দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা প্রকল্প (প্রোফেসর শঙ্কু)

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা প্রকল্প (প্রোফেসর শঙ্কু) প্রদান করা হলো। শিক্ষার্থীরা এই প্রকল্পটি অনুসরণ করে নিজেদের মতো করে তোমাদের প্রকল্পটি নির্মাণ করবে। 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। 

দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা প্রকল্পঃ

প্রকল্পঃ 

ছাত্রছাত্রীরা যখন মূল্যায়নের জন্য তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কোনো দীর্ঘমেয়াদি কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করে, তখন তাকে প্রকল্প বলা হয়।

 

প্রকল্পের উদ্দেশ্যঃ

প্রকল্প একটি সৃজনমূলক প্রক্রিয়া। শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হল—

◘ পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে তোলা।

◘ তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাবহারিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো। 

◘ ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো।

◘ পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ বৃদ্ধি।

 

প্রকল্পের বিষয়ঃ 

দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বাংলা পাঠক্রমে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে মোট আটটি প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলি হলো- 

১) সমীক্ষাপত্র

২) গল্পের নাট্যরূপ

৩) গল্পের চিত্রনাট্য

৪) গ্রন্থ সমালোচনা

৫) নির্বাচিত রচনাকারের সাহিত্যশৈলী বিচার

৬) নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কালপর্বে সাহিত্যসংস্কৃতির বিকাশ

৭) নির্বাচিত সাহিত্য-সৃষ্ট চরিত্রের জীবনী নির্মাণ

৮) নির্বাচিত সাহিত্যিকের সাহিত্য-অবদান সম্পর্কিত প্রকল্প নির্মাণ 

 

প্রকল্প নির্মাণের সময় খেয়াল রাখতে হবেঃ

১) ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে হবে।

২) প্রকল্পের ভাষা হবে সহজসরল।

৩) প্রকল্প রূপায়ণে যেন সৃজনশীলতার ছাপ থাকে।

৪) প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক চিত্র, আলোকচিত্র, সারণি প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকল্পটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

৫) প্রকল্পটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে সুদৃশ্য মলাটে মুড়ে জমা করতে হবে। প্রকল্প খাতার প্রথম পাতায় প্রকল্পের বিষয়, শিরোনাম, ছাত্র/ছাত্রীর নাম, শ্রেণি, বিভাগ, ক্রমিক সংখ্যা, বর্ষ ইত্যাদি সুন্দরভাবে লিখতে হবে। 

৬) প্রক্লপ খাতার প্রথম পাতায় প্রকল্পের বিষয়, শিরোনাম, ছাত্র/ছারতীর নাম, শ্রেণি, বিভাগ, ক্রমিক সংখ্যা, বর্ষ ইত্যাদি সুন্দরভাবে লিখতে হবে। 

৭) এরপর প্রকল্পের মূল বিষয়বস্তু আলোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের বিষয়বস্তুকে বিভিন্ন Point-এ ভেঙে আলোচনা করা যেতে পারে।

ছাত্রছাত্রীর সুবিধার জন্য প্রকল্পের প্রথম পাতার একটি নমুনা দেওয়া হল- 

 

নির্বাচিত সাহিত্যসৃষ্ট চরিত্রের জীবনী নির্মাণঃ

প্রোফেসর শঙ্কুঃ 

সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট ‘প্রোফেসর শঙ্কু’ প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক পটভূমিকায় আঁকা একটি দেশজ চরিত্র। সুকুমার রায়ের ‘হেসোরাম হুঁশিয়ারের ডায়েরি’-তে আমরা শঙ্কুর পূর্বাভাস পাই।

গিরিডিতে জন্ম হলেও প্রোফেসর শঙ্কু আপাদমস্তক বাঙালি। তাঁর আসল নাম ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। তাঁর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু ছিলেন গিরিডির স্বনামধন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক; ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে তার বিস্তৃত উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘প্রোফেসর শঙ্কু ও ভূত’ গল্প থেকে জানা যায় তান্ত্রিক বটুকেশ্বর শঙ্কু ছিলেন শঙ্কুর ঠাকুরদা। শঙ্কুর ডায়েরি থেকে জানা যায়, তাঁর জন্মদিন ১৬ জুন। অসম্ভব কৃতি ছাত্র শঙ্কুর ডাকনাম তিলু। তিনি মাত্র বারো বছর বয়সে গিরিডির স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৪ বছর বয়সে কলকাতার কলেজে আইএসসি পাস করেন এবং ষোলো বছর বয়সে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে স্নাতক হন। জীবনে তিনি কখনও দ্বিতীয় হননি। এরপর শঙ্কু গিরিডিতে ফিরে এসে বাবার পরামর্শমতো চার বছর ধরে শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস ও দর্শন নিয়ে গভীর পড়াশোনা করেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে শঙ্কু নিজের কলেজেই পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

সতেরো বছর বয়স থেকে শঙ্কুর মাথায় টাক পড়তে শুরু করে। তাঁর বয়স যখন একুশ তখন তাঁর মাথা ভরা টাক। সত্যজিৎ রায়ের বর্ণনা অনুযায়ী পূর্ণবয়স্ক প্রোফেসর শঙ্কুর উচ্চতা পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি, গায়ের রং ফরসা, মাথায় টাক, কানের দু-পাশে ও ঘাড়ের কাছে পাকা চুল, মুখে দাড়ি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। সাধারণত তিনি কোট-প্যান্ট-টাই পরে থাকেন।

প্রোফেসর শঙ্কুর জীবনযাত্রার মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা লক্ষ করা যায়। তিনি প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ওঠেন, প্রাতভ্রমণে যান, নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। শঙ্কু প্রতিদিন ডায়েরি লেখেন। তাঁর ল্যাবরেটরি থেকে মোট চল্লিশটি ডায়েরি পাওয়া যায়। তাঁর ডায়েরির পাতা ছেঁড়ে না, বা পোড়ে না। এগুলি স্থিতিস্থাপক, অর্থাৎ টানলে বাড়ে, আবার ছেড়ে দিলে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ডায়েরির কালির রং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়। প্রোফেসর শঙ্কুর আবিষ্কার ও অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চকর কাহিনির বর্ণনা পাওয়া যায় ডায়েরির লেখাগুলিতে। এই লেখাগুলি থেকেই জানা যায়, তিনি বিশ্বের একুশটি জায়গায় নানান অভিযান চালান। ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, স্পেন, নরওয়ে, সুইডেন, মিশর প্রভৃতি দেশে তিনি যেমন গেছেন, তেমনি ঘুরে বেড়িয়েছেন আফ্রিকার জঙ্গলে, সাহারার মরুভূমিতে, এমনকি নিজের তৈরি মহাকাশযানে চড়ে পৌঁছে গেছেন মঙ্গলগ্রহেও।

প্রোফেসর শঙ্কুর আবিষ্কারের সংখ্যাও কিছু কম নয়। তাঁর আবিষ্কারের তালিকায় রয়েছে সর্বরোগহর বড়ি মিরাকিউরল, লুপ্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনার যন্ত্র রিমেমব্রেন, ঘুমের অব্যর্থ ওষুধ সমনোলিন, স্যাস্ত্র বা স্নাফগার নামে এমন এক অস্ত্র যা প্রয়োগ করলে তেত্রিশ ঘণ্টা ধরে হাঁচি হয়, শত্রুকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করার অস্ত্র অ্যানাইহিলিন, সস্তায় আলো পাওয়ার যন্ত্র লুমিনিম্যাক্স, শীত-গ্রীষ্মে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ওষুধ এয়ারকন্ডিশনিং পিল, খিদে দূর করে পেট ভরানোর ওষুধ বটিকা ইন্ডিকা, যে-কোনো অচেনা ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের জন্য লিঙ্গুয়াগ্রাফ, রঙিন ছবি তুলে পনেরো সেকেন্ডে প্রিন্ট করার জন্য ক্যামেরাপিড, অনেক উঁচু, নীচু কিংবা দূর পর্যন্ত দেখার জন্য অমনিস্কোপ, ভূতকে হাজির করার যন্ত্র নিওস্পেকট্রোস্কোপ, অ্যান্টিগ্র্যাভিটি ধাতু শ্যাঙ্কোরভাইট ইত্যাদি। এ ছাড়াও মাইক্রোসোনোগ্রাফ ম্যাঙ্গোরেঞ্জ, নার্ভিসার, অরনিথন, শ্যাঙ্কলন, অক্সিমোর, মার্জারিন প্রভৃতি নানারকম যন্ত্র, ওষুধ বা গ্যাজেটের আবিষ্কর্তা তিনি। এইসব যন্ত্রপাতি বা ওষুধগুলির কোনোটাই বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না, সবই প্রফেসরের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে তৈরি। এমনকি মহাকাশ অভিযানের জন্য রকেটটিও তাঁর নিজের তৈরি। তিনি ‘রোবুল’ ও ‘বিধুশেখর’ নামে দুটি যন্ত্রমানব বা রোবটও তৈরি করেন। বাবা মারা যাওয়ার পর অবিবাহিত শঙ্কুর জীবনে সর্বক্ষণের সঙ্গীদের মধ্যে বিধুশেখর একজন। অন্য সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছে তাঁর ২৭ বছরের পুরোনো চাকর প্রহ্লাদ এবং ২৪ বছর বয়সি বেড়াল নিউটন।

প্রকৃতিগতভাবে শঙ্কু অসম সাহসী, ঠান্ডা মাথা, সংযমী এবং আত্মভোলা। অনুসন্ধিৎসু এবং যুক্তিবাদী হওয়া বিজ্ঞানী সত্ত্বেও তিনি ভূতপ্রেত, মন্ত্রতন্ত্র, টেলিপ্যাথি প্রভৃতি অতিলৌকিক বিষয়েও বিশ্বাসী। নিজের আবিষ্কারের নিরিখে প্রফেসর নিজেকে টমাস আলভা এডিসনের পরেই স্থান দেন। তিনি সৎ, নির্লোভী এবং আদর্শবাদী বিজ্ঞানী। লোভী, ব্যবসায়ী বা অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি কখনও পিছপা হননি। তাই বিশ্বজুড়ে তাঁর শত্রুর সংখ্যা কম নয়। এইসব শত্রুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অস্ট্রিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী ড. কার্ল গ্লোপিয়াস, নরওয়ের গ্রেগর লিল্ডকুইস্ট, নৃতত্ত্ববিদ ডা. ক্লাইন, ইটালির পদার্থবিদ লুইজি রন্ডি, সুইটজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী হামবোল্ট। তাঁর বন্ধুরাও ছড়িয়ে আছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। এঁদের সকলেই বিজ্ঞানী। এঁরা হলেন ইংল্যান্ডের জেরেমি সভার্স, বায়োকেমিস্ট সামারভিল, জার্মানির উইলহেলস ক্লোল প্রমুখ। অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী নকুড়চন্দ্র বিশ্বাসও তাঁর ক্ষমতার বলে প্রোফেসরকে নানা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। তাঁর গিরিডির প্রতিবেশী অবিনাশ একটু অতিরিক্ত কৌতূহলী হলেও শঙ্কুর বেশ কয়েকটি অভিযানে তিনি তাঁর সঙ্গী হন এবং উপস্থিত বুদ্ধির দ্বারা শঙ্কুকে নানাভাবে সাহায্যও করেন।

প্রোফেসর শঙ্কু তাঁর কাজের সুবাদে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহলে সসম্মানে আদৃত হয়েছেন। তাঁর উদ্ভাবনী প্রতিভা এবং বিস্ময়কর আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স তাঁকে বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানীর সম্মান জানিয়েছে।

সব মিলিয়ে প্রোফেসর শঙ্কু একজন বিশ্বনাগরিক। বিশ্বের বাণী তাঁর প্রত্যেকটি গল্পের পটভূমি রচনা করেছে। তবে মযাত্রীর ডায়েরি’ অনুযায়ী বেশ কয়েক বছর ধরে প্রোফেসর শঙ্কু নিরুদ্দেশ। কেউ কেউ বলেন, কোনো এক ভয়ানক এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে তিনি নাকি প্রাণ হারান। আবার অনেকের ধারণা, শঙ্কু জীবিত। আমাদের দেশেরই কোনো এক অজ্ঞাত এলাকায় আত্মগোপন করে তিনি নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যথাসময়ে আত্মপ্রকাশ করবেন। 

প্রকল্পের শেষে শিক্ষার্থীদের তথ্যসূত্র প্রদান করে বিদ্যালয়ের বিষয় শিক্ষকের কৃতজ্ঞতা স্বীকার লিখতে হবে। 

শিক্ষালয়ের সাথে ফেসবুকে যুক্ত হতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবেঃ sikkhalaya

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি বিজ্ঞাপন ব্লক করতে এক্সটেনশন ব্যবহার করছেন। এই বিজ্ঞাপন ব্লকার নিষ্ক্রিয় করে আমাদের সমর্থন করুন।

Powered By
100% Free SEO Tools - Tool Kits PRO

You cannot copy content of this page

Need Help?