দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ

দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ

দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ গল্প ও তার প্রশ্নের উত্তরগুলি নিম্নে প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রশ্নের উত্তরগুলি তৈরি করলে পরীক্ষায় বিশেষভাবে উপকৃত হবে।

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। 

দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ 

চারটা পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জারে ট্রেনটিকে রওনা করিয়া দিয়া নদেরচাঁদ নতুন সহকারীকে ডাকিয়া বলিল, আমি চললাম হে!
নতুন সহকারী একবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে চাহিয়া বলিল, আজ্ঞে হ্যাঁ।
নদেরচাঁদ বলিল, আর বৃষ্টি হবে না, কি বলো?
নতুন সরকারি একবার জলে জলময় পৃথিবীর দিকে চাহিয়া বলিল, আজ্ঞে না।

নদেরচাঁদ লাইন ধরিয়া এক মাইল দূরে নদীর উপরকার ব্রিজের দিকে হাঁটিতে লাগিল। পাঁচ দিন অবিরত বৃষ্টি হইয়া আজ এই বিকালের দিকে বর্ষণ থামিয়াছে। পাঁচ দিন নদীকে দেখা হয় নাই। নদেরচাঁদ ছেলে মানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল। আকাশে যেমন মেঘ করিয়া আছে, হয়তো আবার কিছুক্ষণের মধ্যে প্রবল ধারায় বর্ষণ শুরু হইয়া যাইবে। তা হোক। ব্রিজের একপাশে আজ চুপচাপ বসিয়া কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না। পাঁচদিনের আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি না জানি নদীকে আজ কী অপরূপ রূপ দিয়াছে? দুদিকে মাঠ ঘাট জলে ডুবিয়া গিয়াছিল, রেলের উঁচু বাঁধ ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে দু’পাশ চাহিয়া চাহিয়া নদীরচাঁদ নদীর বর্ষন – পুষ্ট মূর্তি কল্পনা করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল।

ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক। কেবল বয়সের জন্য নয়, ছোট হোক, তুচ্ছ হোক, সে তো একটা স্টেশনের স্টেশন মাস্টার, দিবারাত্রি মেল, প্যাসেঞ্জার আর মালগাড়িগুলো তীব্র বেগে ছুটাছুটি নিয়ন্ত্রিত করিবার দায়িত্ব যাহাদের সেও তো তাহাদেরই একজন, নদীর জন্য এমনভাবে পাগলা হওয়া কি তার সাজে? নদেরচাঁদ সব বোঝে, নিজেকে কেবল বুঝাতেই পারে না। নিজের সেই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে।

অস্বাভাবিক হোক, নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে। নদীর ধারে তার জন্ম হইয়াছে, নদীর ধারে সে মানুষ হইয়াছে, চিরদিন নদীকে সে ভালোবাসিয়াছে। দেশের নদীটি তার হয়তো এই নদীর মতো এত বড়ো ছিল না, কিন্তু শৈশবে, কৈশোরে, আর প্রথম যৌবনের বড়োছোটোর হিসেব কে করে? দেশের সেই ক্ষীনস্রোতা নির্জীব নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পাইয়াছিল। বড়ো হইয়া একবার অনাবৃষ্টির বছরে নদীর ক্ষীন স্রোতধারাও প্রায় শুকাইয়া যাইবার উপক্রম করিয়াছে দেখিয়া সে  প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল; দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগিতে ভুগিতে পরমাত্মীয়া মরিয়া যাওয়ার উপক্রম করিলে মানুষ যেমন কাঁদে।

ব্রিজের কাছাকাছি আসিয়া প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল। পাঁচ দিন আগেও বর্ষার জলে পরিপুষ্ট নদীর পঙ্কিল জল স্রোতের যা চাঞ্চল্য দেখিয়া গিয়াছে, কিন্তু সেই চাঞ্চল্য যেন ছিল পরিপূর্ণতার আনন্দের প্রকাশ। আজ যেন সেই নদীর খেপিয়া গিয়াছে, গাঢ়তর পঙ্কিল জল ফুলিয়া ফাঁপিয়া ফেনোচ্ছাসিত হইয়া আজ ছুটিয়া চলিয়াছে। এতক্ষণ নদেরচাঁদ একটি সংকীর্ণ ক্ষীনস্রোতা নদীর কথা ভাবিতেছিল। তার চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল।

ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্টের গাঁথা ধারক স্তম্ভের শেষ প্রান্তে বসিয়া সে প্রতিদিন নদীকে দেখে। আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল। নদীর স্রোত ব্রীজের সেই একদিকে ধারক স্তম্ভ গুলিতে বাধা পাইয়া ফেনিল আবর্ত রচনা করিতেছে। এত উঁচুতে জল উঠিয়া আসিয়াছে যে, মনে হয় ইচ্ছা করিলে বুঝি হাত বাড়াইয়া স্পর্শ করা যায়। নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগল। পকেট খুজিয়া পুরাতন একটি চিঠি বাহির করিয়া সে স্রোতের মধ্যে ছুড়িয়া দিল। চোখের পলকে কোথায় যে অদৃশ্য হইয়া গেল চিঠিখানা! উন্মওতার  জন্যই জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল, তার সঙ্গে খেলায় যোগ দিয়া চিঠিখানা যেন তাড়াতাড়ি লুকাইয়া ফেলিয়াছে।

ধরিয়া বাহিরে অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া নদেরচাঁদ বউকে প্রাণপনে একখানা পাঁচ পৃষ্ঠাব্যাপী বিহর – বেদনাপূর্ণ চিঠি লিখিয়াছে, চিঠি পকেটেই ছিল। একটু মমতা বোধ করিল বটে, কিন্তু নদীর সঙ্গে খেলা করার লোভটা সে সামলাতে পারিল না, এক একখানি পাতা ছিড়িয়া দুমড়াইয়া মোচড়াইয়া জলে ফেলিয়া দিতে লাগিল।

তারপর নামিল বৃষ্টি সে কি মুষলধারায় বর্ষণ। ঘন্টা তিনেক বিশ্রাম করিয়া মেঘের যেন নতুন শক্তি সঞ্চিত হইয়াছে। নদেরচাঁদ বসিয়া বসিয়া ভিজিতে লাগিল, উঠিল না। নদী হইতে একটা অশ্রুতপূর্ব শব্দ উঠিতেছিল, তার সঙ্গে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিশিয়া হঠাৎ এমন একটা সংগত সৃষ্টি করিয়াছে যে নদেরচাঁদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল, তার মনে হইতে লাগিল এই ভীষণ মধুর শব্দ শুনিতে শুনিতে সর্বাঙ্গ অবশ, অবসন্ন আসিতেছে।

ক্রমে ক্রমে দিনের স্তিমিত আলো মিলাইয়া চারিদিকে অন্ধকারে ছাইয়া গেল, বৃষ্টি একবার কিছুক্ষণের জন্য একটু কমিয়ে আবার প্রবল বেগে বর্ষণ আরম্ভ হইল, ব্রীজের ওপর দিয়ে একটা ট্রেন চলিয়া যাওয়ার শব্দে আকস্মিক আঘাতের ঘুম ভাঙ্গিয়া যাওয়ার মতো একটা বেদনাদায়ক চেতনা কিছুক্ষণের জন্য নদেরচাঁদকে দিশেহারা করিয়া রাখিল, তারপর সে অতি কষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল।

বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদের চাঁদের। হঠাৎ তাহার মনে হইয়াছে রোষে ক্ষোভে উন্মত্ত এই নদীর আর্তনাদি জলরাশি কয়েক হাত উঁচুতে এমন নিশ্চিন্ত মনে এতক্ষণ বসিয়া থাকা  তাহার উচিত হয় নাই। হোক ইট, সুরকি, সিমেন্ট, পাথর, লোহালক্কড়ে গড়া ব্রিজ, যে নদী এমন ভাবে খেপিয়া যাইতে পারে তাহাকে বিশ্বাস নাই।

অন্ধকারে অতি সাবধানে লাইন ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে নদেরচাঁদ স্টেশনের দিকে ফিরিয়া চলিল। নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে। ব্রিজটা ভাঙিয়া ভাসিয়া লইয়া, দুপাশে মানুষের হাতে গড়া বাঁধ চুরমার করিয়া, সেভস্বাভাবিক গতিতে বহিয়া যাইবার পথ করিয়া লইতে চায়। কিন্তু পারিবে কি?

পারিলেও মানুষ কি তাকে রেহাই দিবে? আজ যে ব্রিজ আর বাঁধ সে ভাঙিয়া ফেলিবে, কাল মানুষ আবার সেই ব্রিজ আর বাঁধ গড়িয়া তুলবে। তারপর এই গভীর প্রশস্ত, জলপূর্ণ নদীর, তার দেশের সেই ক্ষীণস্রোতা নদীতে পরিণত হইতে না জানি মোটে আর কতদিন লাগিবে।

স্টেশনের কাছে নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য এতকাল নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করিয়াছে। আজ তার মনে হইল কি প্রয়োজন ছিল ব্রিজের?

বোধ হয়, এই প্রশ্নের জবাব দেবার জন্যই পিছন হইতে ৭ নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি নদেরচাঁদকে পিষিয়া দিয়া চলিয়া গেল ছোট স্টেশনটির দিকে, নদেরচাঁদ চার বছর যেখানে স্টেশনমাস্টারি করিয়াছে এবং বন্দি নদীকে ভালোবাসিয়াছে। 

দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ গল্পের সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নের ভিডিওতে প্রদান করা হলোঃ

“দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ” গল্প থেকে নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নোট প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট নোটে টাচ/ক্লিক করে সেই বিষয়ের নোটগুলি দেখতে পারবে।

দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ MCQ প্রশ্নের উত্তর সমাধান করতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে 

দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ গল্প থেকে SAQ প্রশ্নের উত্তরঃ 

১) ‘কিন্তু সে চাঞ্চল্য যেন ছিল পরিপূর্ণতার আনন্দের প্রকাশ।’— কোন পরিপূর্ণতার কথা বলা হয়েছে ?

উঃ  নদীর পরিপূর্ণতা তার জলরাশির উচ্ছলতায় । নদেরচাদ বর্ষার জলে পুষ্ট নদীর যে চাঞ্চল্য লক্ষ করেছিল , সেই পরিপূর্ণতার কথা এক্ষেত্রে বলা হয়েছে ।

২) ‘আজ যেন সেই নদী খেপিয়ে গিয়াছে’- কোন নদীর কথা বলা হয়েছে ?

উঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের নায়ক নদেরচাদের কর্মস্থল থেকে মাইলখানেক দুরে তার প্রিয় নদীটি অবস্থিত ছিল । এখানে সেই নদীটির কথা বলা হয়েছে ।

৩) ‘নদেরচাদ একটি সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবিতেছিল’ — কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে ?

উঃ নদেরচাঁদ তার কর্মস্থলের অনতিদূরে চার বছর ধরে একটি ক্ষীণস্রোতা নদীকে দেখে আসছে । টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে সেই নদী ফুলেফেঁপে উঠলেও দাঁড়িয়ে সে সেই ক্ষীণস্রোতা নদীটির কথাই ভাবছিল ।

৪) ‘তার চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর, আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল।’— তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 

উঃ  নদেরচাদের কর্মক্ষেত্রের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে সে প্রতিদিন দেখত । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বর্ষণে সে নদীর জল ফুলেফেঁপে ভয়ংকর রূপ ধারণ করলে চার বছরের চেনা নদীটিকে নদেরচাদের অচেনা লাগে ।

৫) ‘সে প্রতিদিন নদীকে দেখে’ – ‘সে’ কে ? সে কোন্ নদীকে কেন দেখে? 

উঃ ‘সে’ হল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ। নদেরচাঁদ তার কর্মক্ষেত্র থেকে মাইলখানেক দূরের নদীটিকে প্রতিদিন দেখত। কারণ এমনই এক নদীর ধারে তার শৈশব কেটেছিল ।

৬) ‘আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল’ – কে, কোথায় প্রশ্ন গিয়ে বসল? 

উঃ স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের তার কাজের অবসরে কর্মক্ষেত্র থেকে মাইলখানেক দূরে নদীর উপরকার ব্রিজের মাঝামাঝি ধারকস্তম্ভের শেষ প্রান্তে এসে বসল। 

৭) ‘ধারকস্তত্ত্বের শেষপ্রান্তে বসিয়া সে প্রতিদিন নদীকে দেখে’- তার প্রতিদিন নদীকে দেখার কারণ কী ?

উঃ  নদেরচাদের নদীর সঙ্গে সখ্য ছোটোবেলার, তার গ্রামে থাকাকালীন । কর্মস্থলে এসেও সে তা ভুলতে পারেনি । তাই নদীকে সে প্রতিদিন না দেখে থাকতে পারত না । 

৮) ‘মনে হয় ইচ্ছা করিলে’- কোন ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে ?

উঃ বৃষ্টি শেষে নদীর ধারকস্তম্ভে বসে নদেরচাদ নদীকে দেখছিল। নদীর জলরাশি মাঝেমধ্যে ফুলেফেঁপে উঠছিল। সেই ফুলেফেঁপে ওঠা জলরাশিকে স্পর্শ করার ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে।   

৯) ‘এত উঁচুতে জল উঠিয়া আসয়িাছে যে’ – জল উঁচুতে উঠে এসেছে কেন ?

উঃ ক্ষীণস্রোতা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের ধারকস্তম্ভগুলিতে বর্ষার সময় নদীর স্রোত বাধা পায় এবং ফেনিল আবর্ত রচনা করে। তাই জল উঁচুতে উঠে আসে।  

১০) ‘নদেরচাদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল’ – নদেরচাঁদের আমোদ বোধ হওয়ার কারণ কী ?

উঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প অনুসারে ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বসে নদেরচাঁদ বারবার স্তম্ভের গায়ে আঘাত খেয়ে বর্ষণপুষ্ট নদীর ফুলে ওঠা জল ছুঁতে চেষ্টা করছিল। এতেই সে আমোদিত হয়ে উঠেছিল।

১১) ‘সে স্রোতের মধ্যে ছুড়িয়া দিল’ — ‘সে’ কে ? সে স্রোতের মধ্যে কী ছুড়ে দিল ? 

উঃ ‘সে’  হল ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ। চিরপরিচিত ক্ষীণকায় নদীকে বর্ষার জলে ফুলেফেঁপে উঠতে দেখে উৎফুল্ল নদেরচাঁদ পুরোনো চিঠি সেই উন্মত্ত স্রোতের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছিল ।

১২) ‘চোখের পলকে কোথায় যে অদৃশ্য হইয়া গেল চিঠিখানি’ – কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে ?

উঃ বর্ষণপুষ্ট জলে ক্ষীণস্রোতা নদীর উন্মত্ততা লক্ষ্য করে নদেরচাদ তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা যে চিঠিটি স্রোতের মধ্যে ফেলে দেয় এখানে সেই চিঠির কথাই বলা হয়েছে।   

১৩) ‘উন্মত্ততার জন্যই জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল’ — এই উম্মত্ততার পরিচয় দাও ।

উঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদেরচাঁদ শীর্ণকায় যে নদীকে দেখে অভ্যস্ত ছিল, তা বর্ষণপুষ্ট হয়ে প্রতিনিয়ত উম্মত্ত জলপ্রবাহের আবর্ত রচনা করায়, সেই জলরাশিকে জীবন্ত বলে মনে হয়েছিল।  

১৪) ‘চিঠি পকেটেই ছিল’ – কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে ?

উঃ বর্ষার সঙ্গে বিরহের সুর মিলিয়ে বাড়ি থেকে বহুদুরে কর্তব্যরত স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ তার বউকে পাঁচ পাতার যে চিঠিটি লিখেছিল সেই চিঠির কথাই বলা হয়েছে।  

১৫) ‘লোভটা সে সামলাইতে পারিল না’ — কোন লোভের কথা বলা হয়েছে ? 

উঃ এখানে ‘লোভ’ বলতে উন্মত্ত নদীর সঙ্গে নদেরচাদের খেলার লোভের কথা বলা হয়েছে। সেই লোভের বশবর্তী হয়ে নদেরচাঁদ স্ত্রীকে লেখা চিঠির পাতাগুলো একের পর এক নদীতে ছুড়ে ফেলেছিল। 

১৬) ‘নদেরচাদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল’ — নদেরচাদের মন থেকে আমোদ মিলিয়ে গেল কেন ?

উঃ ব্রিজের ধারকস্তম্ভের ওপর বসে উত্তাল নদী থেকে উঠে আসা শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির শব্দ মিশে তৈরি হওয়া শব্দ শুনতে শুনতে নদেরচাদের মন থেকে ছেলেমানুষি আমোদ মিলিয়ে গিয়েছিল । 

১৭) ‘তারপর সে অতিকষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল’— ‘তারপর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উঃ নদী আর বৃষ্টির শব্দ মিলেমিশে নদেরচাঁদকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছিল। এমন সময় ব্রিজের ওপর দিয়ে সশব্দে একটা ট্রেন চলে যায়। উদ্ধৃতাংশে ‘ তারপর ‘ বলতে এর পরকেই বুঝিয়েছে।    

১৮) ‘বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের’- নদের চাঁদ ভয় পেল কেন ?

উঃ বর্ষার জলে উদ্বৃত্ত নদীর রোষে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা রূপ দেখে দিশেহারা নদেরচাদের ভয় হয়েছিল নদীর আর্তনাদি জলরাশি যেন গোটা ব্রিজটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।  

১৯) ‘তাহার উচিত হয় নাই’ – তার কী করা উচিত হয়নি? 

উঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদের চাঁদের ক্ষোভে উন্মত্ত নদীর আর্তনাদি জলরাশির কয়েক হাত উঁচুতে ধারকস্তম্ভের ওপর এমন নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকা উচিত হয়নি । 

২০) ‘আমি চললাম হে’ – কে, কাকে এ কথা বলেছে ?

উঃ কথাসাহিত্যিক ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ চারটে পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি রওনা করিয়ে তার সহকারীকে কর্তব্যভার বোঝানোর সময় তাকে এ কথা বলেছে।  

২১) ‘পাঁচ দিন নদীকে দেখা হয় নাই’- এই উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে নদেরচাঁদের যে আন্তরিক আকুতি ফুটে উঠেছে , তার পরিচয় দাও ।

উঃ নদেরচাদের ছোটো থেকেই নদীর প্রতি বড়ো টান। পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য সে নদীর কাছে যেতে পারেনি। তাই বৃষ্টি থামতেই নদীকে দেখার জন্য সে উৎসুক হয়ে উঠল।  

২২) ‘নদের চাঁদ ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল’— ‘ছেলেমানুষের মতো’ বলার কারণ কী?

উঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির কারণে নদীকে দেখতে না পেয়ে নদেরচাঁদের মধ্যে যে আকুলতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা সাধারণত কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। এই আগ্রহ বা ঔৎসুক্যবোধকেই ‘ছেলেমানুষের মতো’ বলা হয়েছে।  

২৩) ‘কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না’- একথা বলার কারণ কী ?

উঃ একথার মধ্য দিয়ে নদেরচাঁদের সঙ্গে নদীর গভীর বন্ধুত্বকে বোঝানো হয়েছে । একটানা পাঁচ দিন বৃষ্টির পরে নদীকে দেখার জন্য তার মধ্যেকার আকুলতাকে প্রকাশ করা হয়েছে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির মধ্য দিয়ে।  

২৪) ‘কেবল বয়সের জন্য নয়’- বয়স ছাড়া আর কোন কোন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে ?

উঃ নদেরচাঁদ একজন স্টেশনমাস্টার। মেল, প্যাসেঞ্জার, মালগাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা তার কাজ। যন্ত্রের গতি নির্ধারণ যার কাজ, তার এতটা আবেগপ্রবণ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক লক্ষণ নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ভাবনাটি তার মনে উদয় হয়েছে। 

২৫) ‘নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে’- কোন পাগলামির কথা বলা হয়েছে? 

উঃ নদেরচাঁদের নদী সম্পর্কে একটা শিশুসুলভ উন্মাদনা ছিল। নদীর সামান্য অদর্শনে সে অধৈর্য হত। অন্যের কাছে এটা পাগলামি মনে হলেও, সে নিজে এই পাগলামিতে আনন্দ পেত।  

২৬) নদীকে ভালোবাসার পিছনে নদেরচাদের কী কৈফিয়ত ছিল ?

উঃ নদেরচাদের নদীর প্রতি আকর্ষণ শিশুসুলভ পাগলামি হলেও এর পিছনে তার একটি নিজস্ব যুক্তি ছিল। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নদীর ধারেই। তাই তার নদীর প্রতি এই ভালোবাসা আবাল্য বলে সে মনে করেছে।  

২৭) ‘সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল’- তার কেঁদে ফেলার কারণ কী ?

উঃ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের নায়ক নদেরচাদের ছোটোবেলা থেকেই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির সঙ্গে ভারি বন্ধুত্ব। একবার অনাবৃষ্টিতে নদীর জলস্রোত প্রায় শুকিয়ে যেতে বসায় সে কেঁদে ফেলেছিল। 

২৮) ‘অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পাইয়াছিল’- কাকে, কেন ‘অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়া’ বলা হয়েছে ?

উঃ নদেরচাঁদ যে নদীর ধারে জন্মেছে, বড়ো হয়েছে, যাকে ভালোবেসেছে, সেই নদীটি বর্ষণপুষ্ট নদীর মতো বড়ো ছিল না। ক্ষীণস্রোতা নদীটি নদেরচাঁদের কাছে ছিল অসুস্থ, দুর্বল আত্মীয়ার মতো। 

২৯) ‘চিরদিন নদীকে সে ভালোবাসিয়াছে’- নদীকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে নদেরচাঁদের চরিত্রের কোন দিকটি প্রকাশিত ?

উঃ ত্রিশ বছর বয়সি নদেরচাদের নদীর প্রতি তীব্র ভালোবাসা অস্বাভাবিক হলেও নদেরচাঁদ প্রকৃতিপ্রেমী ও আবেগপ্রবণ । তাই সংবেদনশীল শিল্পী চরিত্রদের মতোই সে নদীকে ভালোবেসেছে ।

৩০) ‘নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল’- নদেরচাঁদ কেন স্তম্ভিত হয়ে গেল? 

উঃ পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পরে নদীর ধারে গিয়ে আপাত শান্ত নদীর উন্মত্ত রূপ দেখে নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ।

৩১) ‘নদীর পঙ্কিল জলস্রোতে সে চাঞ্চল্য দেখিয়া গিয়াছে’- এই চাঞ্চল্যের স্বরূপ কী ছিল ?

উঃ নদেরচাঁদ বর্ষণপুষ্ট নদীর পঙ্কিল জলস্রোতের চাঞ্চল্য দেখেই বুঝেছিল সারাবছরের ক্ষীণস্রোতা নদীটির বর্ষার জলে পরিপূর্ণতার কাহিনি যেন তার চাঞ্চল্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছিল।  

দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ গল্প থেকে বড়ো প্রশ্নের উত্তরঃ 

১) “নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে।”- কার, কোন্‌ পাগলামির কথা এখানে বলা হয়েছে? কীভাবে সে পাগলামিতে আনন্দ উপভোগ করে লেখো। ২+৩

উৎসঃ

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকার “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়” রচিত “সরীসৃপ” গ্রন্থের নয় সংখ্যক গল্প “নদীর বিদ্রোহ” থেকে প্রশ্নোক্ত তাৎপর্যপূর্ণ অংশটি চয়ন করা হয়েছে।

পাগলামির পরিচয়ঃ

প্রশ্নোক্ত অংশে নদীপ্রেমিক স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের পাগলামির কথা বলা হয়েছে। নদী-অন্তপ্রাণ নদেরচাঁদ নদীর সাথে এক অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। স্টেশনমাস্টারের মতো এক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দ্বায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও একদিনও নদীকে না দেখে থাকা নদেরচাঁদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। পাঁচদিন অবিরাম বর্ষণের পরবর্তিতে নদীর উত্তাল রূপ কল্পনাকারী নদেরচাঁদের নদীর কাছে ছুটে যাওয়ার ঘটনাকেই প্রশ্নোক্ত অংশে ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

আনন্দ উপভোগের পরিচয়ঃ

বর্ষণমুখর উন্মত্ত নদীস্রোত দেখে নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে যায়- “জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল।” নদীর ভয়াল রূপে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ দেখে – “নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল।” আর তখনই সে শিশুসুলভ ঔৎসুক্য দেখিয়ে তার পকেট থেকে দুই দিনের প্রচেষ্টায় তার স্ত্রীকে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠাব্যাপী পত্রটি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে চঞ্চল নদীস্রোতে ভাসিয়ে দেয়। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সে তার সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে নদীকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।

এইভাবেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ তার আত্মার আত্মীয় নদীর খরস্রোতা রূপ দেখে আনন্দ উপভোগ করে।

দশম শ্রেণি বাংলা নদীর বিদ্রোহ গল্প থেকে আরো কিছু বড়ো প্রশ্নের উত্তরঃ 

‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের নায়ক কে? তাঁর চরিত্র আলোচনা করো।

উত্তর জানতে এখানে টাচ/ক্লিক করতে হবে

“নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে”-অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

উত্তর জানতে এখানে টাচ/ক্লিক করতে হবে

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

শিক্ষালয়ের সাথে ফেসবুকে যুক্ত হতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবেঃ sikkhalaya

You cannot copy content of this page