সিরাজদ্দৌলা । শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত । দশম শ্রেণি বাংলা
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাধ্যমিক বাংলা সিরাজদ্দৌলা । শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত । দশম শ্রেণি বাংলা প্রদান করা হলো। দশম শ্রেণির মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা এই সিরাজদ্দৌলা । শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত । দশম শ্রেণি বাংলা অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তাদের পাঠ্য নাট্যাংশটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবে এবং তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
সিরাজদ্দৌলা । শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত । দশম শ্রেণি বাংলা :
সিরাজদ্দৌলা
শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
[দরবার কক্ষ। সিরাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট। কর্মচারীরা যথাস্থানে উপবিষ্ট। সভাসদদের মাঝে মীরজাফর, মোহনলাল, মীরমদন, রায়দুর্লভ একদিকে-অন্যদিকে রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, ওয়াটস্, মঁসিয়ে লা দণ্ডায়মান। গোলাম হোসেন যথারীতি নবাবের পায়ের কাছে বসিয়া আছে।
সিরাজ। ওয়াটস!
ওয়াটস। Your Excellency!
সিরাজ। কলকাতা জয়ে যখন আমরা যাত্রা করি, তখন তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গেই ছিলে। সুতরাং কলকাতা জয়ের ইতিহাস তুমি জান। তুমি জান যে কলকাতা জয় করে সেই নগরের নাম আমরা আলিনগর রাখি।
তোমাদের কোম্পানি সন্ধির সকল সর্ত যাতে রক্ষা করে তারই জন্যে প্রতিভূরূপে তোমাকে মুর্শিদাবাদে রাখা হয়েচে। কোম্পানি সন্ধি-সর্ত রক্ষা না করলে, যুদ্ধঘোষণার আগেই, তোমাকে আমরা তোপের মুখে উড়িয়ে দিতে পারি, জান?
ওয়াটস। জানে Your Excellency!
সিরাজ। তুমি প্রস্তুত হও।
ওয়াটস। আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ! সিরাজ। তোমাদের অপরাধ, সভ্যতার, শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেচে। স্পর্ধা তোমাদের আকাশস্পর্শী হয়ে উঠেচে। শুধু শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় আমি এতদিন তোমাদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে এসেচি। কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা! ওয়াটস। আপনার অভিযোগ বুঝিতে পারিলাম না! সিরাজ। মুন্সিজি, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্র!
[মুন্সিজি একখানি পত্র বাহির করিলেন]
সিরাজ। এই পত্র সম্বন্ধে তুমি কিছু জান?
[মুন্সি পত্র ওয়াটসকে দিলেন। ওয়াটস পড়িতে লাগিলেন]
শেষের দিকে কী লেখা আছে? ওয়াটস। I now acuaint you, that the remainder of the troops, which should have been here long since (and which I hear the Colonel told you he expected) will beat at Calcutta in a few days; that in a few days more I shall despatch a vessel for more ships and more troops and that I will kindle such a flame in your country as all the water in the Ganges hall not be able to extinguish. সিরাজ। মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।
[মুন্সি পত্র লইয়া বাংলা তর্জমা শুনাইলেন মুন্সি। কর্নেল ক্লাইভ যে সৈন্যের কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন, তাহা শীঘ্রই কলিকাতায় পৌঁছিবে। আমি সত্বর আর একখানা জাহাজ মাদ্রাজে পাঠাইয়া সংবাদ দিব যে, আরো সৈন্য এবং আরো জাহাজ বাংলায় আবশ্যক। বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানো যাইবে না। সিরাজ। ওয়াটস! এ ভীতি প্রদর্শনের অর্থ কী? ওয়াটস। Admiral এ-কথা লিখিয়াছেন কেন, আমি বুঝি না। সিরাজ। বুঝিয়ে আমি দিচ্ছি। মুন্সিজি, ওয়াটসের পত্র!
[মুন্সি পত্রখানা বাহির করিলেন] আপনিই পড়ুন, ওর হাতে দেবেন না। আচ্ছা, ওকে একবার দেখিয়ে নিন। [ওয়াটস পত্র দেখিল]
বলতে পার যে, তোমার হাতের লেখা নয়?
ওয়াটস। হাঁ, আমি লিখিয়াছে।
সিরাজ। পড়ুন মুন্সিজি!
মুন্সি। It is impossible to rely upon the Nabob and it will be wise to attack Chandernagore. নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব। চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সিরাজ। তোমাদের অভদ্রতার, ঔদ্ধত্যের আরো পরিচয় চাও? জেনে রাখো, তাও আমি দিতে পারি। আমার সভাসদরা, আমার স্বদেশীয়রা তারস্বরে ঘোষণা করে-আমি নির্বোধ, অত্যাচারী, বিলাস-সর্বস্ব; কিন্তু আমি যে সকলের শয়তানির সন্ধান রাখি, তার সামান্য পরিচয় আজ দিয়ে রাখলাম। তুমি ওয়াটস, তুমি আমারই দরবারে স্থান পেয়ে আমার সভাসদদের আমারই বিরুদ্ধে উত্তেজিত কর, কলকাতায় ইংরেজদের উপদেশ দাও আমারই আদেশ লঙ্ঘন করে কাজ করতে। জান এর শাস্তি কী?
ওয়াটস। Punish me, Your Excellency, if you will. I can only say that I have done my duty. সিরাজ। এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো। ভবিষ্যতে আর কখনো এ-দরবারে তুমি স্থান পাবে না। তোমার কোম্পানি যদি সদ্ব্যবহার দিয়ে আমাকে আবার খুশি করতে পারে, তা হলো কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে কোনো সচ্চরিত্র ইংরেজকে আমি দরবারে স্থান দোব, তোমাকে নয়-আর তাও এখন নয়। যাও। ওয়াটস। Farewell, Your Excellency!
[নবাবকে কুর্নিশ করিয়া ওয়াটস বাহির হইয়া গেলেন
রাজবল্লভ। জাঁহাপনা!
সিরাজ। একটু অপেক্ষা করুন রাজা।- মঁসিয়ে লা!
মঁসিয়ে লা। At your command, Your Excellency.
[সিংহাসনের সামনে গিয়া কুর্নিশ করিলেন]
সিরাজ। তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত। তোমরা, ফরাসিরা, বহুদিন থেকেই বাংলা দেশে বাণিজ্য করচ। আমার সঙ্গে কখনো তোমরা অসদ্ব্যবহার করনি। ইংরেজদের সঙ্গে তোমাদের বিবাদ আজকাল নয়, আর এ-দেশের কোনো ব্যাপার নিয়েও নয়। সাগরের ওপারে তোমরা পরস্পর পরস্পরের টুটি চেপে মারলেও আমার কিছু বলবার থাকে না। আমার রাজ্যে তোমরা শান্ত হয়ে থাক, এই আমার কামনা। ইংরেজরা আমার সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেচে, সমস্ত ফরাসি বাণিজ্য কুঠি তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক এই মর্মে দাবি উপস্থিত করেচে। তোমরা প্রতিকারের আশায় আমার কাছে উপস্থিত হয়েচ।
মঁসিয়ে লা। We have always sought for your protection, Your Excellency.
সিরাজ। কলকাতা জয়ে আর পূর্ণিয়ার শওকতজঙ্গের সঙ্গে সংগ্রামে আমার বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েচে। আমার মন্ত্রিমণ্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এরূপ অবস্থায়, তোমাদের প্রতি আমার অন্তরের পূর্ণ সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও, আমি তোমাদের জন্যে ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদে প্রবৃত্ত হতে পারি না। আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো।
[সভা কিছুকাল স্তব্ধ রহিল। মঁসিয়ে-লা মাথা নত করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। তাহার পর ধীরে মাথা তুলিয়া নবাবের দিকে চাহিলেন, ক্ষুব্ধকণ্ঠে কহিলেন:]
মঁসিয়ে লা। Your Excellency! You refuse us your help, your protection though with great reluc- tance. I appreciate your feelings. I understand the predicament you are in, I am sorry for you. And I am sorry for ourselevs. We have no other choice than to leave this land, which we have learnt to love. Allow me, Your Excellency, to warn you that you are in a great danger. On our departure from this land, the smothered flame will burst forth and will destroy you kingdom and people.
[সিরাজ সিংহাসন হইতে নামিয়া আসিলেন। মঁসিয়ে-লা’র সামনে দাঁড়াইয়া কহিলেন:]
সিরাজ। আমার বিপদ সম্বন্ধে আমাকে সচেতন করে তুমি আমার প্রতি তোমার অন্তরের প্রীতিরই পরিচয় দিয়েচ। তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে। প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে স্মরণ করব। তখন যেন আমাকে ভুলো না বন্ধু।
মঁসিয়ে লা। I know we shall never meet.
[দুইজনেই চুপ করিয়া রহিলেন
Farewell, Your Excellency!
[কুর্নিশ করিয়া চলিয়া গেলেন। সিরাজ তাঁহার পিছু পিছু খানিকটা অগ্রসর হইয়া স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। তারপর দ্রুত ফিরিয়া রাজা রাজবল্লভের নিকট অগ্রসর হইয়া কহিলেন]
সিরাজ। আপনি যেন কী বলবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন, রাজা?
রাজবল্লভ। এখন সে কথা নিরর্থক।
[সিরাজ হাসিয়া বলিলেন]
সিরাজ। জানেন ত! আমাকে কোনো কথা বলেই লাভ নেই-সর্ব-চিকিৎসার বাইরে আমি!
[সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হইলেন]
রাজবল্লভ। ওয়াটস সাহেবকে ওরকম করে বিদায় না দিলেও চলত।
[সিরাজ ফিরিয়া আসিলেন]
সিরাজ। ওয়াটস-ক্লাইভ-ওয়াটসন কোম্পানির কথা থাক, ইংরেজ-ফরাসি-পোর্তুগীজ প্রসঙ্গ পরিহার করুন। নিজেদের কথা বলুন রাজা, নিজেদের কথা ভাবুন।
জগৎশেঠ। ভাবা যখন উচিত ছিল, তখন যে কিছুই ভাবেননি জাঁহাপনা!
[সিরাজ দ্রুত তাহার দিকে ফিরিলেন।
সিরাজ। সে অপরাধ কি বার বার আমি স্বীকার করিনি! আপনাদের সকল অভিযোগ অবনত মস্তকে আমি গ্রহণ করিচি। কখনো কোনো কটূক্তির প্রতিবাদ করিনি। আপনাদের স্পর্ধা নিয়ে কখনও প্রশ্নও তুলিনি। আপনারা সারা দেশে আমার দুর্নাম রটিয়েচেন, কর্মচারীদের মনে অশ্রদ্ধা এনে দিয়েচেন, আত্মীয়-স্বজনের মন দিয়েচেন বিষিয়ে। আর কত হেয় আমাকে করতে চান আপনারা?
জগৎশেঠ। আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করে আমাদের লাভ?
সিরাজ। স্বার্থসিদ্ধি।
জগৎশেঠ। স্বার্থের সন্ধানে আমরা যদি নিযুক্ত থাকতাম- সিরাজ। বলুন, তা হলে? জগৎশেঠ। তা হলে বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন। সিরাজ। এত বড়ো কথা আমার মুখের ওপর বলতে আপনার সাহস হয়। জগৎশেঠ। আপনার উপদ্রবই আমাদের মনে এই সাহস এনে দিয়েচে। সিরাজ। আমার উপদ্রব নয় শেঠজি, আমার সহিষুতাই আপনাদের স্পদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে! মীরজাফর। জাঁহাপনা মানী-লোকের মানহানি করে আপনি আমাদের সকলেরই অপমান করেচেন। সিরাজ। সকলে মিলে আপনারাই কি আমার কম অপমান করেচেন! রাজবল্লভ। আমরা কেউ মিথ্যা কলঙ্ক রটাইনি। সিরাজ। সত্যাশ্রয়ী রাজা! বলুন, সিংহাসনে আরোহণ করবার পরে, এই এক বছরের মধ্যে, কী অনাচার আমি করিচি? বলুন কটা রাত আমি নিশ্চিন্তে কাটিয়েচি, কটা দিন আপনারা আমাকে বিশ্রামের অবসর দিয়েচেন? বলুন! রাজবল্লভ। আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন-প্রণালী আমাদের কণ্ঠস্থ থাকবার কথা নয়। সিরাজ। অথচ কবে, কোথায়, কখন, কোন অনাচার আমি করিচি, তা আপনারা নির্ভুল বলে দিতে পারেন! রাজবল্লভ। পারি এই জন্যই যে পাপ কখনও চাপা থাকে না! সিরাজ। পাপ যে চাপা থাকে না, হোসেনকুলী প্রাণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
[রাজবল্লভের সম্মুখে গিয়া
নিজের জীবন দিয়ে কি আবার তা বুঝতে চান?
[রাজবল্লভ মাথা নীচু করিলেন]
শেঠজি, জাফর আলি খাঁ, আপনাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধুর মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখুন! মীরজাফর। এই তরবারি স্পর্শ করে আমি শপথ করচি জাঁহাপনা, আপনি যদি মানী-লোকের এইরূপ অপমান করেন, তা হলে আপনার স্বপক্ষে কখনো অস্ত্র ধারণ করব না। মোহনলাল। আজ পর্যন্ত কদিন তা ধারণ করেচেন, সিপাহসালার? মীরজাফর। পূর্ণিয়ার যুদ্ধে অপদার্থ শওকতকে হত্যা করে বুঝি এই স্পর্ধা তোমার হয়েচে মোহনলাল? মীরমদন। কোনো যুদ্ধে কৃতিত্ব না দেখিয়েও আমি জিজ্ঞাসা করচি, কলকাতা জয় থেকে শুরু করে পূর্ণিয়া বিজয় পর্যন্ত কবে সিপাহসালার নবাবকে সাহায্য করেচেন? মীরজাফর। জাঁহাপনা! নীচের এই স্পর্ধা! মোহনলাল। নীচপদস্থ কর্মচারীদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাজের সমালোচনা করা উচিত নয়, এ-কথা যেমন আপনাদের সব সময়েই মনে থাকে, তেমন এ-কথাও মনে রাখা কি উচিত নয় যে, নবাবের কাজের সমালোচনাও সব সময়ে শোভন নয়?
মীরমদন। এ রাজ্যের সকল প্রধান প্রধান সেনাপতি, আমির ওমরাহ, রইস রাজা, মনে করেচেন, নবাব একেবারে অসহায়; সিংহাসন রক্ষা ত নয়ই-আত্মরক্ষার শক্তিও তাঁর নেই। আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না, এ কথা তাঁদের মনে রাখা উচিত।
মীরজাফর। এই সব অর্বচীনকে দিয়েই যখন নবাবের কাজ চলবে, তখন চলুন রাজা রাজবল্লভ, চলুন শেঠজি, চলুন দুলর্ভরায়, এই দরবার আমরা ত্যাগ করি। নবাব থাকুন তাঁর কর্মক্ষম, শক্তিমান, পরম বিচক্ষণ মন্ত্রী আর সেনাপতিদের নিয়ে। গোলামহোসেন, মোহনলাল আর মীরমদন যখন রয়েচে, তখন আর ভাবনা কী? চলুন!
[রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, দুর্লভরায় প্রস্থানের উদ্যোগ করিলেন]
সিরাজ। দাঁড়ান!
[সকলে স্থির হইয়া দাঁড়াইলেন]
দরবার ত্যাগ করতে হলে নবাবের অনুমতি নিতে হয়, এ কথাও আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে? মীরজাফর। দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা। সিরাজ। বাধ্য হয়ে দরবার ত্যাগ করতে হবে আপনাদের তখন, যখন আপনাদের বন্দি করা হবে। মুন্সিজি, সিপাহসালারের কাছে ওয়াটস যে পত্র লিখেছিলেন, সেই পত্র।
[মুন্সিজি পত্র বাছিতে লাগিলেন]
সিরাজ। হাঁ, নবাবের সিপাহসালার! খোজা পিছুর মারফৎ ওয়াটস এই পত্রখানি আপনারই উদ্দেশে পাঠিয়েছিল;
মীরজাফর। আমার কাছে ওয়াটস পত্র লিখেছিলেন! কিন্তু আপনার দুর্ভাগ্যবশত আমাদের হস্তগত হয়েচে। দেখতে চান? মীরজাফর। নবাবের অনুগ্রহ। সিরাজ। সভাসদদের শুনিয়ে দোব? মীরজাফর। পত্রের বিষয় ত আমি অবগত নই জাঁহাপনা। সিরাজ। সবাইকে শুনিয়ে আপনাকে লজ্জা দেবো না। কেন না আপনি আমার সিপাহসালার। পত্রখানা আপনাকে দেখতেও দোব না, কেন না তা হলে যে উদ্দেশ্যে এই পত্র প্রেরিত হয়েছিল, তাই সিদ্ধ হবে।
মীরজাফর। জাঁহাপনা তা হলে কী করবেন স্থির করেচেন?
সিরাজ। রাজদ্রোহে লিপ্ত প্রজা সম্বন্ধে কী ব্যবস্থা করা উচিত বিবেচনা করেন?
[মীরজাফর কোন কথা কহিলেন না]
রাজা রাজবল্লভ কী বলেন?
রাজবল্লভ। আমারও কোনো গোপন-লিপি কি জাঁহাপনা আবিষ্কার করেচেন? সিরাজ। রাজা রাজবল্লভকে আমরা চিনি। তিনি কাঁচা কাজ করেন না। জাফর আলি খাঁ! মীরজাফর। নবাব কি প্রকাশ্য দরবারেই আমার বিচার করতে চান?
[নবাব তাঁহার দিকে চাহিলেন। তিনি সিংহাসন হইতে নামিয়া আসিলেন]
সিরাজ। জাফর আলি খাঁ! আজ বিচারের দিন নয়, সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন! অন্যায় আমিও করেচি, আপনারাও করেচেন। খোদাতালার কাছে কে বেশি অপরাধী তা তিনিই বিচার করবেন। আজ আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন যে, বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।
রাজবল্লভ। এই দুর্দিনের জন্য কে দায়ী জনাব?
সিরাজ। আবারও বিচার রাজা!
রাজবল্লভ। বিচার নয় জাঁহাপনা। আমি বলতে চাই যে, এখনও সময় আছে। এখনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপোষে নিষ্পত্তি সম্ভবপর।
সিরাজ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপোষ! রাজা, ওয়াটসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেও কি আপনারা তাদের মনোভাব বুঝতে পারেননি? কলকাতায় সৈন্যসমাবেশ, চন্দননগর আক্রমণ, কাশিমবাজার অভিমুখে অভিযান, সবই কি শান্তি স্থাপনের প্রয়াস?
জগৎশেঠ। নবাব যদি কলকাতা আক্রমণ না করতেন, তা হলে এসব কিছুই আজ হতো না।
সিরাজ। কলকাতার দুর্গকে তারা যদি দুর্ভেদ্য করে তুলতে না চাইত, তা হলে আমাকেও কলকাতা আক্রমণ করতে হতো না! বাংলাদেশ অরাজক ছিল না। কোম্পানির দুর্গ প্রতিষ্ঠার কী প্রয়োজন ছিল বলতে পারেন?
মীরজাফর। আপনি আমাদের কী করতে বলেন জাঁহাপনা!
সিরাজ। সবার আগে বলি-বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন। আপনাদের সকলের সমবেত চেষ্টার ফলে যদি এই বিপদ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাই, তা হলে একদিন আপনারা আমার বিচারে বসবেন। সেদিন যে দণ্ড আপনারা দেবেন, আমি মাথা পেতে নোব। আমাকে অযোগ্য মনে করে আর কাউকে যদি এই সিংহাসনে বসাতে চান, আমি হৃষ্টমনে সিংহাসনে ছেড়ে দোব।
[সকলে নীরব রহিলেন]
জাফর আলি খাঁ, আপনি শুধু সিপাহসালার নন, আপনি আমার পরম আত্মীয়। বিপদে আপন-জন জেনে বুকে ভরসা নিয়ে যার কাছে দাঁড়ানো যায় সেই না আত্মীয়। লোভে পড়ে, অথবা মোহের বশে, মানুষ অনেক সময় অনেক অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয়; কিন্তু কর্তব্যের আহ্বানে লোভ মোহ জয় করে যে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পাবে, সেই ত পুরুষ। সে পৌরুষ আপনার আছে, আমি জানি।
[একটু চুপ করিয়া সকলের মুখভাব লক্ষ করিয়া দেখিলেন। তারপর আবার বলিতে লাগিলেন]
রাজা রাজবল্লভ, ভাগ্যবান জগৎশেঠ, শক্তিমান রায়দুর্লভ, বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়-মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা। অপরাধ আমি যা করিচি, তা মিলিত হিন্দু-মুসলমানের কাছেই করিচি-আঘাত যা পেয়েচি তাও মিলিত হিন্দু-মুসলমানের কাছ থেকেই পেয়েচি। পক্ষপাতিত্বের অপরাধে কেউ আমরা অপরাধী নই। সুতরাং আমি মুসলমান বলে আমার প্রতি আপনারা বিরূপ হবেন না।
[আবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন। আবার বলিলেন:]
বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা, জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী; শুধু সুপ্ত সন্তান-শিয়রে রুদ্যমানা জননী নিশাবসানের অপেক্ষায় প্রহর গণনায় রত। কে তাঁকে আশা দেবে? কে তাঁকে ভরসা দেবে? কে শোনবে জীবন দিয়েও রোধ করব মরণের অভিযান?
মীরজাফর। জাঁহাপনা, জনাব! সিরাজ। আপনি! হাঁ আপনি সিপাহসালার, আপনিই তা পারেন। মীরজাফর। আমি শপথ করচি জাঁহাপনা, আজ থেকে সর্বসময়ে সর্বক্ষেত্রে, আপনার সহায়তা করব। মোহনলাল। আমিও শপথ করচি সিপাহসালারের সকল নির্দেশ মাথা পেতে নোব। মীরমদন। তাঁর আদেশে হাসিমুখেই মৃত্যুকে বরণ করব। সিরাজ। আমি আজ ধন্য! আমি ধন্য! গোলামহোসেন। জনাব, পলাশির কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছিলেন। সিরাজ। হাঁ, পলাশি! সিপাহসালার, পলাশি-প্রান্তরে আমাদের সৈন্য সমাবেশ করতে হবে। ক্লাইভের নেতৃত্বে কোম্পানির ফৌজ সেই পথেই এগিয়ে আসছে। আপনার আদেশ পালন করবার জন্য রায়দুর্লভ, ইয়ারলতিফ, মোহনলাল, মীরমদন, সিনফ্রে, সবাই নিজ নিজ সৈন্যবাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকবেন। আমিও আপনার আদেশবহ হয়ে থাকব। আপনাদের আর আমি দরবারে আবদ্ধ রাখব না। আপনারা পলাশি যাত্রার আয়োজন করুন!
[প্রথমে সৈন্যাধ্যক্ষগণ এবং পরে সভাসদগণ দরবার ত্যাগ করিলেন। রহিলেন শুধু সিরাজ আর গোলাম হোসেন। সিরাজ চারিদিকে চাহিলেন, তারপর ধীরে ধীরে সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হইলেন, সামনে নুইয়া পড়িয়া সিংহাসনের দিকে চাহিয়া রহিলেন, ঘাড় ঘুরাইয়া অস্ফুট কণ্ঠে ডাকিলেন]
সিরাজ। গোলামহোসেন!
গোলামহোসেন। জাঁহাপনা!
সিরাজ। সিংহাসন কি টলছে?
গোলামহোসেন। না, জাঁহাপনা।
সিরাজ। ভালো করে দ্যাখ ত।
[দুইজনেই সিংহাসন দেখিতে লাগিলেন। ধীরে ধীরে ঘসেটি বেগম প্রবেশ করিলেন, দাঁড়াইয়া দেখিলেন। তারপর কহিলেন:]
ঘসেটি। ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো! সিরাজ। কে!
[দ্রুত ঘুরিয়া দাঁড়াইয়া ঘসেটিকে দেখিলেন। হাসিয়া কহিলেন]
ও আপনি!
[কাছে অগ্রসর হইলেন]
কাজ আছে? তা স্মরণ করলেই ত দেখা করতাম।
ঘসেটি। নবাবের অবসরের বড়োই অভাব, না?
সিরাজ। বিপদ এমনি ঘনিয়ে আসচে যে, একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়িচি।
ঘসেটি। এখনও বিপদ? ঘসেটি বেগম তোমার বন্দি, শওকতজঙ্গ রণক্ষেত্রে নিহত, প্রতিদ্বন্দ্বী আর কোথাও
নেই, এখনও বিপদের ভয়!
সিরাজ। কোম্পানির ফৌজ কাশিমবাজার অভিমুখে অভিযান করেচে।
ঘসেটি। করেচে!
সিরাজ। সেই সংবাদই পেয়েচি!
ঘসেটি। তা হলে মুর্শিদাবাদেও তারা আসবে?
সিরাজ। তেমনি দুর্দিন কে কামনা করে মা!
ঘসেটি। দুর্দিন না সুদিন?
সিরাজ। সুদিন!
ঘসেটি। সুদিন নয়? ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে, সিরাজের পতন হবে, সুদিন নয়?
সিরাজ। আপনি বুঝতে পারচেন না, আপনি কী বলচেন!
ঘসেটি। বেশ বুঝতে পারচি। অন্তরে যে কথা দিন-রাত গুমরে গুমরে মরচে, তাই আজ ভাষায় প্রকাশ করচি। মাসিকে তুমি গৃহ-হারা করেচ, মাসির সর্ব্বস্ব লুটে নিয়েচ, মাসিকে দাসী করে রেখেচ। মাসি তা ভুলবে?
সিরাজ। অকারণে অভাগাকে আর তিরস্কার করবেন না।
ঘসেটি। অকারণে!
সিরাজ। নয় কি?
ঘসেটি। মতিঝিল কে অধিকার করেচে? আমার সঞ্চিত সম্পদ কে হস্তগত করেচে? কে আমার পালিত পুত্রকে সিংহাসন থেকে দূরে রেখেচ? তুমি নও, দস্যু?
সিরাজ। মতিঝিল আপনারই রয়েচে মা।
ঘসেটি। তা হলে সেখানে যাবার অধিকার কেন আমার নেই?
সিরাজ। রাজনীতির কারণে।
ঘসেটি। তোমার রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্বন্ধ? আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই-আছে শুধু প্রতিহিংসা। এই প্রতিহিংসা আমার পূর্ণ হবে সেইদিন-যেদিন তোমার এই প্রাসাদ অপরে অধিকার করবে, তোমাকে ঐ সিংহাসন থেকে ঠেলে ফেলে শওকতজঙ্গের মতো কেউ যেদিন তোমাকে…
[লুৎফা ছুটিয়া আসিল]
লুৎফা। মা, মা, তোমার মুখের ও-কথা শেষ কোরো না মা।
ঘসেটি। নবাব-মহিষী!
লুৎফা। নবাব-মহিষী নই মা, তোমার কন্যা।
ঘসেটি। নবাব-মহিষী নও? আজ ভাবচ খুবই বিনয় করলে, কিন্তু দুদিন বাদে ওই কথাই সত্য হবে। এই আমার মতো জীবন যাপন করতে হবে।
লুৎফা। নবাব!
ঘসেটি। নবাব-মহিষী এই বাঁদির বিরুদ্ধে অভিযোগ করচেন নবাব। বাঁদিকে দণ্ড দিয়ে মহিষীকে খুশি করুন! লুৎফা। জাঁহাপনা, ওকে ওঁর প্রাসাদে ফিরে যেতে দিন।
সিরাজ। দোব লুৎফা-সময় এলেই পাঠিয়ে দোব।
ঘসেটি। এখনো আশা-সময় আসবে?
লুৎফা। অমন করে ওকথা বলো না মা। বুক আমার কেঁপে ওঠে।
ঘসেটি। তোমার বুক কেঁপে ওঠে। আর আমার বুক যে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে, তা কি তোমরা বুঝেচ, না কখনো বুঝতে চেয়েচ? অনাথা বিধবা আমি, নিজের গৃহে দুঃখকে সাথি করে পড়েছিলাম, অত্যাচারের প্রতিকারে অক্ষম হয়ে ডুকরে কেঁদে সান্ত্বনা পেতাম। তোমরা তাতেও বাদ সাধলে, ছল করে ধরে এনে পাপ-পুরীতে বন্দিনী করে রাখলে। তোমাদের আমি ক্ষমা করব!
সিরাজ। আর আমরাই বুঝি ক্ষমা করব বিদ্রোহিনীকে। মায়ের মতো সম্মান দিয়ে মায়ের বোনকে মায়ের পাশেই বসিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। তোমার তা ভালো লাগচে না! আজ ভয় হচ্ছে শেষটায় না বাধ্য হয়ে তোমাকে বন্দিনীর মতোই কারাগারে স্থান দিতে হয়।
লুৎফা। নবাব! জাঁহাপনা।
সিরাজ। ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত এই বাক্যজ্বালা আমি আর সইতে পারি না লুৎফা! এমন কোনো অপরাধ আমি করিনি, যার জন্যে সকলের কাছে সব সময়ে অপরাধীর মতো আমাকে করজোড়ে থাকতে হবে।
[দুই হাতে মাথা চাপিয়া ধরিলেন]
ঘসেটি। অপরকে বঞ্চিত করে যে সিংহাসন পেয়েচ, সে সিংহাসন তোমাকে শান্তি দেবে ভেবেচ? সিরাজ। আমি জানি কেমন করে ওদের কণ্ঠ রোধ করা যায়, কেমন করে স্পর্দ্ধায় উন্নত ওদের শির আমার পায়ের তলায় নুইয়ে দেওয়া যায়। শুধু আমার মুখের একটি কথা, চোখের একটি ইঙ্গিত সাপেক্ষ। আমি তাও পারি না। পারি না শুধু আমি কঠোর নই বলে, পারি না শুধু পরের ব্যথায় আমার প্রাণ কেঁদে ওঠে বলে।
[ক্ষোভে দুঃখে সিরাজ প্রায় কাঁদিয়া ফেলিলেন। লুৎফা তাঁহার কাছে গিয়া কহিলেন]
লুৎফা। নবাব, জাঁহাপনা, আপনার চোখে জল? আমি যে সইতে পারি না।
ঘসেটি। আজকার এ কান্না শুধুই বিলাস; কিন্তু এ কান্নায় বিরাম নেই। চোখের জলে নবাব পথ দেখতে পাবেন না। বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে। আমিনা কেঁদে কেঁদে অন্ধ হবে! পলাশি-প্রান্তরে কোলাহল ছাপিয়ে উঠবে ক্রন্দন-রোল! সিরাজের নবাবির এই পরিণাম!
[ঘসেটি চলিয়া গেলেন। নবাব তাহার দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন, লুৎফা তাঁহাকে ধরিলেন] সিরাজ। বলতে পার লুৎফা, বলতে পার, ওই ঘসেটি বেগম মানবী না দানবী?
লুৎফা। ওকে ওর প্রাসাদে পাঠিয়ে দিন জাঁহাপনা। ওর সঙ্গে থাকতে আমার ভয় হয়। মনে হয়, ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সঞ্চালনে ভূমিকম্প!
সিরাজ। মাত্র পনেরোটি মাস আমি রাজত্ব করচি, লুৎফা! এই পনেরো মাসে আমার এমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে, মানুষেরা এমনি নির্মমতার পরিচয় আমি পেয়েচি যে, কোনো মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারি না, ভালোও বাসতে পারি না।
লুৎফা। চলুন জাঁহাপনা, একটু বিশ্রাম করবেন।
সিরাজ। বিশ্রাম! বিশ্রামের অবসর হবে পলাশির পর।
লুৎফা। পলাশি! সে কি জাঁহাপনা?
সিরাজ। তুমি এখনও শোনোনি? পলাশির মাঠে আবার যুদ্ধের সম্ভাবনা।
লুৎফা। আবার যুদ্ধ! জাঁহাপনা?
সিরাজ। পনেরো মাসের নবাবি লুৎফা, তার মাঝে পুরো একটি বছর যুদ্ধে, ষড়যন্ত্রভেদে, গুপ্তচর পরিচালনায় অতিবাহিত হয়েচে। এইবার হয় ত শেষ যুদ্ধ!
লুৎফা। শেষ যুদ্ধ!
সিরাজ। যদি জয়ী হই, তা হলে হয়তো আর যুদ্ধ হবে না-আর যদি পরাজিত হই, তা হলে তো নয়ই! লুৎফা। পলাশি!
সিরাজ। পলাশি! লাখে লাখে পলাশ-ফুলের অগ্নি-বরণে কোনোদিন হয়তো পলাশির প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা। জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশি!
[নবাব বাহির হইয়া গেলেন। মঞ্চ অন্ধকার হইয়া গেল। করুণ সুরে বাদ্য বাজিল। যবনিকা পড়িল]
সিরাজদ্দৌলা । শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত । নাটকের প্রশ্নের উত্তর :
সিরাজদ্দৌলা নাটকের সকল প্রশ্নের উত্তর দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে
দশম শ্রেণির অধ্যায়ভিত্তিক বাংলা প্রশ্নের উত্তর দেখতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবে
শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
- বাংলা ব্যাকরণের আলোচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- শিক্ষালয় ওয়েবসাইটে প্রদান করা প্রবন্ধ রচনাগুলি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক নোট দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ TEST প্রদান করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে
- শিক্ষালয় ইউটিউব চ্যানেলটি দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক/টাচ করতে হবে
- পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সাজেশন দেখতে এই লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে