেঁটে ঘুম শহর থেকে ৫.৫ কিমি উচুঁতে অবস্থিত টাইগার হিল উঠলাম; কখনও দৌড়ে, কখনও হামাগুড়ি দিয়ে, কখনও বন্ধু অর্থাৎ সহযাত্রীর ধাক্কাতে। সূর্যমামা ২০ মিনিট দেরিতে উঠেছিল, তাই আমরা দেখতে পেয়েছিলাম টাইগার হিলের সূর্যোদয়। এই জন্য সেই কর্ণধার ভদ্রলোক আর সূর্য মামাকে তাই অসংখ্য ধন্যবাদ, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা জানাই।
সেই মনোরম টাইগার হিলে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় কাটিয়েছি। সেখান থেকে দেখা চারদিকের অপূর্ব দৃশ্য এখনও আমার মনে দাগ কাটছে। তারপর ৯ টা নাগাদ অপূর্ব পাহাড়ি রাস্তা ধরে বেতের বন থেকে লাঠি নিয়ে, আসতে আসতে চারদিকের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে, নেমে আসলাম ঘুম রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নিলাম কিছুক্ষন।
একটু পরেই বাস উকি দিতেই আমরা ছুটে গিয়ে উঠে পড়লাম সেই বাসে। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে কমলালেবু খাওয়ার ঘটনা, আমার আজীবন মনে থাকবে। তারপর বাস ধরে পাহাড়ী শহর ঘুম তথা দার্জিলিং থেকে নেমে আসলাম সমতল শহর শিলিগুড়িতে।
শিলিগুড়ি পৌঁছুলাম ২.২৪ -এ। সেখানে নেমে ১০০ মিটার দৌড়ে ধরলাম ২.২৫-এর শিলিগুড়ি – জলপাইগুড়ি NBSTC বাসটিকে। এক মিনিট দেরিতে ছাড়ায় ধরতে পেরেছিলাম বাসটিকে! তারপর বাড়ির পথের বাকি পথটা কাটিয়ে দিলাম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে।
জন্মভূমি তথা জন্মশহর এ পৌঁছতেই মনটা কেমন জানি করে উঠলো। ক্লান্ত শরীরে নেমে পড়লাম সর্দারপাড়া মোড়ে। তারপরের বাকি পথটা হাঁটাপথ। অবশেষে বাড়ি পৌঁছুলাম। সত্যি কথা বলতে, আরও একদিন থাকতে ইচ্ছে করছিল শৈলশহর দার্জিলিং-এ। যাইহোক মন থেকে আমি একটাই কথা বলতে চাই -“হ্যাঁ,আমি পাহাড় প্রেমী” আর আপনি???
© নিত্যানন্দ সরকার
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের বিবিধ বিভাগে বাংলা কাব্য, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প প্রভৃতির এক ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের ফলোয়াররা তাদের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ বা হাতে আঁকা ছবির কোলাজ কিম্বা নিজের শিক্ষামূলক ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও আমার শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের “বিবিধ” বিভাগে প্রকাশ করতে চাইলে যোগাযোগ করবেন। এই বিভাগে অংশগ্রহণ করতে কোনো প্রকার অর্থ নেওয়া বা দেওয়া হবে না। আগ্রহী ব্যাক্তিরা শিক্ষালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
- বাংলা ব্যাকরণের আলোচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে প্রদান করা প্রবন্ধ রচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক নোট দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ TEST প্রদান করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- শিক্ষালয় ইউটিউব চ্যানেলটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
শিক্ষালয়ের সাথে ফেসবুকে যুক্ত হতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবেঃ