করোনার প্রকোপ

করোনার প্রকোপ

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত প্রবন্ধ রচনা প্রদান করা হবে। আজকে আমরা আলোচনা করবো করোনার প্রকোপ প্রবন্ধ রচনাটি সম্পর্কে। 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। 

করোনার প্রকোপ প্রবন্ধ রচনাঃ 

“নূতন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী—

কর’ ত্রাণ মহাপ্রাণ, আন’ অমৃতবাণী,”

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

ভূমিকাঃ

একবিংশ শতাব্দীর কর্মমুখরিত পৃথিবী হয়ে পড়ে জড়বৎ স্তব্ধ। প্রতিদিনের চলাচল, স্কুলকলেজ,অফিস-আদালত, গণ জমায়েত প্রভৃতির ওপরে জারি হয় কড়া নিষেধাজ্ঞা। রবীন্দ্রনাথের তাসের দেশের মতোই আমরাও হয়ে পড়ি নিশ্ছিদ্র বিধিনিষেধের কারাগারে বন্দি, আমাদের মুখেও সেই একই বুলি ফুটে ওঠে—“চলো নিয়ম-মতে”। মুখে মাস্ক, পকেটে স্যানিটাইজার, সোশ্যাল বা ফিজিক্যাল ডিসটেনসিং—এই শব্দবন্ধগুলি বর্তমানে আট থেকে আশি সকলের মুখেই। আর এই গোটা চরকি নাচের নেপথ্য সূত্রধার কোভিড-১৯-এর বিশ্বময় অতিমারি।

 

করোনা ভাইরাস ও কোভিড-১৯ঃ

করোনা ভাইরাস বলতে RNA ভাইরাসের একটি বিশেষ শ্রেণিকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের আক্রান্ত করে। ‘Coronavirus’ নামটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘Corona’ থেকে যার অর্থ ‘মুকুট’ বা ‘হার’। এই ভাইরাসটি ‘Riboviria’ পর্বের Nidovirales বর্গের Coronaviridae গোত্রের Orthocoronavirinae উপগোত্রের সদস্য। মানবদেহে এই ভাইরাস শ্বাসনালীর মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়। মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণকেই বর্তমানে ‘Covid-19’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

 

করোনা ভাইরাসের ইতিহাসঃ

১৯৩০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয় করোনা ভাইরাস। এ সময় মুরগির দেহে এই ভাইরাসের সন্ধান মেলে। পরে ১৯৬০-এর দশকে মানুষের দেহে ভাইরাসটির সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে এর আরও কয়েকটি প্রজাতির সন্ধান মেলে। সর্বশেষ প্রাপ্ত ভাইরাসটি ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে চিনের উহান প্রদেশে পাওয়া গেছে, যা বর্তমানে নোভেল করোনা ভাইরাস নামেই পরিচিত। আর এই নোভেল করোনা ভাইরাসই হল বর্তমান বিশ্বময় ভীতির প্রাণশক্তি।

 

করোনা আক্রান্ত বিশ্বঃ 

২০১৯-এর ডিসেম্বর চিনের উহানে ‘2019-nCoV’-এর সংক্রমণের পরে সারা বিশ্ব জুড়ে খুব দ্রুত বাড়তে থাকে সংক্রমণ। বর্তমানে বিশ্বময় সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা তিপ্পান্ন কোটিরও বেশি, মারা গিয়েছে ৬০ লক্ষরও বেশি মানুষ। ভাইরাসটি একসঙ্গে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স), ঊর্ধ্ব এবং নিম্ন শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়। খুব দ্রুত ভাইরাসটি এক রোগী থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রামিত হয়ে যায়। তাই প্রথমেই মানুষকে লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, মাস্ক, সোশ্যাল ডিসটেনসিং, স্যানিটাইজার ব্যবহার প্রভৃতিতে অভ্যস্ত করে তোলা হয়েছে। অসুখটির প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় জ্বর, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, বমি, পেটের গোলমাল ইত্যাদি। সারা পৃথিবী জুড়ে তাড়া করে চলেছে মৃত্যু ভয়। অফিস-আদালত, স্কুলকলেজ সমস্তই স্তব্ধ হয়েছিল, ফলে অনেক মানুষের রুজিরোজগারেও টান পড়েছিল। সারা বিশ্বের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ে COVID-19-এর অনিবার্য প্রকোপে। বর্তমানে আমরা করোনার তিন-তিনটি ঢেউ কাটিয়ে ফেলেছি। দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ ছিল মাত্রাতিরিক্ত। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সর্বগ্রাসী শক্তি বহু মানুষকে কেড়ে নেয় তার প্রিয়জনদের কাছ থেকে। তবে এই তিনটি ঢেউ কাটিয়ে বর্তমানে আমরা অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি। তবে যে বিপন্নতার শিকার আমরা হই তা কাটাতে এখনও অনেক সময় লাগবে। তা ছাড়া করোনা মাঝে মাঝেই নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। তাই আরও কতগুলো ঢেউ যে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে বা তাদের প্রভাব কতখানি হতে পারে সেই ভীতি আজও বহাল আছে।

 

করোনা পরিস্থিতির প্রতিকার এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতাঃ

দীর্ঘসময় ধরে স্তব্ধ জীবন কাটিয়ে মানুষ আজ অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। বিশ্বের সমস্ত বৈজ্ঞানিক বেশ কিছু প্রতিষেধক টিকাও আবিষ্কার করেছে। জোর কদমে অনেকাংশেই টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এবার এই টিকাগুলির যথাযথ কার্যকারিতার প্রমাণ ভবিষ্যৎ দেবে। বর্তমানেও তাই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত সতর্কতা অবলম্বন করে যাওয়াই শ্রেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রত্যেক মানুষকে যে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেছিল, সেগুলি হল –

১) ৭০% অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা,

২) মাস্ক ব্যবহার করা,

৩) ভিড় এড়িয়ে শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা,

৪) সম্ভব হলে অফিসের কাজ বাড়ি থেকে করা,

৫) একান্ত আবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা,

৬) নিজে অসুস্থ বোধ করলেই ডাক্তার দেখানো, সেল্ফ আইসোলেশনে থাকা ইত্যাদি।

 

উপসংহারঃ

সংক্রমণ, লকডাউন, মৃত্যুভয় সমস্ত নিয়েই বর্তমান পৃথিবী আবার একটু একটু করে তার পুরোনো ছন্দে ফিরছে। তবে এ কথা খুবই সত্য যে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে এখনও দেরি আছে। টিকা প্রয়োগ সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ হলে কিংবা সকলের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি অর্থাৎ, দেহে অনাক্রম্যতা তৈরি হয়ে গেলে রোগের প্রকোপটা হয়তো থেমে যাবে। করোনা শুধু যে মারণরোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তা নয়, অধিকন্তু তা বিভিন্নভাবে পৃথিবীর মানুষদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও করেছে। তবে সমস্ত মন্দের মধ্যেও একটি ভালো কথা হল এই কোভিড পরিস্থিতিতে হওয়া লকডাউনের ফলে দূষণের মাত্রা অনেক কমে গেছে, আর আমরাও বেশ খানিকটা স্বাস্থ্য সচেতন হতে শিখে গেছি। COVID-19-এর পজেটিভ দিক বলতে শুধু ওইটুকুই। 

 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

শিক্ষালয়ের সাথে ফেসবুকে যুক্ত হতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করতে হবেঃ sikkhalaya

You cannot copy content of this page

Need Help?