আফ্রিকা । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । দশম শ্রেণি বাংলা
আফ্রিকা । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । দশম শ্রেণি বাংলা :
আফ্রিকা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে
নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত,
তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে
রুদ্র সমুদ্রের বাহু
প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে
ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা-
বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়
কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।
সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি
সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য,
চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত,
প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু
মন্ত্র জাগাচ্ছিল তোমার চেতনাতীত মনে।
বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে
বিরূপের ছদ্মবেশে,
শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে
আপনাকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়
তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে।।
কালো ঘোমটার নীচে
অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ
উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।
এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে,
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এল মানুষ-ধরার দল
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
সভ্যের বর্বর লোভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে
পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে,
দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়
বীভৎস কাদার পিণ্ড
মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা
সকালে সন্ধ্যায়, দয়াময় দেবতার নামে;
শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;
কবির সংগীতে বেজে উঠছিল
সুন্দরের আরাধনা।।
প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস,
যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল-
অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল,
এসো যুগান্তরের কবি,
আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;
বলো ‘ক্ষমা কর’-
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে
সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।।
আফ্রিকা কবিতার উৎসঃ
‘আফ্রিকা’ কবিতাটি ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর‘-এর ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এটি পরবর্তী সময়ে ‘সঞ্চয়িতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। আফ্রিকা কবিতার প্রকাশকাল চৈত্র, ১৩৪৩ বঙ্গাব্দ। আফ্রিকা কবিতাটি প্রথম প্রবাসী পত্রিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
আফ্রিকা কবিতার বিষয়বস্তু :
উপেক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকা এক মহাদেশের প্রতি কবি তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য স্বরূপ এই কবিতাটি রচনা করেছেন। সৃষ্টির সূচনা থেকেই আফ্রিকা ছিল নিবিড় অরণ্যে পূর্ণ অসূর্যম্পশ্যা এক দেশ। কিন্তু সেই ভয়ংকরতাই হয়েছে আফ্রিকার রক্ষাকবচ। বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায় আফ্রিকা নিজেকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে নিয়েছে। দুর্গম এবং দুর্বোধ্য আফ্রিকাকে উপেক্ষা করেছে উন্নত বিশ্ব। তার পরিচয় থেকে গিয়েছে অন্ধকার মহাদেশ হিসেবেই। পরবর্তীকালে আফ্রিকার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। আফ্রিকার বুকে আগমন ঘটেছে ‘মানুষ-ধরার দল”-এর। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের সাম্রাজ্যের বেড়াজাল বিস্তার করে তৈরি করেছে দাসব্যবস্থা। সভ্যের বর্বর লোভ আফ্রিকায় তৈরি করেছে নির্লজ্জ অমানবিকতার এক কলঙ্কিত ইতিহাস। অসহায় সাধারণ মানুষের রক্ত আর চোখের জলে সিক্ত হয়েছে আফ্রিকার মাটি।
অপরদিকে উন্নত দেশগুলিতে মানুষ শান্তিতে ঈশ্বরের আরাধনায় মেতে ছিল; তাদের মন্দিরে মন্দিরে বাজছিল পুজোর ঘন্টা। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুরক্ষিত ছিল তাদের মায়ের কোলে। কবির সংগীতে বেজে উঠছিল সুন্দরের আরাধনা। দিনের অন্তিমকাল ঘোষণার সময় যখন সমাগত, তখন কবি যুগান্তরে কবি অর্থাৎ ঈশ্বরকে ‘মানহারা মানবী’ আফ্রিকার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এভাবেই বিশ্বমানব-মৈত্রীর মধ্য দিয়ে আফ্রিকার এক নব উত্থানকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলোচ্য কবিতার মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন।
আফ্রিকা । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । দশম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নের উত্তরঃ
১) আফ্রিকা কবিতার MCQ প্রশ্নের উত্তর দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
২) আফ্রিকা কবিতার SAQ প্রশ্নের উত্তর দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
৩) আফ্রিকা কবিতার ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
৪) আফ্রিকা কবিতার বড়ো প্রশ্নের উত্তর দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
৫) আফ্রিকা কবিতার MCQ TEST প্রদান করতে এই লিঙ্কটি অনুসর করতে হবে
দশম শ্রেণির অধ্যায়ভিত্তিক বাংলা প্রশ্নের উত্তর দেখতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবে
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
- বাংলা ব্যাকরণের আলোচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে প্রদান করা প্রবন্ধ রচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক নোট দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ TEST প্রদান করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- শিক্ষালয় ইউটিউব চ্যানেলটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সাজেশন দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার নোট, সাজেশন, প্রশ্নপত্র ও মক টেষ্টের সুবিধা গ্রহণ করতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করে বিষদ তথ্য জেনে নাওঃ