পথের পাঁচালী অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর

পথের পাঁচালী অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য অষ্টম শ্রেণি বাংলা সহায়ক পাঠ পথের পাঁচালী উপন্যাস থেকে ‘পথের পাঁচালী অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর’ প্রদান করা হলো। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই পথের পাঁচালী অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর -গুলি তৈরি করার মধ্য দিয়ে তাদের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে। 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। 

পথের পাঁচালী অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তরঃ 

১) অতি সংক্ষেপে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাওঃ 

১.১) কুঠির মাঠ দেখতে যাবার পথে কী দেখে অপু সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিল?

Ans: কুঠির মাঠ দেখতে যাবার পথে অপু বড়ো বড়ো কানওয়ালা খরগোশ দেখে সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিল। 

১.২) আলকুশি কী ?

Ans: আলকুশি জঙ্গলের এক ধরণের বিষ ফল। ওই ফল ছুঁলেই হাতে শুয়ো ফুটে রিরি করে। 

১.৩) ‘এই দ্যাখো মা আমার সেই মালাটা’—কে কখন এই কথা বলেছে?

Ans:  দুর্গার টিনের পুতুলের বাক্স খুলে পুঁতির মালাটা বের করে এনে টুনু এই কথা বলেছিল। 

১.৪) অপু কার পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল? গুরুমশাই পড়ানোর পাশাপাশি আর কোন্ কাজ করতেন?

Ans:  অপু গ্রামের প্রসন্ন গুরুমহাশয়ের পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল।

গুরুমশাই পড়ানোর পাশাপাশি একখানি মুদির দোকান চালাতেন।

১.৫) পাঠশালা কখন বসতো? কজন ছাত্রছাত্রী ছিল?

Ans: পাঠশালা বসত বিকেলবেলায়। 

পাথশালায় সব সুদ্ধ আট-দশ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। 

১.৬) আতুরি ডাইনি কে? বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সম্পর্কে অপুর ধারণা বদলে গেল কীভাবে?

Ans: আতুরি ডাইনি অপুর গ্রামে থাকা এক অসহায়, গরিব বৃদ্ধা। গ্রামের লোকের ধারণা ছিল সেই বুড়ি নাকি বাচ্চাদের মেরে কচুপাতায় প্রাণ পুরে জলে ডুবিয়ে রাখে। এছাড়াও সবাই জানত সে ইচ্ছে করলেই ছোটো ছেলেদের রক্ত চোখের দৃষ্টি দিয়েই শুষে নিতে পারে।

বড়ো হওয়ার পর অপু তাকে হাটে আমচুর বিক্রি করতে দেখেছিল একদিন। বুড়িটি ছিল একা। তার কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না। আমচুর বিক্রি করে তার দিন কাটত। মরার সময় তাকে পোড়ানোরও কেউ ছিল না। এইসব ঘটনা থেকেই আতুরি
ডাইনির সম্পর্কে অপুর ধারণা বদলে গিয়েছিল।

১.৭) লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি থেকে ফিরে এসে অপু যে আশ্চর্য ভ্রমণকাহিনি শুনিয়েছিল তা লেখো।

Ans: লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি থেকে ফিরে এসে অপু পনেরো দিন ধরে নিজের অদ্ভুত গল্পের ভ্রমণকাহিনি বলে বেড়িয়েছিল।  রেলের রাস্তা, যেখানে দিয়ে সত্যিকারের রেলগাড়ি যায়। মাটির আতা,পেঁপে, শশা- অবিকল সত্যিকারের ফলের মতো। এক ধরনের পুতুলটার কথাও সে বলে যার পেট টিপলে মৃগি রোগীর মতো হাত-পা ছুঁড়ে হঠাৎ খঞ্জনি বাজাতে শুরু করে। অপু অনেক দূর পথ গিয়েছিল কত পদ্মফুলে ভরা বিল; অচেনা কত নতুন গাঁ। কত দূর দিগন্ত পথ। নির্জন পথে পাশ দিয়ে সেখানে যেতে হয়। কোনো একটি গ্রামের পাশে কামারের দোকান যেখানে অপুকে জল খাওয়ানোর জন্য তার বাবা নিয়ে গিয়েছিল। তারা অতি যত্ন সহকারে ভিতরে ডেকে দুধ, চিঁড়ে, বাতাসা খেতে দিয়েছিল। এসব গল্পই সে মা ও দিদিকে শুনিয়েছিল।

১.৮) অপু কড়ি খেলতে কোথায় গিয়েছিল? তার সঙ্গীসাথি কারা ছিল লেখো।

Ans: অপু কড়ি খেলতে জেলেপাড়ায় গিয়েছিল।

সেখানে তার সঙ্গীসাথি ছিল ব্রাষ্মণ পাড়ার ছেলে পটু ও জেলেপাড়ার তিনকড়ির ছেলে বঙ্কা, হৃদয় ও জেলেপাড়ার আরও অন্যান্য ছেলেরা।

১.৯) ‘সর্ব-দর্শন-সংগ্রহ’ বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে কী লেখা ছিল?

Ans: ডিমের ভিতর পারদ ভরে কয়েক দিন রৌদ্রে রেখে তারপর সেই ডিম মুখে পুরলে মানুষ ইচ্ছে করলে শূন্যমার্গে অর্থাৎ আকাশে উড়তে পারবে- এটাই ‘সর্ব-দর্শন-সংগ্রহ’ বইটিতে লেখা ছিল।

১.১০) আমি মরবার সময় বইখানা তোমায় দিয়ে যাব দাদু’–কে, কাকে একথা বলেছিলেন? কোন্ বইখানি দিয়ে
যাবার কথা ছিল ?

Ans:  অপুকে এ কথাটি বলেছিলেন গ্রামের বয়স্ক ব্যাক্তি নরোত্তম দাস বাবাজি।

‘প্রেমভক্তি চন্দ্ৰিকা’ বইখানা অপুকে দিয়ে যাবার কথা তিনি বলেছিলেন।

১.১১) অপুর দপ্তরে কী কী বই ছিল? কোন্ মাসিক পত্রিকা হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠত?

Ans: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত চরিতমালা, ধারাপাত, শুভঙ্করী বই অপুর দপ্তরে ছিল।

‘বঙ্গবাসী’ মাসিক পত্রিকাটি হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠত।

১.১২) ‘দুর্গা কতবার খুঁজিয়াছেও খেলা আর কোনো দিন আসে নাই’- কোন্ খেলার কথা বলা হয়েছে লেখো।

Ans: নিশ্চিন্দিপুরে একজন বৃদ্ধ মুসলমান বড়ো রং-চং করা কাঁচ বসানো একটি টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখাতে এসেছিল ।
বাক্সের গায়ে চোঙের মতো জিনিস ছিল। তাতে চোখ একটা লাগিয়ে ছবিতে সত্যিকারের মানুষ, ঘরবাড়ি মুদ্ধ দেখা যায়।

১.১৩) অপু বসে বসে খাতায় কী লেখে?

Ans: অপু বসে বসে খাতায় নাটক আর গল্প লেখে।

১.১৪) অপুর টিনের বাক্সে কী কী বই ছিল?

Ans: অপুর টিনের বাক্সে একটি নিত্যকর্ম পদ্ধতি, একটি পুরানো প্রাকৃতিক ভুগোল, একখানি শুভঙ্করী, পাতা ছেঁড়া একখানা
বীরাঙ্গনা কাব্য, ও মায়ের সেই ছেঁড়া কাশীদাসী মহাভারত বই ছিল।

১.১৫) ‘তোরা নাকি এ গাঁ ছেড়ে চলে যাবি?’—কে, কাকে এ কথা বলেছে? কোন্ গাঁয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে?

Ans: একথা ভুবন মুখুজ্জের মেয়ে রানি অপুকে বলেছে। নিশ্চিন্দিপুর গাঁয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে।

১.১৬ ‘রইল ওইখানে, কেউ জানতে পারবে না কোনো কথা, ওখানে আর কে যাবে?’- কী রইল? এখানে কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে?

Ans: একটি কৌটো রাখার কথা বলা হয়েছে।
একটি সোনার সিঁদুর কৌটো অপুর দিদি হয়তো সেজো ঠাকরুনের বাড়ি থেকে চুরি করেছিল।

 

২) নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখোঃ

২.১) দুর্গা-অপুর খেলাধুলোর সরঞ্জাম বলতে কী ছিল লেখো।

Ans: দুর্গার খেলার সরঞ্জাম ছিল কয়েকটি কড়ি, নাটাফল, আমের গুটি। অপুর খেলার সরঞ্জাম ছিল একটি রং ওঠা
কাঠের ঘোড়া, একটি টোল খাওয়া টিনের ভেঁপু বাঁশি গোটা কয়েক কড়ি, দু পয়সা দামের একটি পিস্তল ইত্যাদি।

২.২) অপুর পাঠশালাটি কেমন ছিল?

Ans: গ্রামের প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের বাড়িতেই অপুর পাঠশালা ছিল। যে ঘরটিতে পাঠশালা হয় তার কোনোদিকে বেড়া বা দেওয়াল কিছু নেই চারিদিকে খোলা। পাঠশালার শিক্ষা দেওয়ার বিশেষ উপকরণটি ছিল একটি বেত। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বসার চাটাই নিয়ে আসত। 

২.৩) আশ মিটিয়ে যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করার জন্য অপু কী করত?

Ans: আশ মিটিয়ে যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করার জন্য অপু একটি সরু বাঁশের কঞ্চি নিয়ে নদীর পাড়ে বাঁশবনের ভিতরে
করত। নিজের মনে মায়ের মুখে শোনা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের দৃশ্য কল্পনা করে সে নিজেকে সেই যুদ্ধের অংশ করে নিত।

২.৪) দুর্গা তো পাঠশালায় যেতো না, তার সারাদিন কীভাবে কাটত।

Ans: দুর্গার সারাদিন কাটত নানা বনে জঙ্গলে ঘুরে। সে দুপুরে শুধু ভাত খাওয়ার জন্য বাড়ি আসত। তারপর সারাদিন সে ঘুরে বেড়াত পাড়ার আমবাগানে, জামবাগানে। কাদের বাড়ি কোন গাছে কী ফল হয়েছে সব তার জানা ছিল। সে কামরাঙা, নাটাফল, আমের গুটি, পুতুলের ঘর সাজানোর জন্য নানা জিনিস সংগ্রহ করতেও সে ব্যস্ত থাকত।

২.৫) বাছুর খুঁজতে বেরিয়ে দুর্গা ও অপু কীভাবে পথ হারিয়ে ফেলেছিল?

Ans: বাছুর খুঁজতে গিয়ে দুর্গা অপুকে দক্ষিণ মাঠের থেকে অনেক অনেক দূরে রেলের রাস্তা দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিল। দুজনে নবাবগঞ্জের পাকা রাস্তার উপরে গিয়েও যখন রেলের রাস্তা দেখতে পায় নি, তখন তারা দৌড় দিতে দিতে পাকা রাস্তা ফেলে বন মাঠ, বিল জলা ভেঙে দক্ষিণ দিকে দৌড়োতে থাকে।

দৌড় দিতে দিতে তাদের চেনা রাস্তা, বনজঙ্গল, নবাবগঞ্জের লাল রাস্তা, রোয়ার মাঠ, জলসত্রতলা, ঠাকুরঝি পুকুর পার করে কিছুটা দুরে গিয়ে একটা বড়ো জলার সামনে উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে তারা পথ হারিয়ে ফেলে। 

২.৬) রাজকৃষ্ণ সান্যালের দেশভ্রমণের গল্পগুলি কেমন ছিল?

Ans: রাজকৃয় সান্যালের দেশভ্রমণের অভ্যাস ছিল। তার গল্পগুলি সাজিয়ে বলার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। কোথায় দ্বারকা, কোথায় সাবিত্রী পাহাড়, চন্দ্রনাথ ইত্যাদি স্থানে তিনি ভ্রমণ করেছেন; তার সঙ্গে স্ত্রী-পুত্রও থাকত। 

২.৭) একদিন পাঠশালায় এমন একটি ঘটনা হইয়াছিল, যাহা তাহার জীবনের একটি নতুন অভিজ্ঞতা।’- অপুর জীবনের সেই নতুন অভিজ্ঞতাটি কী?

Ans: পাঠশালায় ঘটে যাওয়া অপুর জীবনের সেই নতুন অভিজ্ঞতাটি ছিল শ্রুতিলিখন করা।

সেদিন পাঠশালায় অন্য কেউ উপস্থিত না থাকায় কোনো গল্পগুজব হলো না পড়াশোনা হচ্ছিল। অপু পাঠশালায় গিয়ে বসে পড়ছিল। এমন সময় গুরুমশাই শ্রুতিলিখন লিখতে বললেন। গুরুমশাই মুখে মুখে যা কিছু বলছিলেন অপু তা বুঝল না; কেবলমাত্র এটা বুঝল যে, কথাগুলি গুরুমশাই-এর নিজের সম্পর্কে নয়; দাশুরায়ের পাঁচালির মতো তিনি মুখস্থ বলছেন। কথাগুলি অপুর শুনতে খুব মধুর লাগছিল। সে কথাগুলির মানে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু অজানা শব্দের ঝংকার জড়ানো অপরিচিত শব্দগুলি সেদিন অপুর কাছে মনে হয়েছিল সংগীত। সেই কথাগুলির মধ্য দিয়ে দেশের একটা অস্পষ্ট ছবি অপুর শিশুমনে ফুটে উঠেছিল। অপু ভাবত কুঠির মাঠ পেরিয়ে যে পথটি ঘুরে গিয়েছে গুরুমশাইয়ের বলা ‘জনস্থান মধ্যবর্তী প্রস্রবন গিরি’ বুঝি সেই পথেই অবস্থিত। 

২.৮) দুর্গা-অপু কীভাবে রেলের রাস্তা দেখার চেষ্টা করেছিল?

Ans: একবার অপুদের রাঙি গাইয়ের বাছুর হারিয়ে গিয়েছিল। দুর্গা-অপু যখন বাছুর খুঁজতে দক্ষিণ মাঠের দিকে গিয়েছিল, দূরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে দুর্গা একটি কী দেখছিল। হঠাৎ দুর্গা বলল-রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার কথা। তারপর তারা রওনা দিল। দুর্গা বলেছিল রেলের রাস্তা পাকা রাস্তার ওধারে। এই ভেবে তারা দুজনে রওনা দিল পায়ে হেঁটে। দৌড় দিয়ে, বনজঙ্গল ডিঙিয়ে তারা রেলের রাস্তা দেখার চেষ্টা তবে সে আশা তাদের পূর্ণ হয়নি। অনেক দূর গিয়ে পথ হারিয়ে তাদের ফিরে আসতে হয়েছিল।

২.৯ ) ‘বাঁকা কঞ্চি অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস।’- একথা বলার কারণ কী? সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার আনন্দ তুমি সম্পর্কে লেখো।

Ans: বাঁকা কঞি অপুর কাছে অনেক মূল্যবান, এক অদ্ভুত জিনিস। যা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক খুঁজে
খুঁজে বনজঙ্গলের ভিতর একটা শুকনো, গোড়ার দিক মোটা, আগার দিক সরু এমন হালকা ও বাঁকা কঞি অপু জোগাড়
করে আনে। তা দিয়ে অপু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করে।

এই অদ্ভুত সামান্য উপকরণটি দিয়ে সে মহাভারতে শোনা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার কল্পনায় মেতে থাকত। একা একা নির্জন জায়গায় কখনও বাঁশবাগানের পথে কখনও নদীর ধারে। নিজের মনে কথা বলতে বলতে সে ঘুড়ে বেড়াত। এই আনন্দ কেবল অপুই বোঝে অন্য কেউ বোঝে না। সে সেই বাঁকা কঞ্চি নিয়ে কখনও তামাকের দোকানি, কখনও ভ্রমণকারী,কখনও বা সেনাপতি, কখনও বা মহাভারতের অর্জুন সেজে আপনমনে খেলে।

সব শিশুই সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার চেষ্টা করে। এই তুচ্ছ উপকরণ ও শিশুমনে অমূল্য বলে মনে হয় কঞ্চিটিকে অপু তারবারি করে মনে করে রামায়ণ মহাভারতের কল্পজগতে মানসভ্রমণ করে বেড়াত। তাই এই সামান্য উপকরণ তার মনে আশ্চর্যে আনন্দ এনে দিত।

২.১০) শূন্যে ওড়ার ক্ষমতা অর্জনের জন্য অপু কী করছিল ?

Ans: শূন্যে ওড়ার ক্ষমতার অর্জনের জন্য অপু নানা জায়গায় শকুনির ডিম খুঁজেছিল। সেটা প্রথমে দিদিকে তারপর সতু, নীলু, কানু, পটল, নেড়া সকলকে জিজ্ঞাসা করে শকুনির বাসা কোথায় আছে। তারা দেখেছে কী না? তারপর সে রাখালকে জিজ্ঞাসা করেছিল, শকুনের ডিমের কথা। সে যদি শকুনের ডিম এনে দেয় তাহলে অপু তাকে টাকা দেবে। পরের দিন রাখাল দুটি কালো রং-এর ছোটো ছোটো ডিম এনে অপুকে দিল, তবে তারজন্য রাখাল বলল দু-আনার কমে সে দেবে না। তা শুনে অপু অবাক হয়ে গেল। সে বলল, তার কাছে থাকা এক গুচ্ছ কড়ি আছে সে সেগুলি রাখালকে দেবে কিন্তু রাখাল তাতে রাজি হলো না। অনেক কষ্টে দিদির থেকে এনে তারপর নিজের প্রিয় কড়িগুলির অর্ধেকটাও দিয়েছিল। তবে ডিমগুলো সত্যই শকুনের ডিম কিনা তা পরীক্ষা করে জানা যায়নি।

২.১১) ভুলো কুকুরকে নিয়ে দুর্গা কীভাবে আমোদ উপভোগ করত?

Ans: দুর্গা প্রতিদিন নিজের ভাত খাওয়ার শেষে এক মুঠো ভাত ভুলো কুকুরের জন্য নিয়ে আসত। এতে তার মায়ের কাছে অনেক বকা খেতে হয়েছিল। কিন্তু অপু এই আমোদ উপভোগ করা সম্পর্কে কিছুটা জানত। চারিদিকে জনশূন্য কেউ কোথাও নেই চোখ বুজে দুর্গা যেই সেই ভুলো কুকুরকে ডাকত। তারপর ভাত মাটিতে ফেলতেই বনজঙ্গল পেরিয়ে শুকনো পাতার স্তূপ পেরিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ভুলো কুকুরটি ছুটে চলে আসত। তা দেখে দুর্গার মন আনন্দে ভরে যেত। এইভাবেই
সে আমোদ উপভোগ করত। 

২.১২) বৃদ্ধ নরোত্তম বাবাজির সঙ্গে অপুর কীভাবে ভাব হয়েছিল?

Ans: অপু যখন ছোটো ছিল তখন তার বাবার সাথে সে নরোত্তম বাবাজির বাড়ি যেত। গৌরবর্ণ, সদানন্দ, বৃদ্ধ নরোত্তম সামান্য
খড়ের ঘরে থাকতেন। তিনি বিশেষ গোলমাল ভালোবাসেন না, প্রায়ই নির্জনে থাকেন। সন্ধ্যার পর মাঝে মাঝে গাঙ্গুলিদের
চণ্ডীমণ্ডপে গিয়ে বসেন। ছোটো থেকেই অপুকে নিয়ে হরিহর তাঁর কাছে যেতেন। সেই থেকে তাঁর সাথে অপুর ভাব হয়। তিনি
বলতেন অপু তার কাছে গৌরসুন্দরের মতো। নিষ্পাপ ভাবমাখানো চোখ ছিল অপুর। মুখচোরা অপু এই বৃদ্ধ ব্যক্তিটির সঙ্গে
নানারকম বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করত। বৃদ্ধ নরোত্তমের কাছে অপু প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা বইখানি দেখতে চাইত। বৃদ্ধ
বলতেন বইখানি তিনি অপুকে দিয়ে যাবেন। তিনি জানেন অপুর হাতে এ বইখানির কোনো অসম্মান হবে না।

২.১৩) অপু-দুর্গার চড়ুইভাতির আয়োজন সম্পর্কে লেখো। এখনকার পিকনিকের সঙ্গে এরকম চড়ুইভাতির তফাৎ কোথায়?

Ans: নীলমণি রায়ের জঙ্গলাকীর্ণ ভিটের ওপারে অপু-দুর্গা চড়ইভাতির আয়োজন করে। খানিকটা বনজঙ্গল দুর্গা নিজের হতে দা দিয়ে কেটে পরিষ্কার করে তারপর ঘর থেকে চাল নিয়ে আসে ও একটি ভালো নারিকেল মালার দুই ফোটা তেল নিয়ে আসে। খেলাঘরের মাটির ছোবার মতো ছোটো একটা হাঁড়ি জোগাড় করে এবং কতগুলি মেটে আলু নিয়ে আসে। দুর্গা একটি বেগুনও আনে। বনভোজনে সত্যিকারের ভাত, মেটে আলু সেদ্ধ ও বেগুন ভাজা রান্না হয়। সব রান্না দুর্গা নিজেই করে। তাদের সাথে যোগ দেয় কালীনাথ চক্কোতির মেয়ে বিনি।

এখনকার পিকনিকের সাথে এরকম চড়ুইভাতির তফাত অনেক। এখনকার পিকনিকের জন্য আগে থেকে দিন ঠিক করা
হয়। একটি সুন্দর পরিষ্কার জায়গা দেখে নানারকম আয়োজন করে ভালো ভালো খাবারের জোগাড় করে দলবদ্ধ ভাবে
পিকনিক করা হয়। রান্নার ব্যবস্থা রান্নার ঠাকুর করে। এই পিকনিকগুলি অনেক খরচসাপেক্ষ হয়। প্রকৃতির মাঝে কিশোর
মনের বিস্ময়ও নতুন কিছু করার যে নির্ভেজাল আনন্দ তা এখনকার দিনে পিকনিকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

২.১৪) অজয় কে? তার সঙ্গে অপুর বন্ধুত্ব হলো কীভাবে?

Ans: অজয় নীলমণি হাজরার যাত্রাদলের একজন বালক অভিনেতা।

অজয়ের তার সঙ্গে অপুর বন্ধুত্ব হয়েছিল দেখতে গিয়ে। অজয় রাজপুত্রের অভিনয় করেছিল। তারপর যাত্রার শেষে অজয় পান খেতে যায়, সেখানে অপু তাকে পান কিনে দেয় তারপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয় এবং অপু অজয়কে বাড়িতে আসতে বলে। যাত্রা চলাকালীন অজয় রোজ অপুদের বাড়িতে খেতে যেত। সর্বজয়া অজয়কে খুব ভালোবেসেছিলেন। দুর্গাও অজয় কে নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবেসেছিল। অজয় যেহেতু অপুর সমবয়সী ছিল এবং অপু তাকে তার মনের কথা কিছু কিছু বলতো, তাই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হওয়ায় অপু মনে মনে স্বপ্ন দেখেছিল যে বড়ো হয়ে সে যাত্রাদলেই অভিনয় করবে। 

২.১৫) অপু তার দিদির সঙ্গে কেন কখনও আড়ি করবে না?

Ans: অপু তার দিদিকে খুব ভালোবাসে তবে যখন তার দিদি তার নাকে কলমির ফুল দিয়ে নোলক বানিয়ে দেয় তার ভালো
লাগেনা, কিন্তু তাও দিদিকে সে কিছু বলতে পারে না এবং অপুর দিদি মাঝেমধ্যে আম, জাম, কামরাঙ্গা, তেঁতুল লোভনীয়
খাদ্যগুলি মাকে লুকিয়ে নিয়ে আসে এবং দুজনে মিলে খায়। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কখনো দিদির সাথে আড়ি করবে না।
সতু যেদিন তাদের খেলাঘরের দোকান থেকে মাকাল ফল চুরি করে পালায় সেদিন তার দিদি সমস্ত বনবাদাড় ঘুরে সন্ধ্যায়
একরাশ মাকাল ফল এনে দিয়েছিল। তার ডাগর চোখের স্নিগ্ধ মমতামাখা হাসি দেখে অপু সেদিন বুঝেছিল দিদি তাকে বড়োই
ভালোবাসে। তাই অপু দিদির সাথে আড়ি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। 

 

৩) নীচের প্রশ্নগুলি নিজের ভাষায় বিশদে লেখোঃ 

৩.১) ‘অপু’ চরিত্রটি তোমার কেমন লেগেছে আলোচনা করো। 

ভূমিকাঃ

আমাদের পাঠ্য ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ রচিত ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র অপু। অপুর শৈশবই এই উপন্যাসের মূল বিষয়। অপু গ্রামবাংলার একটি অতি সাধারণ ছেলে হয়েও পাঠকের চোখে অসাধারণ হয়ে উঠেছে। নিম্নে তার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো- 

অনন্য অপুঃ

অপু গাছপালা, মাঠঘাটকে নিজের মতো করেই দেখে। অপুকে ওর কল্পনাশক্তির জন্যই আর পাঁচজনের থেকে পৃথক। কল্পনাতেই সে মহাভারতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। আবার আকাশে ওড়ার কল্পনাতে কেটে গেছে তার কত বিনিদ্র দুপুর। যাত্রা দেখতে গিয়েও অপু যাত্রার ঘটনার মধ্যে মগ্ন হয়ে পড়েছে। জন্মগ্রামের প্রতি অপুর ভালোবাসা আমার মনকে ভরিয়ে তুলেছে।

বর্তমান শৈশবের সাথে অমিলঃ

অপু যেভাবে আম কুড়োনোর আনন্দ লাভ করে, ট্রেন দেখে তার মুখে অকৃত্তিম আনন্দ খেলে যায়; তা বর্তমান শৈশবে আর প্রায় নেই বললেই চলে। অপু যেরকম স্বাধীনভাবে প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারত সেভাবে আর বর্তমানে কেউ মিশে যেতে পারে না। বর্তমান শৈশবে সবুজতার পরিবর্তে দেখা যায় যান্ত্রিক কৃত্তিমতা। 

আর তাই অপু তার কল্পনাপ্রবণ মন নিয়ে পাঠকের প্রিয় চরিত্রে পরিণত হয়েছে। 

 

৩.২) অপুর শৈশবে দিদি দুর্গার ভূমিকা আলোচনা করো। 

উৎসঃ

আমাদের পাঠ্য ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ রচিত ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটির অন্যতম সহায়ক চরিত্র দুর্গা।

অপুর জীবনে দুর্গার ভূমিকাঃ 

দিদি দুর্গাকে ছাড়া অপুর শৈশবকে আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হতাম না। দুর্গা অপুকে নানাভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। অপুর জীবনে দুর্গার ভূমিকা আমরা নিম্নে আলোচনা করতে পারি- 

প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয়ঃ

দুর্গা নিজে বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াত এবং সে-ই অপুকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করিয়েছিল। দুর্গাকে আমরা কখনো কখনো লোভী হিসেবে দেখি। কিন্তু সেই দুর্গাই ভাই অপুকে স্নেহ ও মমতায় ভরিয়ে রেখেছিল।

দুজনের মধুর সম্পর্কঃ

অপুর সমস্ত দুরন্তপনা, মান-অভিমান একমাত্র বুঝতে পারত দিদি দুর্গাই। দিদির সঙ্গে আম কুড়োনো, মাঠে-জঙ্গলে ঘুরে গাছ, পাখি চেনা- এগুলিতে অপুর খুব আগ্রহ ছিল। ঘরের চাল, নুন চুরি করে দিদির সঙ্গেই সে চড়ুইভাতি করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল।

দিদির জন্য অপুর টানঃ 

পুঁতির মালা চুরির অপবাদে দিদি মার খেলে মার ওপর অপুর রাগ এবং দিদির জন্য কষ্ট হয়েছিল। দিদির প্রতি রাগ, অভিমান হলেও দিদিকে ঘরে দেখতে না পেলেই তার মন খারাপ করত। দিদির সঙ্গেই রেলের রাস্তা দেখতে গিয়ে পথ হারানোর আনন্দ, পানিফল খাওয়ার আনন্দ প্রভৃতি ছিল তার শৈশবের অভিজ্ঞতা। তাই গ্রামের বাইরে বেড়াতে গিয়েও দিদির অপূর্ণ সাধ পূরণ করার কথা ভেবেছিল সে। দিদিকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসত।

বেড়ে ওঠার সঙ্গীঃ 

দুর্গা ছিল অপুর বেড়ে ওঠার সঙ্গী। দিদি তাকে যে জগৎ চিনিয়েছিল তা ছিল অপুর প্রাণের জগৎ। তাই গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় দিদির কথাই অপুর বেশি মনে পড়ছিল।

এভাবেই উপন্যাসের প্রাথমিক পর্ব জুড়ে আমরা কেন্দ্রীয় চরিত্র অপুর সাথে তার দিদি দুর্গার অকৃত্রিম সম্পর্কের সুগভীর পরিচয় লাভ করি। 

 

৩.৩) “সত্যিই সে ভুলে নাই।”- কোন্ কথা, কেন অপু ভোলেনি তা বুঝিয়ে দাও। 

ভূমিকাঃ

আমাদের পাঠ্য ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ রচিত ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে। 

যে কথা অপু কখনো ভোলেনিঃ 

অপুর অকালমৃত দিদি দুর্গাকে না ভোলার কথা প্রশ্নোক্ত অংশে বলা হয়েছে। তার বাল্যকালের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল তার দিদি দুর্গা এবং তাদের গ্রাম নিশ্চিন্দিপুর। সেই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় অপুর মনে হয়েছিল, দিদির মৃত্যুর পর অনেকদিন কেটে গেলেও এতদিনে সত্যিই তাদের ভাইবোনে ছাড়াছাড়ি হল।

গ্রামের পথেঘাটে, বাঁশবনে, আমতলায়, তাদের ভাঙা বাড়ির কোণে কোণে সে দিদির স্পর্শ পেয়েছে। সে চলে যাচ্ছে, দুর্গা যেন একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে। অপু মনে মনে শপথ করে দিদিকে সে কখনও ভুলবে না। ভবিষ্যতে অপুর জীবন তাকে নানা দেশ-বিদেশ, প্রকৃতির বিভিন্ন রূপের সঙ্গে পরিচয়ের মুহূর্তে তার মনে পড়ত অনেককাল আগের এক বর্ষার রাতে, জীর্ণ কোঠাবাড়ির অন্ধকার ঘরে, রোগকাতর এক গ্রাম্য মেয়ের কথা। তার দিদি বলেছিল সেরে উঠলে তাকে রেলগাড়ি দেখানোর কথা।

আর এসব কথাই অপু কখনও ভোলেনি।

 

৩.৪) ‘মা যে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে।’ – ‘মা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? সে কীভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে? 

উৎসঃ

আমাদের পাঠ্য ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ রচিত ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি চয়ন করা হয়েছে। 

‘মা’- এর পরিচয়ঃ

উদ্ধৃত অংশটিতে ‘মা’ বলতে হরিহর ও সর্বজয়ার কন্যা দুর্গাকে বোঝানো হয়েছে।

‘মা’ যেভাবে ফাঁকি দিয়েছেঃ 

দুর্গা বেশ কিছুদিন ধরেই ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগছিল। বাবা হরিহর অনেকদিন আগে পাঁচ টাকা পাঠিয়েছিলেন। এরপর তাঁর না আসে কোনও খবর, না কোনও টাকা। তাঁকে দু-দুবার চিঠি পাঠানো সত্ত্বেও কোনও উত্তর আসে না। চাল ধার করে, রেকাবি বিক্রি করেও সর্বজয়া ছেলেমেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে পারে না। অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখানো বা যথাযথ পথ্য দেওয়াও সর্বজয়ার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এরই মধ্যে অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের বাড়িঘর ও ভগ্নপ্রায় ঘরের চাল ভেঙে জল পড়তে থাকে। দুর্গার জ্বর আরও বাড়ে। প্রতিবেশীদের সাহায্যে গঞ্জের শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। তিনি দুর্গার জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করেন। ওষুধে দুর্গা খানিকটা সুস্থ হয়ে ঠলেও শেষরক্ষা হয়নি। শেষপর্যন্ত সকলকে ফাঁকি দিয়ে দুর্গা মৃত্যুর পথে পা বাড়ায়।

 

৩.৫) “বাঁকা কঞ্চি অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস”—একথা বলার কারণ কী? সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার আনন্দ সম্পর্কে লেখো। 

উত্তরঃ

বাঁকা কঞ্চি অপুর কাছে এক অদ্ভুত আনন্দের জিনিস। কারণ এই ধরনের কঞ্চি হাতে নিলেই অপুর মনে অফুরান আনন্দ জেগে উঠত। মহাভারতের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার কল্পনায় ভরে যেত তার মন।

একটা শুকনো, হালকা, গোড়ার দিক মোটা, আগার দিক সরু—এমন ধরনের কঞ্চি হাতে নিয়ে অপু বিজয়ী বীরের গর্ব অনুভব করত। এমন একটা কঞ্চি হাতে নিয়ে সে কখনও বাঁশবাগানের পথে, কখনও নদীর ধারে ঘুরে বেড়ায়। বাঁশের কঞ্চি জিনিসটা খুবই সামান্য কিন্তু অপুর কাছে সেটা মহামূল্যবান বস্তু। শিশুমনে তুচ্ছ খেলার উপকরণ এভাবেই অমূল্য হয়ে যায়। গাছের শুকনো ডালকে অপু অর্জুনের তরবারি মনে করত। সেই তরবারি হাতে যখন তখন সে রামায়ণ মহাভারতের রাজ্যে ঘুরে বেড়াত। এই মানস ভ্রমণ সম্ভব ছিল বলেই তুচ্ছ একটা বাঁশের কঞ্চি আশ্চর্য আনন্দ এনে দিত অপুর মনে। 

আমাদের শৈশবে এমন অনেক জিনিস থাকে যা বড়োদের অতিতুচ্ছ উপকরণ মনে হলেও শিশুমনের কাছে তা মহার্ঘ মনে হয়। এক সময় এই অতিসাধারণ উপকরণ দিয়েই গড়ে উঠেছিল আমার খেলাঘর। ভাঙা বাক্স, রঙিন কাচের গুলি, মায়ের রান্নাঘরের ভাঙা হাতাখুন্তি, ফেলে দেওয়া বাটি এমন কত কী জমা করেছিলাম সেখানে। রোজ আমরা বন্ধুরা সেখানে ভোজের আয়োজন করতাম। ভাঙা হাতাখুক্তি বাটি নিয়ে রান্না করতে প্রস্তুত হতাম আমরা। গুলিগুলো হত রসগোল্লা, মাটির ঢেলা, ফেলে দেওয়া সবজির টুকরো দিয়ে তৈরি হত নানান পদ। সেই রান্না রান্না খেলার অনির্বচনীয় আনন্দে, স্বাদে ভরে উঠত আমাদের মন।

 

পথের পাঁচালী উপন্যাস থেকে আরো প্রশ্নের উত্তর দেখতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করো 

 

pother pachali question answer

অষ্টম শ্রেণি বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ প্রশ্নের MOCK TEST প্রদান করতে নিম্নের লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে

click here

 অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কঃ

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার নোট, সাজেশন, প্রশ্নপত্র ও মক টেষ্টের সুবিধা গ্রহণ করতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করে বিষদ তথ্য জেনে নাওঃ 

paid courses

You cannot copy content of this page

Need Help?