সুভা গল্পের প্রশ্নের উত্তর

সুভা গল্পের প্রশ্নের উত্তর

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সুভা গল্পের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হলো। এই সুভা গল্পের প্রশ্নের উত্তর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। 

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার আপডেট লাভ করতে মোবাইল স্ক্রিনের বা’দিকের নিম্নের অংশে থাকা বেল আইকনটিতে (🔔) টাচ করে শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। 

সুভা গল্পের প্রশ্নের উত্তরঃ 

১) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত লিখতেন? 

উঃ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন। 

২) ভারতের কোন প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় ?

উঃ ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।

৩) সুভার প্রকৃত নাম কী ?

উঃ সুভার প্রকৃত নাম সুভাষিণী।

৪) সুভার বাবা কে ?

উঃ সুভার বাবা হলেন চণ্ডীপুর গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থ বাণীকণ্ঠ।

৫) সুভা কোন গ্রামে বাস করত ?

উঃ সুভা চণ্ডীপুর গ্রামে বাস করত।

৬) গল্পে সুভার কোন্ কোন্ বন্ধুর কথা রয়েছে ? 

উঃ ‘সুভা’ গল্পে সুভার যেসব বন্ধুর কথা আছে, তারা হল- গােয়ালের দুটি গাভি সর্বশী ও পাঙ্গুলি। একটি বিড়ালছানা, ছাগলছানা ও প্রতাপ।

৭) কে সুভাকে ‘সু বলে ডাকত ?

উঃ গোঁসাইদের ছােটো ছেলে প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত।

৮) ‘সে নির্জন দ্বিপ্রহরের মতাে শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন” — সুভা সম্পর্কে এরকম উপমা লেখক ব্যবহার করেছেন কেন ?

উঃ বিখ্যাত ছােটোগল্পকার ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘সুভা’ গল্পের প্রধান চরিত্র সুভা জন্ম থেকে বােবা। দ্বিপ্রহরে যেমন পথিকশূন্য থাকে পরিবেশ, তার প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে সেখানে কোলাহল, কলরব কিছুই শােনা যায় না, তেমনই সুভাও ছিল নির্বান্ধব, একাকী।

তার মুখের ভাব ছাড়া অন্য কোনাে ভাষা ছিল না। তার চোখের ভাষা অসীম, উদার এবং অতলস্পর্শগভীর। কিন্তুতার মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতাে একটি বিজন মহত্ত্ব ছিল। এইজন্য সাধারণ বালক-বালিকারা তাকে একপ্রকার ভয় করত এবং তার সঙ্গে খেলা করত না। এই কারণে সুভা সম্পর্কে লেখক উদ্ধৃত উপমাটি ব্যবহার করেছেন।

৯) চণ্ডীপুর গ্রামের বর্ণনা দাও। 

উঃ ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘সুভা’ গল্পে উল্লিখিত চণ্ডীপুর গ্রামটি বাংলাদেশের একটি ছােটো নদীর তীরে অবস্থিত। তরুচ্ছায়াঘন উচ্চতটে অবস্থিত গ্রামটি নদীর কলধ্বনি, জনকোলাহল, মাঝির গান, পাখির ডাক, তরুর মর্মরে সর্বদা মুখরিত। এই গ্রামেই সুভার পিতা বাণীকণ্ঠের বসবাস। এখানে বাখারির বেড়া দেওয়া ঘর, আটচালা, গােয়ালঘর, চেঁকিশাল, খড়ের প, তেঁতুলগাছ, আম, কাঁঠাল ও কলার বাগান নদীতে যাতায়াতকারী নৌকারােহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

১০) সুভার সঙ্গে সর্বশী ও পাঙ্গুলির সম্পর্ক কীরকম ছিল ?

উঃ ছােটোগল্পকার ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের’ অপূর্ব সৃষ্টি ‘সুভা’ গল্পে মূক মেয়ে সুভার নিজস্ব পৃথিবী একেবারে নিস্তব্ধ ছিল না। তার অত্যন্ত কাছের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল গােয়ালের দুটি গাভি-সর্বশী ও পাঙ্গলি। এই নাম তারা বালিকার মুখে না-শুনলেও চেতনা দিয়ে অনুভব করত। বালিকার পদশব্দ, তার স্নেহ, আদর, শাসন, তার হৃদয়ের ভাব-ভাষা সাধারণ মানুষের। থেকেও তারা ভালাে বুঝত। সুভা প্রতিদিন তাদের কাছে দুই-তিন বার আসত। মা যেমন সন্তানকে স্নেহ করে, তার কঠিন সময়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়, তেমনই এই মূক প্রাণীদুটিও সুভার মনখারাপের দিনে তার মর্মবেদনা বুঝে তার কাছে এসে সুভা বাহুতে শিং ঘষতে ঘষতে সুভাকে নির্বাক ব্যাকুলতার সঙ্গে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করত।

১১) এইজন্য প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত’ প্রতাপের কাছে সুভা কীভাবে মর্যাদা পেত, তা গল্প অবলম্বনে লেখাে।

উঃ লেখক ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের’ ‘সুভা’ গল্পের উদ্ধৃত প্রশ্নাংশে গোঁসাইদের ছােটো ছেলে প্রতাপ পিতামাতার কাছে সাংসারিক কাজে নিতান্ত অকর্মণ্য বলে গণ্য হত। তার প্রধান শখ ছিল, ছিপ ফেলে মাছ ধরা। এই কাজে অনেকটা সময় সে সহজে ব্যয় করত এবং তাকে প্রায়ই নদীতীরে ছিপ হাতে দেখা যেত। যে-কোনাে কাজে একটি সঙ্গী পেলে প্রতাপ-এর ভালাে লাগত। মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপ্রেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ ছাড়াও, সুভা প্রায়ই নদীতীরে এসে প্রতাপের জন্য একটি করে পান নিজে হাতে তৈরি করে দিত এবং তার মাছ ধরার সঙ্গী হত। সেইজন্য প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।

১২) ‘তাহাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হইল’ -কাদের সম্পর্কে এ কথা লেখক বলেছেন ? তাঁর এরূপ মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করাে।

উঃ ছােটোগল্পকার ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘সুভা’ গল্পের প্রশ্নোধৃত অংশে সুভাষিণী বা সুভার পিতা ও মাতা সম্পর্কে লেখক আলােচ্য মন্তব্যটি করেছেন।

ভারতবর্ষীয় সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। নারীরা সেখানে উপেক্ষিত, বঞ্চিত। বহু যুগ আগে থেকে এই সমাজ নানাবিধ কুসংস্কার দ্বারা আচ্ছন্ন। অল্পবয়সে কন্যাকে পাত্রস্থ করার রীতি এখানে প্রচলিত। কোনাে কারণে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা যদি তার কন্যাকে পাত্রস্থ করে দায়িত্বমুক্ত হতে না পারত, তাহলে তার সমাজচ্যুত হওয়ার ভয় থাকত। আলােচ্য গল্পে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা বাণীকণ্ঠ তাঁর মূক মেয়ে সুভাকে যৌবনপ্রাপ্ত অবস্থায়ও বিবাহ দিতে না-পারায় একঘরে হওয়ার ভয়ে ভীত হয়ে কলকাতায় গিয়ে তাকে বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। নিজেদের জাতিগত ঐতিহ্য, সমাজকে রক্ষা করতে ও পরকালসুনিশ্চিত করতে কন্যার অক্ষমতার কথা না-জানিয়ে তাকে এক পাত্রের সঙ্গে তাঁরা বিবাহ দিলেন। কন্যা যে বােবা, তা জানালে হয়তাে সারাজীবন তার বিবাহ দেওয়া সম্ভব হবে না, সেইজন্য তাঁরা সুভার অক্ষমতার কথা পাত্রকে জানালেন না। ফলে বিবাহের কিছুদিন পরে সে চিরতরের জন্য স্বামী ও সংসারসুখ থেকে বঞ্চিত হল। সমাজের এই নির্মম প্রথার যূপকাষ্ঠে হৃদয়হীন পিতা বাণীকণ্ঠ ও তার স্ত্রী তাদের কন্যাসন্তানটিকে বলি দিলেন। বিনিময়ে তাদের সামাজিক মর্যাদা ও পরকাল রক্ষা পেল।

১৩) ‘প্রকৃতি যেন তাহার ভাষার অভাব পূরণ করিয়া দেয়’- মানুষের ভাষার অভাব কীভাবে প্রকৃতি পূরণ করতে পারে তা আলােচনা করাে।

উঃ ছােটোগল্পকার ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘সুভা’ গল্প থেকে প্রশ্নোক্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে। শব্দের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে উন্মুখ। নিজেকে ব্যক্ত করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই ভাষার উৎপত্তি। কিন্তু প্রতিটি ভাষারই একটি সীমাবদ্ধতা আছে। হৃদয়ের অনুভূতিকে সে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতির বহুবিধ রূপ। তাই, যারা বাকযন্ত্রের দুর্বলতার কারণে মূক, প্রকৃতি যেন তাদের হয়ে কথা বলে।

‘সুভা’ গল্পে সুভার হৃদয়ের আনন্দ, বেদনা, দুঃখ সব কিছুকে প্রকৃতি বিচিত্র সুরে প্রকাশ করে। নদীর কলধ্বনি, মাঝির গান, পাখির ডাক, তরুর মর্মর সমস্ত মিশে চারিদিকের চলাফেরা, আন্দোলন, কম্পনের সঙ্গে এক হয়ে সমুদ্রের তরঙ্গরাশির মতাে বালিকার চিরনিস্তব্ধ  হৃদয়তটের কাছে এসে ভেঙে পড়ে। বড়াে বড়াে চক্ষুপল্লববিশিষ্ট সুভার চোখের ভাষা, মুখের ভাব, প্রকৃতির এই বিবিধ শব্দ এবং বিচিত্র গতির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ঝিল্লিরবপূর্ণ পুণ্যভূমি থেকে শব্দাতীত নক্ষত্রলােক পর্যন্ত কেবল ইঙ্গিত, ভঙ্গি, সংগীত, ক্রন্দন এবং দীর্ঘনিশ্বাস আসলে সুভার প্রকৃতিকেই স্মরণ করায়। প্রকৃতি এভাবেই সুভার ভাষার অভাব পূরণ করতে পারে।

১৪) সুভার সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব কেমন ছিল তা লেখাে। 

উঃ ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা আজন্ম বােবা, কথা বলতে অক্ষম। আলােচ্য গল্পে দেখা যায়, সুভার সঙ্গে তাদের গােয়ালের দুটি গাভি-সর্বশী ও পাঙ্গুলির একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সুভার পায়ের শব্দ এই মনুষ্যেতর প্রাণীদুটির অত্যন্ত পরিচিত। সুভার অন্তর্বেদনা তারা ভাষার থেকে ভালাে বুঝত। সুভা কখন তাদের আদর। করছে, ভর্ৎসনা করছে, তা তারা মানুষের চেয়ে বেশি বুঝত। সে দিনের মধ্যে নিয়মিত তিনবার গােয়ালঘরে যেত, এ ছাড়া তার অনিয়মিত যাতায়াতও ছিল।

সুভা গােয়ালে ঢুকে দুই বাহু দিয়ে সর্বশীর গলা জড়িয়ে ধরে নিজের গাল তার কানের কাছে ঘষত এবং পাঙ্গুলি স্নিগ্ধদৃষ্টিতে তার প্রতি নিরীক্ষণ করে তার গা চাটত। সুভা যেদিন বাড়িতে কঠিন কথা শুনত, সেদিন সে অসময়ে তার এই মূক বন্ধু দুটির কাছে আসত। সুভার সহিষ্ণুতা পরিপূর্ণ শান্ত দৃষ্টিপাত থেকে তারা এই বালিকার মর্মবেদনা উপলদ্ধি করে তার বাহুতে শিং ঘষে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করত। কলকাতা যাওয়ার পূর্ব দিনে সে তার এই দুটি বাল্যসখীদের কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিল।

এরা ছাড়াও ছাগল এবং বিড়ালশাবকের সঙ্গেও সুভার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তারা সুভার প্রতি যথেষ্ট আনুগত্য প্রকাশ করত। বিড়ালশিশুটি দিন ও রাত্রে যখন তখন সুভার গরম কোলে এসে ঘুমােত এবং সুভা তার ঘাড় ও পিঠে নরম আঙুল বুলিয়ে তার সুখনিদ্রায় সাহায্য করত। 

১৫) শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মনের অবস্থা কেমন ছিল ? তার মনের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ কী ? 

উঃ গল্পকার ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘সুভা’ গল্পের উদ্ধৃত প্রশ্নাংশে শুক্লাপক্ষের দ্বাদশ রাত্রিতে সুভা অত্যন্ত বিষন্ন ছিল। 

সুভা জানত বিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে। তার প্রিয় গ্রাম, অতি প্রিয় মূক পশুদ্বয় এবং প্রতাপকে ছেড়ে সে অন্য প্রকৃতি ও অপরিচিত মানুষদের মধ্যে থাকতে পারবে । শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে চিরদিনের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার শঙ্কায়, বিরহব্যথাতুর সুভা শয়নগৃহ থেকে বেরিয়ে তার চিরপরিচিত নদীতটে ঘাসের বিছানায় লুটিয়ে পড়েছিল। যেন সে এই ধরণিকে দু-বাহু দিয়ে তাকে ধরে রাখার জন্য কাতর মিনতি জানাচ্ছে। আসলে এখানে সে দুঃখকষ্ট পেলেও তার পিতার স্নেহ, দুই মূক গাভির অন্তরঙ্গ বন্ধুর ন্যায় আচরণ, প্রতাপের সান্নিধ্য তার সমস্ত দুঃখকে প্রশমিত করে দেয়। কিন্তু এই ভাষাহীন বােবা মেয়েটিকে বাইরের কেউ বুঝবে না বা বুঝতে চাইবে না। তার আবাল্যপরিচিত নদী, নদীতটের সেই তেঁতুলতলা এবং প্রিয় মানুষদের ছেড়ে চলে যাওয়ার দুঃখে সে তাই ব্যথিত ও তার হৃদয় ভারাক্রান্ত ছিল ছিল।

১৬) গল্পের একেবারে শেষ বাক্যটি গল্পের ক্ষেত্রে কতখানি প্রয়ােজন আলােচনা করাে। 

উঃ ছােটোগল্পকার ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ রচিত ‘সুভা’ গল্পের শেষ বাক্যটি ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। বহু নারীকে সামাজিক বিধিনিষেধ ও কুসংস্কারের বলি হতে হয়। আজও নির্দয় পিতামাতার উদাসীনতা, নির্বুদ্ধিতা বহু মেয়ের জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে আসে। পাঠ্য গল্পে সুভার পিতা বাণীকণ্ঠ তার মেয়েকে উপযােগী পাত্রের হাতে সমর্পণ করেনি। ফলত, বােবা মেয়ের জীবনটি দুঃখপূর্ণ হয়ে চূড়ান্ত অসহায়তার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। গল্পের শেষ বাক্যটিতে বলা হয়েছে- “এবার তাহার স্বামী চক্ষু এবং কর্ণেন্দ্রিয়ের দ্বারা পরীক্ষা করিয়া এক ভাষাবিশিষ্ট কন্যা বিবাহ করিয়া আনিল”। এর ফলে সুভার চিরনীরব হৃদয়ের মধ্যে অসীম অব্যক্ত ক্রন্দনধারা অবিরাম মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত বয়ে চলবে।

‘সুভা’ গল্পের এই শেষ বাক্যটি মূক, বােবা মেয়ে সুভার অন্তর্বেদনা, দুঃখ এবং ভাগ্যবিপর্যয়কে অনেক বেশি বাস্তবসম্মত করে তুলেছে, যা আমাদের হৃদয়ে সুভার জন্য বেদনার সঞ্চার করে। আবার, ছােটোগল্পের একটি বৈশিষ্ট্য হল ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’ অর্থাৎ গল্পের সমাপ্তি ঘটলেও, সেখান থেকে আগামী ঘটনার একটি কল্পিত অনুরণন পাঠকের মনে চলতে থাকবে।

আলোচনার পরিশেষে তাই বলা যায়, গল্পের শেষােক্ত বাক্যটি প্রাসঙ্গিক এবং কাহিনির বাস্তবায়নে অনেক বেশি প্রয়ােজনীয় ও ব্যঞ্জনাময় হয়েছে। 

১৭) মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে আরও দু-একটি গল্পের নাম লেখাে এবং ‘সুভা’ গল্পটির সঙ্গে তুলনা করাে।

উঃ মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে লিখিত দুটি গল্প হল কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘মহেশ’ ও প্রভাতকুমার মুখােপাধ্যায় রচিত ‘আদরিণী’

‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’-এর ‘মহেশ’ এক অনন্য সৃষ্টি। ‘মহেশ’ গল্পে গফুর এক দরিদ্র মুসলমান কৃষক। সে তার পােষ্য মহেশের খাদ্যসংগ্রহের জন্য নিজের ঘরের থালাবাসন পর্যন্ত দোকানে জমা রাখে । তার গৃহে চালের খড় খসে পড়লেও মহেশের খাদ্যের খড় সংগ্রহ করতে না-পারলে খড়ের ঘরের চালের পুরােনাে শুকনাে খড় তাকে খেতে দেয়। আবার গফুর মহেশের জন্য খাদ্যসংগ্রহের ব্যর্থতা নিয়ে যখন তাকে আদর করে বা সমস্ত কিছু জানায়, তখন মহেশ তার শিং নাড়িয়ে, চোখ বুজিয়ে গফুরের সমব্যথী হয়।

অনুরূপভাবে, আলােচ্য ‘সুভা’ গল্পেও সুভা তার মূক বন্ধু সর্বশী ও পাঙ্গুলিকে প্রতিনিয়ত তিনবার করে দেখে বা পরিচর্যা করে আসত।সে গােয়ালে ঢুকে সর্বশীর গ্রীবা বেষ্টন করে তার কানের কাছে নিজের গাল ঘর্ষণ করত। সুভার পদশব্দ, তার আদর বা ভৎসনা সবটাই তাদের পরিচিত ছিল। যেদিন সুভা তার বাড়িতে কঠিন কথা শুনত, সেদিন অসময়ে সে এই মূক বন্ধু দুটির কাছে আসত। তারা সুভার বাহুতে শিং ঘষে নির্বাক ব্যাকুলতার সঙ্গে তার মর্মবেদনা, তার দুঃখের সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করত।

সুতরাং, ‘মহেশ’ গল্পে মহেশের সঙ্গে গফুরের যে হৃদ্যতার সম্পর্ক, সেইরকম সম্পর্কই আলােচ্য গল্পে সুভার সঙ্গে সর্বশী ও পাগুলির মধ্যে দৃষ্ট হয়।

অষ্টম শ্রেণি বাংলা অধ্যায়ভিত্তিক MCQ প্রশ্নের MOCK TEST প্রদান করতে নিম্নের লিঙ্কটি অনুসরণ করতে হবে

click here

 অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কঃ

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

শিক্ষালয় ওয়েবসাইটের সকল প্রকার নোট, সাজেশন, প্রশ্নপত্র ও মক টেষ্টের সুবিধা গ্রহণ করতে নিম্নের ছবিতে ক্লিক/টাচ করে বিষদ তথ্য জেনে নাওঃ 

paid courses

You cannot copy content of this page

Need Help?