কাহিনীকথা- দিব্যেন্দু নাগ
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের “বিবিধ” বিভাগ থেকে যে ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, ভ্রমণবৃত্তান্ত, সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ বা হাতে আঁকা ছবির কোলাজ প্রভৃতি প্রকাশের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছেন আমাদের সকলের প্রিয়, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দিব্যেন্দু নাগ মহাশয়। ইংরাজি সাহিত্যের শিক্ষক দিব্যেন্দুবাবুর বাংলা সাহিত্যচর্চায় সুখ্যাতির কথা সর্বজনবিদিত। এছাড়াও তিনি সমাজসেবামূলক কাজের সাথেও প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।
তার লেখা “কাহিনীকথা” শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে প্রকাশ করতে পারায়, শিক্ষালয় তার কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা করার ন্যায়, তাই কবির সৃষ্টির শরণাপন্ন হয়েই তার রচনা সম্পর্কে বলা যায়-
“চতুর্দশীয় ছন্দে লেখা ‘কাহিনীকথা’
সপ্ত-খন্ডে সমাপিল জয়-শৌর্য গাথা।।”
সকল পাঠকের কাছে অনুরোধ, “কাহিনীকথা”-এই অসাধারণ সৃষ্টিকে আপনাদের পরিচিত সাহিত্য অনুরাগীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে শিক্ষালয়ের এই প্রয়াসকে সর্বার্থসার্থক করে তুলুন।
কাহিনীকথা
-দিব্যেন্দু নাগ
(১)
মহাবীর মহাযোদ্ধা বীরসিংহ নাম
উদয়গিরি পর্বত আদি তার ধাম ।
মহারাজা ভদ্রসেন অতি সদাশয়,
ভানুমতি রানী যেন লক্ষী রাজ্যে রয়।
রাজকন্যা কনকলতা পৃথিবী পরে
যেন এক দেবপূত্রী স্বর্গ সুধা ঝরে।
রাশি রাশি বৃক্ষসারি পাখি করে খেলা
উদয়গিরি উদ্যান আনন্দের মেলা।
কনকলতা বড় হয় পরম যত্নে,
পিশাচিনির কু-নজর পড়ে কুক্ষণে।
উদয়গিরি রাজ্যে এক রাক্ষসী ছিল
ভদ্রসেনের বিনাশে চক্রান্ত আঁটিল,
দেবভূমে নরবলি দাবি রাক্ষসীর –
অস্বীকারে মহাক্ষতি ধ্বংস শান্তিনীড় ।।
(২)
রাক্ষসীর আশ্ যবে রাজা প্রত্যাখিল
প্রতিশোধ স্পৃহা তারে পাগল করিল ।
রাজ্যে লাগিল মড়ক, শুকাইল নদী,
পুড়িল ফসল ক্ষেতে, প্রজা ছিন্নমতি
হানাহানি করে সবে যেন রক্তে স্নান
স্বর্ণপূরী উদয়গিরি হৈল শ্মশান ।
চিন্তিত ভদ্রসেন কহেন সভাসদে,
কেমনে সহিব সব বসি মসনদে ।
রাজগৃহে রাক্ষসী হানে চরমাঘাত
কীটরূপে দংশায় কনকলতার হাত,
শোণিতে মিশিল বিষ রাক্ষসীর মায়া
অষ্টাদশী কুমারী হইল শীর্ণকায়া,
ললাটে প্রকট হয় যেন মৃত্যুরেখা।
রাজা কহে, “এই ছিল মোর ভাগ্যে লেখা!”
(৩)
বৈদ্যরাজ নিজকর্মে স্বীকারিল হার
কেঁদে কয় এ ঔষধ নাহি জানা তার ।
অন্তঃপূরে উথলিল ক্রন্দনের রোল
শাপে বুঝি শূন্যিল ভানুমতীর কোল ।
হেনকালে রাজ্যে এক সন্ন্যাসিনী আসে
প্রতিকার জানা মোর কহে মৃদুভাষে,
উপায় কঠিন বড়, পথে মহা ঝুঁকি,
প্রতিপদে মৃত্যুভয় – আছে এ রাজ্যে কি ?
এ হেন বীরপুরুষ প্রাণ লয়ে হাতে
প্রবেশিবে রক্ষঃপুরে অমাবস্যা রাতে,
করিবে যুদ্ধ ভীষন বধিবে সকল
আছে যত মায়াবিনী পিশাচিনি দল,
মোর কমন্ডলূ রবে বাঁধা কটিদেশে
কালযজ্ঞে মন্ত্রজল ছিটাইবে শেষে ।।
(৪)
সন্ন্যাসিনী বাক্য শুনি কাঁপে সর্বজন
কোন বীর দেয় এই পরীক্ষা ভীষণ?
সেইক্ষণে বীরসিংহ আসে রাজদ্বারে
সাহসী বিনয়ী কন্ঠে কহে করজোড়ে,
“রাজআজ্ঞা চাহি একা রক্ষঃপূরে যাব
রাক্ষসী নিধন লক্ষ্য পূরণ করিব,
বাহুবলে যদি কভু পরাজিত হই
রাজ্য তরে দিতে প্রাণ ভয়ভীত নই।”
‘সাধু-সাধু’ কহে যত সভাসদ ছিল
বীরসিংহ নামে সবে জয়ধ্বনি দিল।
রাজ-অনুমতি লভি গুরুকুলে যায়
গুরুবরে প্রণমিয়া জয়াশীষ চায়,
মাতাপিতার পদধুলি শিয়রে করি
যুদ্ধযাত্রা করে শুরু অশ্বপৃষ্ঠে চড়ি।।
(৫)
আঁধার বন্ধুর পথ বিপদসংকুল
স্রোতস্বতী তটিনী অতি ভয়বহুল,
বনানী প্রাচীন ঘন হেন তার রেশ
দ্বিপ্রহরে সূর্যরশ্মি করে না প্রবেশ।
হেন পথে বীরসিংহ অগ্রসর হয়
বিপদে না ডরে সে বীর অকুতোভয়।
বিষধর নানা সর্প দুপায়ে জড়ায়,
কভু হিংস্র সিংহ ব্যাঘ্র তার পিছু ধায়।
মানে না কোনো বাধা বীরসিংহর গতি
লক্ষ্যভেদে প্রতিজ্ঞচিত্ত দুর্দম অতি।
এইরূপে শত ক্রোশ পথ করি পার
বীরসিংহ হেরিল রাক্ষসীর আগার,
নিঃশঙ্ক বীরপুরুষ অস্ত্র দুই হাতে
প্রবেশিল রক্ষঃপূরে অমাবস্যা রাতে।।
(৬)
অতি সন্তর্পণে বীর চতুর্দিকে চায়,
ভূমিতলে মৃতপ্রাণী পড়িয়া লুটায়-
নরমুন্ড, ছিন্নঅঙ্গ, পচা গলা দেহ
জঙ্গলমাঝে রক্তে রাঙা পিশাচগৃহ,
বায়ূ যেন বিষময় গাঢ় অন্ধকার
কোনোক্রমে খুঁজি পায় কালযজ্ঞাগার।
বীরসিংহ দেখে সেথা চন্ডালী সকল
জ্বালাইয়া অগ্নিকুন্ড করে কোলাহল,
বৃহৎ কলস পূর্ণ রক্ত পান করে;
অস্থি, মাংস, চর্ম, মজ্জা – খায় শব ছিড়ে।
দৃশ্য অতি নারকিয় – ভয়াল ভীষণ
বীরসিংহ দৃঢ়চিত্ত, হবে মহারণ
ভক্তিভরে গুরুবরে স্মরণ করিল
প্রবল রন হুংকারে যুদ্ধে ঝাঁপ দিল।।
(৭)
গুরুকূলে অস্ত্রশিক্ষা বৃথা নাহি যায়
দুই হাতে অসিচর্ম সমানে চালায়,
তরবারি কাটে মুন্ড, বর্শা বিদ্ধ করে
পদাঘাতে উড়ে কেহ অগ্নিকুন্ডে পড়ে।
রাক্ষসীর কেশ ধরি করিল কোতল
কালযজ্ঞে ছিটাইল মন্ত্রপূত জল ।
উদয়গিরি রাজ্যের শাপমূক্তি ঘটে
সর্বজনে স্বীকারিল পরিত্রাতা বটে!
জয়মাল্য দিয়া বীরে করিল বরণ,
জাতি এই বীরগাথা রাখিবে স্মরণ।
রাজারাণী স্বমস্বরে করে ধন্য-ধন্য,
রাজকন্যার যোগ্য বীরপূত্র অনন্য।
চতুর্দশীয় ছন্দে লেখা ‘কাহিনীকথা’
সপ্ত-খন্ডে সমাপিল জয়-শৌর্য গাথা।।
—- ×× —
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের বিবিধ বিভাগে বাংলা কাব্য, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প প্রভৃতির এক ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের ফলোয়াররা তাদের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ বা হাতে আঁকা ছবির কোলাজ কিম্বা নিজের শিক্ষামূলক ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও আমার শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের “বিবিধ” বিভাগে প্রকাশ করতে চাইলে যোগাযোগ করবেন। এই বিভাগে অংশগ্রহণ করতে কোনো প্রকার অর্থ নেওয়া বা দেওয়া হবে না। আগ্রহীরা শিক্ষালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল আপডেট নিয়মিত লাভ করতে নিম্নের ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করুনঃ