শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ব্যাকরণের বিবিধ আলোচনা নিয়মিত প্রদান করা হয়। এখানে বাংলা ব্যাকরণের শব্দ ও পদ থেকে  অব্যয় পদ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। এই প্রশ্নের উত্তরগুলি শিক্ষার্থীরা তৈরি করলে বাংলা ব্যাকরণের শব্দ ও পদ বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। 

 

অব্যয় পদ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরঃ  

১) অব্যয় পদ কাকে বলে?

উঃ তিনিটি লিঙ্গ, সমস্ত বিভক্তি ও প্রত্যয়, বচন বা পুরুষ কিছুতেই যে নামপদের রূপবদল বা পরিবর্তন হয় না বা নিজের রূপত্যাগ করে না তাকে অব্যয় পদ বলে।

যেমনঃ

        মতো, আহা, বেশ, যেন, নেই প্রভৃতি।

                                                            

২) পদান্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

উঃ বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে যে অব্যয় তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        সঙ্গে, নিমিত্ত, সহিত, জন্য ইত্যাদি।

 

৩) উপমাবাচক পদান্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

উঃ যে অব্যয় পদের দ্বারা বাক্যের অন্তর্গত দুটি বিষয়, বস্তু, প্রাণী প্রভৃতির মধ্যে তুলনা, সামঞ্জস্য খোঁজা হয় তাকে উপমাবাচক পদান্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        মতো, যেন, যেমন, প্রায়, সম  ইত্যাদি।

 

৪) অনন্বয়ী বা ভাববাচক অব্যয় কাকে বলে?

উঃ বাক্যের অন্তর্গত পদের সঙ্গে যে সকল অব্যয়ের সরাসরি সম্পর্ক নেই, মনের বিবিধ ভাবপ্রকাশের জন্য যে অব্যয় ব্যবহৃত হয় তাদের অনন্বয়ী বা ভাববাচক অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        ছি-ছি, হায়-হায়, মরি-মরি ইত্যাদি।

 

৫) প্রশংসাসূচক অব্যয় কাকে বলে?

উঃ যে সকল অব্যয় পদের সাহায্যে প্রশংসা বোঝানো হয় তাদের প্রশংসাসূচক অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        বাহবা, সাবাস, সুন্দর, চমৎকার ধন্য ইত্যাদি।

 

৬) সম্মতিজ্ঞাপক অব্যয় কাকে বলে?

উঃ যে অব্যয়ের সাহায্যে সমর্থন করা বোঝানো হয় তাকে সম্মতিজ্ঞাপক অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        হ্যাঁ, আজ্ঞে, ব্যাস, হুঁ ইত্যাদি।

 

৭) অসম্মতিজ্ঞাপক অব্যয় কাকে বলে?

উঃ যে অব্যয়ের সাহায্যে কোন কিছুকে নিষেধ করা হয় তাকে অসম্মতিজ্ঞাপক অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        না, নহে, নয়, নেই, কখনো না ইত্যাদি।

 

৮) বিরক্তিব্যঞ্জক অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

উঃ যে অব্যয় দ্বারা ঘৃণা, বিরক্তি, হতাশা, রাগ প্রভৃতি মানসিক প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাকে বিরক্তিব্যঞ্জক অনন্বয়ী অব্যয় বলে।

 

৯) ভয়, যন্ত্রণা ও দুঃখসূচক অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

উঃ যে অব্যয় পদের দ্বারা ভয়, ভীতি, যন্ত্রণা, দুঃখ, শোক প্রভৃতি প্রকাশ পায় তাকে ভয়, যন্রণা ও দুঃখসূচক অনন্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        ওরে বাবা, আঃ, ইস্‌, মাগো, উঃ ইত্যাদি।

 

১০) বিস্ময়সূচক অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

উঃ যে অব্যয় পদের দ্বারা বিস্ময় প্রকাশিত হয় তাকে বিস্ময়সূচক অনন্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

        বাঃ, ওমা, আহা, হরি হরি ইত্যাদি।

 

১১) সম্বোধনদ্যোত্যক অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ সম্বোধন বা আহ্বান করার জন্য যে অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে সম্বোধনদ্যোত্যক অনন্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

   এ, এই, ওহে, এই যে, ওলো, ওগো ইত্যাদি।

 

১২) করুণা, স্নেহ ও আদর অর্থে ব্যবহৃত অনন্বয়ী অব্যয় কোনগুলি? বাক্যে  উদাহরণ দাও।

উঃ করুণা, স্নেহ ও আদর অর্থে ব্যবহৃত অব্যয়সমূহ হলো বেচারা, আহা, আহারে, সোনা আমার, মানিক আমার ইত্যাদি।

যেমনঃ

   আহারে ! ছেলেটাকে এভাবে মেরেছে।

 

১৩) সমুচয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ একাধিক পদ, বাক্যাংশ বা বাক্যকে সংযোজন বা বিয়োজন করে তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

   রমা ও সীমা গান করবে।

 

১৪) সংযোজক অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ যেসব সমুচ্চয়ী অব্যয় একাধিক পাদ বা একাধিক বাক্যের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি  করে তাকে সংযোজক অব্যয় বলে।

যেমনঃ

   রাম এবং শ্যাম বাজারে যাবে।

 

১৫) বৈকল্পিক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ যেসব পদ দুই বা তার বেশি পদ বা বাক্যকে পৃথক করে কোন একটিকে নির্বাচন করে তাকে বৈকল্পিক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

   তপন মাছ অথবা মাংস খাবে।

 

১৬) সংকোচক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ আকাঙ্খিত ফলের পরিবর্তে তার বিপরীত ফল বোঝাতে বাক্যে যে অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয় তাদের সংকোচক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

   সে আসবে বলেছিল কিন্তু বৃষ্টি নেমেছে।

 

১৭) ব্যতিরেকাত্মক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ যে অব্যয় পদ অভাব বা ভেদ বোঝায় তাকে ব্যতিরেকাত্মক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

   আমি খাবো না, যদি না সে খায়।

 

১৮) প্রশ্নসূচক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ যে অব্যয় পদের সাহায্যে কোন প্রশ্ন করা বোঝায় তাকে প্রশ্নসূচক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ

   ওখানে কে রে?

 

১৯) কারণাত্মক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ কারণ বুঝিয়ে দুটো বাক্য বা বাক্যাংশকে যে অব্যয় দ্বারা সংযুক্ত করা হয়, তাদের কারণাত্মক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ যেহেতু, বলিয়া, নিমিত্ত, কারণ ইত্যাদি।

   তুমি শাস্তি পাবে কেননা তুমি পড়া করো নি।

 

২০) সংশয়বাচক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ যে অব্যয় পদের দ্বারা সংশয় বা সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, তাকে সংশয়বাচক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ যদি, যদি বা, যদি না ইত্যাদি।

   আমি যেতাম যদি না সে আসতো।

 

২১) সিদ্ধান্তবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ যখন কোন অব্যয় পদ ব্যবহারের মাধ্যমে বাক্যে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়, তখন তাকে সিদ্ধান্তবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ সুতরাং, তবে, তাই, সেইজন্য ইত্যাদি।

তুমি মন দিয়ে পড়লে তবে পাশ করবে।  

 

২২) হেতুবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও। 

উঃ কোন ঘটনা বা বিষয়ের কারণ বোঝাতে যে অব্য ব্যবহৃত হয় তাকে হেতুবাচক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ এইজন্য, এই হেতু, তাতে ইত্যাদি।

   রাম এসেছে এইজন্য শ্যামও এলো।

 

২৩) আলংকারিক বা বাক্যালংকার সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যে অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয় তাকে আলংকারিক বা বাক্যালংকার অব্যয় বলে।

যেমনঃ আর না, তো, বটে ইত্যাদি।

   খাবো না তো আমি।

 

২৪) সমাপ্তিসূচক সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও। 

উঃ সমাপ্তি বোঝাতে যেসকল অব্যয় ব্যবহৃত হয় তাদের সমাপ্তিসূচক সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ শেষে, শেষটায়, যাহাতে ইত্যাদি।

   শেষটায় চোর ধরা পরেছে।

 

২৫) নিত্যসম্বন্ধী সমুচ্চয়ী অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও। 

উঃ দুটো অব্যয় যদি দুটো বাক্য বা বাক্যাংশের মধ্যে শর্ত বা সম্মন্ধ স্থাপন করে তখন তাদের নিত্যসম্মন্ধী সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

যেমনঃ যদি-তবে, যেমন-তেমন, যত-তত ইত্যাদি।

   যত মত তত পথ।

 

২৬) অনুকার অব্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও। 

উঃ যে অব্যয় পদ ধ্বনির অনুসরণ করে তাদের অনুকার অব্যয় বলে।

যেমনঃ ঝমঝম, টনটন, হৈ হৈ, শোঁ শোঁ ইত্যাদি।

   শোঁ শোঁ করে বাতাস বইছে।

 

বাংলা ব্যাকরণের বিবিধ আলোচনা দেখতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবেঃ

bangla bekaron

You cannot copy content of this page

Need Help?